বলিউডের পাঁচ ভিলেন অভিনেতা যাঁরা চলচ্চিত্রকে পূর্ণতা দিয়েছেন

বলিউডের বিভিন্ন ভিলেন (Photo: IMDb)

বলিউডের চলচ্চিত্রের কথা উঠলেই যে কয়েকটি বিষয় মাথায় আসে, তার মধ্যে প্রথমেই থাকে নায়ক-নায়িকা, সুন্দর লােকেশন, মন মাতানাে গান, মারকাটারি অ্যাকশন দৃশ্য, নায়ক-নায়িকার রােমান্স, এবং সবশেষে একটা সুন্দর সমাপ্তি।

তবে এসবের মজা ফিকে হয়ে যায়, যদি চলচ্চিত্রে কোনও ভিলেনের উপস্থিতি না থাকে। বিনা ভিলেন, নায়ক নায়িকার মিলনের মজাটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যেন খানিকটা সব পেয়েও কিছু একটা না পাওয়ার যন্ত্রণা।

তবে যখনই সিনেমার কথা ওঠে, তখনই প্রথমে আলােচনায় প্রাধান্য পান নায়ক-নায়িকারা। তাঁদের ভক্তের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তাদের নিয়ে আলােচনা, সমালােচনা, তর্ক-বিতর্কেরও শেষ নেই।


অন্যদিকে ভিলেন নিয়ে আলােচনা প্রায় হয়ই না। তাঁদের ভক্তকুল চোখে পড়ে না। অথচ তাঁদের ছাড়া নায়ক-থেকে নায়িকা, সর্বোপরি চলচিচত্রই অসম্পূর্ণ। চলচ্চিত্রে ভিলেনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন নায়কের প্রকৃত নায়কসুলভ ইমেজ পূর্ণতা পায় ভিলেনের উপস্থিতি এবং কাণ্ডকারখানায়। নায়ক-নায়িকাকে একের পর এক বিপদে ফেলে, সে নিজের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে। যার ফলে পর্দায় নায়কের মার, আবার কখনও নায়কের হাতে ভবলীলা সাঙ্গ হয়।

এতেই সব শেষ নয়। উল্টোদিকে যাঁরা পর্দার বাইরে বসে তাঁদের প্রত্যক্ষ করছেন, অর্থাৎ দর্শককুল, তাঁদের থেকে জোটে ধিক্কার, বদনাম আর অভিশাপ। অথচ নিজেকে খারাপ বানিয়ে যাঁরা নায়কের ইমেজকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে নিজের ভিলেনের ইমেজের সেরাটা তুলে ধরলেন, তাঁর ভাগ্যে জোটে ঘৃণা।

তাহলেই ভাবুন অন্যকে সেরা প্রমাণ করতে যাঁরা সিনেমার পর্দায় নিজেদেরকে খারাপ প্রতিপন্ন করছেন, তাঁদের গুরুত্ব কতােটা। 

এই প্রতিবেদনে সেই রকমই কিছু বিশিষ্ট ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীর প্রসঙ্গ তুলে ধরা হবে। যারা সুপার-ডুপার হিট চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। এবং দর্শকের ঘূণা অর্জন করে হয়েছিলেন খলনায়ক।

 

অমরিশ পুরি (Photo: IMDb)

 

অমরিশ পুরি – ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু যদি বলা হয়, বলিউডের সেরা ভিলেন কে? তাহলেই প্রথমে যার নাম সকলের মনে ভেসে উঠবে তিনি হলেন- অমরিশ পুরি। অভিনয় জীবনে চারশােরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। শুধু হিনি ভাষাতেই নয়, তামিল, তেলেগু, মালায়লাম, কন্নড়, পাঞ্জাবী, মারাঠি প্রভৃতি ভাষার ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি।

শেখর কাপুর পরিচালিত মিস্টার ইন্ডিয়া  চলচ্চিত্রে অমরিশ পুরি অভিনীত ‘মোগাম্বো’ চরিত্রটি আজও দর্শক ভুলতে পারেনি। তাঁর জবানীতে ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’ সংলাপটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া করণ অর্জুন, ঘায়েল, দামিনী, বাদশা, গদ্দার, নায়ক  প্রভৃতি সিনেমাগুলিতে তাঁর খল অভিনয় বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।

অমরিশ পুরি একজন আন্তর্জাতিক মানের অভিনেতা। হলিউডের ছবিতেও তিনি কাজ করেছেন। হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ তাঁর ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য টেম্পল অব ডুম  সিনেমায় তাঁকে প্রধান ভিলেনের চরিত্রে নিয়েছিলেন। চরিত্রটির নাম ছিল ‘মােলা রাম’।

অমরিশ পুরির অভিনয়ে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। এবং পরে সে কথা মুক্তকণ্ঠে স্বীকারও করেন। ২০০৫ সালের ১২ জানুয়ারি এই অভিনেতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

আমজাদ খান (Photo: IMDb)

 

আমজাদ খান – গব্বর সিং। রমেশ সিপ্পির সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র শােলে-র গব্বরের কথা কি কেউ ভুলতে পারে। আজও গব্বর সিং ভয়ের এক প্রতিমূর্তি হয়ে রয়েছেন।

এই চরিত্রটি আমজাদ খানের অভিনয় জীবনের একটি মাইলস্টোন বলা যায়। এই চরিত্রে প্রথমে রমেশ সিপ্পি ড্যানিকে নির্বাচন করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে এই চরিত্রে আমজাদ খান সুযােগ পান।

আমজাদের দুধর্য অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেতা তালিকায় ফিল্মফেয়ার মনােনয়ন পান। এই সিনেমায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তিনি ‘চ্যাম্বাল ডেকোয়েটস’ নামের একটি বই পড়ে ফেলেন। যার লেখক ছিলেন তরুণ কুমার ভাদুড়ি।

শােলে সিনেমায় তাঁর বলা বেশ কয়েকটি সংলাপ আজও লােকের মুখে মুখে ফেরে। এবং শুধু তাই নয়, এই সংলাপগুলি আজও মজার ছলে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে যেমন রয়েছে– ‘কিতনে আদমি থে’, ‘ইয়ে হাত হামকো দে দে ঠাকুর’ এবং ইহা সে পাচাস পাচাস কোস দূর গাও মে জব কোই বাচ্চা রাত কো রােতা হ্যায় তাে মা ক্যাহতি হ্যায় বেটা সো
যা, সো যা নেহি তাে গাব্বার আ যায়েগা’।

আমজাদ খান অভিনীত অন্যান্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- খুন পাসিনা, পারবরিস, মুক্কাদ্দর কা সিকান্দার, সুহাগ, কালিয়া, লাওয়ারিশ  প্রভৃতি। আমজাদ আলি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে বেশি অভিনয় করেছেন। মাত্র ৫১ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

 

ড্যানি ডেনজংপা (Photo: IMDb)

 

ড্যানি ডেনজংপা – বলিউডের আর এক প্রখ্যাত ভিলেন চরিত্রাভিনেতা ড্যানি ডেনজংপা। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘অগ্নিপথ‘ (১৯৯০) সিনেমার খলচরিত্র কাঞ্চা চিন্না তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা কাজ। অগ্নিপথ  ছাড়াও হাম, ক্রান্তিবীর, বিজয়পথ, বরসাত, ঘাতক প্রভৃতি চলচ্চিত্রেও তিনি ভিলেনের অভিনয় করেছেন।

ড্যানিও ভারত ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। সেভেন ইয়ারস ইন তিব্বত  সিনেমায় তিনি বিখ্যাত অভিনেতা ব্রাড পিটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। সাম্প্রতিককালে রােবট, বস, ব্যাং ব্যাং, জয় হাে, প্রভৃতি চলচ্চিত্রে ভিলেনের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।

 

প্রেম চোপড়া (Photo: IMDb)

 

প্রেম চোপড়া – বলিউডের আর এক প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা প্রাণ যখন খলনায়কের অভিনয় থেকে সরে পর্দায় ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন তখন তাঁর জায়গায় পূরণ করতে আসরে নামেন আর এক বিশিষ্ট খলনায়ক প্রেম চোপড়া। এবং শুধু ভিলেনের চরিত্রে অভিনয়ই নয়, নিজের জায়গাটাও শক্তপােক্ত করে নেন।

তিসরি মঞ্জিল, ও কৌন থি, দো রাস্তে, কাটি পতঙ্গ  প্রভৃতি সিনেমায় তিনি নিজের অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ দেন। তিনি এমন একজন খলনায়ক যিনি কয়েক যুগ ধরে বিভিন্ন নায়কদের পর্দায় বারবার বিপদে ফেলেছেন। সেইসব নায়কদের মধ্যে যেমন রয়েছেন মনােজ কুমার, রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্র তেমনই রয়েছেন সানি দেওল, সলমন খান, অক্ষয়কুমার, শাহরুখ খান, গােবিন্দা, অজয় দেবগন প্রমুখ। এখনও তিনি সমান দক্ষতায় অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

গুলশন গ্রোভর (Photo: IMDb)

 

গুলশন গ্রোভর – বলিউডের ব্যাড ম্যান। এই দুটো শব্দই বলিউডে তাঁর পরিচয় দেবার জন্য যথেষ্ট। এই নামে তাঁকে একডাকে সবাই চেনে। গুলশন গ্রোভরই প্রথম বলিউড অভিনেতা যিনি হলিউডে গিয়েও নিজের কৃতিত্বের সাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন।

গুলশন গ্রোভর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে রয়েছে- রাম লক্ষণ, আঁখে, বিশ্বাত্মা, রাজাবাবু, বিজয়পথ, হেরা ফেরি  প্রভৃতি। ২০০১ সালে তিনি বিবিসি অ্যাওয়ার্ড পান। ভারতের সবথেকে বড় অ্যাকশন সিনেমা সিরিজ খিলাড়ি ‘র ৮টি সিনেমার মধ্যে পাঁচটিতেই তিনি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এখনও পর্যন্ত তিনি প্রায় চারশােরও বেশি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।

উল্লেখিত এই পাঁচজন অভিনেতা ছাড়া বলিউডে বিভিন্ন সময়ে বহু দাপুটে অভিনেতা খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন- প্রাণ, জীবন, কুলভূষণ খারবান্দা, ওম পুরি, কাদের খান, অজিত, নানা পাটেকর, অনুপম খের, পরেশ রাওয়াল, মুকেশ ঋষি প্রমুখ।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে খলচরিত্র শুধু যে খলনায়করাই অভিনয় করছেন তাই নয়, নায়কদেরও এইসব চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। যেমন- শাহরুখ খান (ডর), সঞ্জয় দত্ত (অগ্নিপথ, ২০১২), অক্ষয়কুমার (আজনবি), জন আব্রাহাম (ধুম) হৃত্বিক রােশন (ধুম ২), আমির খান (ধুম ৩) প্রভৃতি।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বলিউডের এই খলচরিত্রের সংজ্ঞা ও রূপ দুটোই পরিবর্তিত হচ্ছে। তবুও বর্তমানে প্রকাশরাজ, বােমান ইরানি এবং আরও বহু নতুন নতুন অভিনেতা এই চরিত্রে অভিনয় করতে এগিয়ে আসছে এবং যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করছেন।