• facebook
  • twitter
Wednesday, 16 April, 2025

আমার বোহেমিয়ান জীবনকে ছেলে সহজ ডিসিপ্লিনড করেছে: প্রিয়াঙ্কা

আজ ১১ এপ্রিল। হইচইতে মুক্তি পাচ্ছে অদিতি রায় পরিচালিত ওয়েব সিরিজ লজ্জা ২। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। জীবনকে কীভাবে দেখেছেন তাই নিয়েই অকপট আড্ডা দিলেন আমাদের প্রতিনিধি দেবযানী লাহা ঘোষের সঙ্গে।

প্রশ্ন: বাংলা নতুন বছর, তার প্রাক্কালেই বাংলা নতুন সিরিজ। তোমার লজ্জা ওয়ান মানুষের মনে গেঁথে আছে। এবার লজ্জা ২। নারীদের গল্প। হার না মানার গল্প। তুমি কীভাবে দেখেছো এই বিষয়টাকে।

প্রিয়াঙ্কা: আমি যখন প্রথম লজ্জা ১-এর গল্প শুনেছিলাম, আমাকে খুব টাচ করেছিল। বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল আত্মস্থ হতে। আমি সম্রাজ্ঞী, অদিতিদিকে বলেওছিলাম যে, আমাকে এই চরিত্রের জন্য ভাবায় আমি কৃতজ্ঞ। কারণ সমাজে মেয়েরা এই সমস্ত ভার্বালি অ্যাবিউজ হয়েই থাকে। কমন হয়ে গেছে। কেউ কথাই বলে না। বিষয়গুলো যেন জলভাত। তাই আমি বলেছিলাম, আম থ্যাঙ্কফুল। কারণ কোথাও গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমি কোথাও গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ঠিক এই কথাগুলোই বলতে চাই।

লজ্জা সিজন ওয়ানে আমরা দেখিয়েছি, জয়ার সুখী সংসার, স্বামী, সন্তান নিয়ে। কিন্তু সে খুশি নয়। কেন? যারা এই অ্যাবিউজের শিকার, তারা জানে, ব্যাপার কতটা টাফ। কতটা লড়াই লাগে ভিতর ভিতর, কতটা সমস্যা হয়, বিষয়টাকে আইডেন্টিফাই করতে। এটা একটা প্রসেস। একটা চলমান প্রসেস। তো জয়া সেখান থেকে সাহায্য চাইতে সাইকোলজিস্টের কাছে যায়। লজ্জা ২ এর গল্প এখান থেকেই শুরু হচ্ছে।

আসলে এখনও আমাদের সমাজ মনের রোগের দাম দেয় না। মেন্টাল হেলথ নিয়ে এখনও যে ট্যাবু সমাজের, তা আমাদের সমাজেরই ব্যর্থতা। সিজন ওয়ানে কিছু প্রশ্ন ছেড়ে গিয়েছিলাম। যেমন, শরীরের ক্ষত দেখা যায়, কিন্তু মনেরটা? সিজন টুতে সেই নিয়েই গল্প এগোবে। এছাড়াও সমাজের কোনও জিনিসকে লেভেল দেওয়ার যে টেন্ডেন্সি রয়েছে সেই বিষয়টাও রয়েছে। সিজন ওয়ানে, একটা পরিবারের মধ্যের বিষয়টাকে দেখানো হয়েছে, লজ্জা সিজন ২-তে, সেটাই সমাজে মানে, একটু বৃহৎ পরিসরে মানুষ কিভাবে ফেস করছে, সেটাই দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি, এবারও মানুষ বিষয়টাকে চিহ্নিত করতে পারবে। কারণ, তাদেরই কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন: চিরদিনই তুমি যে আমার থেকে লজ্জা ২। অভিনেত্রী হিসেবে একটা বিরাট পথ পাড়ি। ওঠাপড়া সবার জীবনেই আছে। তোমার জীবনেও আছে। তবে একটা সন্তান বাবা মাকে এক করে, এক ফ্রেম পূর্ণ করে, এটা হয়তো তুমি তোমার জীবন দিয়ে দেখেছো। এটা নিয়ে কী বলবে।

প্রিয়াঙ্কা: আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, এত বছরের কেরিয়ারে, চরিত্র, মানুষ, আমাকে টাচ করেছে। মানুষ হিসেবে আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। শিখেছি। জেনেছি। আসলে প্রতিটা সময়ে নিজেকে চেঞ্জ করা আমি শিখেছি। আমি আজ যেমন আছি, কাল থাকতে পারব না। আমাকে কিছু না কিছু শিখতেই হবে। নইলে আমি মানুষ হিসেবে ব্যর্থ হব।

প্রশ্ন: সহজ কতটা সহজ করল তোমাদের জীবনকে?

প্রিয়াঙ্কা: (হাসি) আই লাভ বিইং আ মাদার। সহজ আসার আগে আমার জীবন খুব সাজানো গোছানো ছিল না। নানান ফেস গেছে। সহজ আমাকে ডিসিপ্লিন হতে শিখিয়েছে। সহজের জন্যই আমি ভালো আছি।

আর যে ওঠা পড়ার কথাটা বললে, আমি মনে করি কাজের ক্ষেত্রে হোক না ব্যক্তিগত জীবনে, আমি মনে করি, রাদার আমি এটা ভাবতে পছন্দ করি যে, এই ওঠা পড়াটা না থাকলে জীবন খুব বোরিং, খুব ফ্যাকাসে লাগত।

তবে এটা একেবারেই বলব না, যেখানে লজ্জার মত প্রজেক্টের কথা বলতে গিয়ে বলছি, টক্সিসিটিকে আইডেন্টিফাই করুন। বেরিয়ে আসুন। সেখান থেকে কোনওভাবেই একটা টক্সিক রিলেশনশিপে যাওয়ার কথা বলব না। তবে অপর মানুষটাও যদি লেসন নিয়ে এগিয়ে আসে। তো ওকে। আসলে সমস্তটাই মিউচুয়াল রেসপেক্ট। আমরা (রাহুল-প্রিয়াঙ্কা) যখন একসঙ্গে ছিলাম না তখনও আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম। কাজের ক্ষেত্রে দুজন দুজনকে সম্মান করতাম। এখনও সেই এক কারণেই আমাদের সম্পর্কটা রয়েছে।

প্রশ্ন: সহজ বই লিখেছে। প্রিয়াঙ্কা অভিনেত্রী হতে পারে। তবে প্রিয়াঙ্কা কিন্তু রাইটারের মা।

প্রিয়াঙ্কা: (হাসি) অলরেডি আই অ্যাম দ্যাট। আসলে বাবা-মা হিসেবে এটা খুবই আনন্দের। আমি যেটাকে অ্যাপ্রিসিয়েট করছি যে, ও কোনও একটা কিছু শুরু করে সেটাকে শেষ করেছে। (হাসি) আমরা বাবা-মা হিসেবে ওকে সাপোর্ট করি সব বিষয়ে। এখন দেখা যাক।

প্রশ্ন: অনেক দিন অনেক ধরনের কাজ করেছো। তবে ‘লজ্জা’তে কোথাও মনে হয়নি তুমি অভিনয় করছো। মনে হয়েছে তোমার নিজের গল্পই।

প্রিয়াঙ্কা: সব প্রজেক্টেই এই চেষ্টা থাকে আমাদের। এই গল্পটা আমাদের কাছের। নিজের।

প্রশ্ন: পরিচালক অদিতি রায়, সম্রাজ্ঞীর লেখা আর তোমার অভিনয়। তোমাদের ট্রায়োর অসাধারণ কাজ ‘লজ্জা’ আর ‘লজ্জা ২’।

প্রিয়াঙ্কা: যখনই কোনো কাজ পাই, নিজের একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে এক্ষেত্রে টিম ওয়ার্ক অসাধারণ হয়েছে। সম্রাজ্ঞীর রিসার্চ পেপারের কাজ। ও অসাধারণ একটা মানুষ। লজ্জা সিজন ১-এর আগেও ও অনেকবার দেখা করেছে। অনেক ঘটনা শেয়ার করেছে, যেগুলো সিরিজে রাখা যায়নি। কিন্তু সেসব ঘটনা আমাকে চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
এবারের সিরিজেও বেশ কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছে, যা আমরা সেভাবে কখনও ভাবিইনি। মানে, একটা মেয়েকে কীভাবে একটা সাবজেক্ট হতে হয়। পাঁচটা গালাগালি যদি ভাবো, দেখবে চারটেই মেয়েদের কেন্দ্র করে। কেন? ছেলেদের গালাগালি দেওয়ার অত বেশি শব্দই নেই। কোন যুগ থেকে এই জিনিসটাই নরমাল হয়ে গেল।

প্রশ্ন: বডিশেমিংও মেয়েদের বেশি সহ্য করতে হয়।

প্রিয়াঙ্কা: একদমই তাই। তবে এখন ছেলে মেয়ে উভয়কেই বডিশেমিং-এর শিকার হতে হয়। আসলে ছোটবেলা থেকেই শোনা হয়, ছেলে বাঁকা হলেও সোনার আংটি।

আমাদের সিরিজেও এসব প্রশ্নই তোলা হয়েছে। ঠিক কোন সময় থেকে এটা নরমালাইজড হল। ভুল ধরলে মেয়েদের ধরতে হবে। শান্ত মেয়ে মানে লক্ষ্মী মেয়ে। চুপ করে থাকলেই সে ভালো। মানে প্রত্যেকটা প্রবলেমকে মেয়েদের গুণ বলে চাপিয়ে দেওয়া হল।

ভার্বাল অ্যাবিউজ ঘরে বাইরে কাজের জায়গায়, প্রতিটা মানুষকে লিঙ্গ নির্বিশেষে হতে হয়। কিন্তু সমাজ কোথাও যেন মেয়েদের পাল্লা ভারি রেখেছে অপমানিত হওয়ার ক্ষেত্রে।

প্রশ্ন: নারীকেন্দ্রিক যে সিরিজগুলো হচ্ছে, তাতে কিন্তু একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যে আপনারাও এমন সমস্যা হলে মুখ খুলুন।

প্রিয়াঙ্কা: একদমই তাই। সিজন ওয়ানের পর অনেক মানুষ পোস্ট করেছিলেন, মেসেজ করেছিলেন। অনেক কথা শেয়ার করেছিলেন। আমাদের কাজ সার্থক হয়েছিল। লজ্জা সিজন ২-তেও চেষ্টা এটাই থাকবে, আমাদের সিরিজ যেন মানুষকে ছুঁতে পারে।
প্রবলেম থাকলে কথা বলুন। কথা বললে প্রবলেম সলভ হয়। আসলে মেয়েদের ব্যাপার থাকে, সবাইকে ভালো রাখব, সঙ্গে নিজেকেও। কিন্তু সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে নিজেকে আর ভালো রাখা হয় না।

প্রশ্ন: লজ্জা ২ থেকে সমাজ কী শিক্ষা পায় সেটা অবশ্যই দেখার। সবশেষে নতুন সিরিজ নিয়ে দর্শকদের কী বলবে?

প্রিয়াঙ্কা: লজ্জা সিজন ওয়ানকে এত ভালোবাসা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। লজ্জা সিজন ২ ও কিন্তু আপনাদের কথাই বলবে। মহিলাদের কথা বলবে। লজ্জা ওয়ান থেকে যে সমস্ত ভাবনা চিন্তা, ফিডব্যাক আমরা পেয়েছিলাম, সেগুলো মাথায় রেখেই নতুন আরেকটি গল্প নিয়ে হাজির হব। সে গল্পও সাধারণ নারীদের গল্প। আমার আপনার গল্প। সকলকে অনুরোধ করব, সিরিজটা দেখার জন্য। একজনও যদি সমাজের এই টক্সিসিটিকে আইডেন্টিফাই করতে পারেন। যদি তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। আমরা আমাদের সিরিজের মাধ্যমে যদি কাউকে ইন্সপায়ার করতে পারি, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি। আর সকলকে আমার তরফ থেকে আবারও শুভ নববর্ষ। সকলে ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন।