• facebook
  • twitter
Friday, 20 September, 2024

যৌন নিগ্রহের অভিযোগে অরিন্দম শীল সাসপেন্ড হতেই একাধিক টলিউড অভিনেত্রীর বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া

দাদার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন খুড়তুতো বোন দেবলীনাও

চলচিত্র জগতের সেলিব্রিটি ভাবমূর্তি যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। একের পর যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠছে চিত্র পরিচালকদের বিরুদ্ধে। কয়েকদিন আগেই মালয়ালম সিনেমার চিত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করেছিলেন টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। এবার সেই একই যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠল টলিউডের অভিনেতা ও চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে। তাঁকে সাসপেন্ড করে দিল ডিরেক্টরস গিল্ড। এই ঘটনার পর টলিউডের একাধিক অভিনেত্রী এবিষয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে টলিউডের এই চিত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন এক অভিনেত্রী। সেই ঘটনার পর তাঁকে আপাতত অস্থায়ী সময়ের জন্য অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিরেক্টরস গিল্ড। জানানো হয়েছে, কয়েকদিন ধরেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করে ডিরেক্টরস গিল্ড কর্তৃপক্ষ। সেজন্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে অপসারিতই থাকতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত পরিচালক অরিন্দম শীল তাঁর জবাবে জানিয়েছেন,’আমাকে বলা হয়েছে শ্যুট বোঝাতে গিয়ে আমি হেনস্থা করেছি। ডিওপি থেকে শুরু করে ফ্লোরে সবাই ছিল। শুক্রবার মহিলা কমিশনে আমি সবটা বলেছি। এটাও জানিয়েছি, আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকে, তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। গিল্ড আমার কথা শোনার কোনও প্রয়োজন মনে করেনি। একতরফা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে এই বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন টলিউডের একাধিক অভিনেত্রী। এদিন অরিন্দম শীলের সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনায় রূপাঞ্জনা মিত্র বলেন,’চার বছর আগে আমি ঠিক ছিলাম, গত রাতে সেটা প্রমাণিত। মনের জোর বেড়ে গিয়েছে। দরকার পড়লে আবারও লড়াইয়ে নামব।’

উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০২০ সালে অরিন্দমের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ করেছিলেন বাংলা টিভি ধারাবাহিকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র। একটি ছবিতে অভিনয় করার জন্য অরিন্দমের বাইপাসের ধারের অফিসে যান তিনি। সেখানে স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনানোর সময় তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন রূপাঞ্জনা। এমনকি তাঁকে ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গন করে কদর্য ইঙ্গিত দেন বলে অভিযোগ করেন। সেসময় তাঁকে সমাজ মাধ্যমে অনেক সমালোচনা ও কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল। এমনকি কাজের পরিমাণও তুলনায় অনেক কমে গিয়েছিল। এরপর সিঙ্গল মাদার হিসেবে অনেক চড়াই উতরাই অতিক্রম করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু হার মানেননি। সেই লড়াই থেকে বেরিয়ে এসেছেন রূপাঞ্জনা। এখন তাঁর জীবন সংগ্রামে লড়াইয়ের সঙ্গী রয়েছেন স্বামী রাতুল মুখোপাধ্যায়।

এদিকে শনিবার রাতে ডিরেক্টরস গিল্ডের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে অভিনেত্রী সঙ্ঘশ্রী সিংহ মিত্র তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন,’অরিন্দম শীল যেদিন প্রথম মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া শুরু করেছিলেন, সেদিন কেন কেউ বিষয়টির প্রতিবাদ জানান নি? সেদিন যাঁর গায়ে হাত দিয়েছিলেন, তখন তাঁর সায় ছিল। সেজন্য তিনি চুপ ছিলেন। ফলে ক্রমশঃ সাহস বেড়েছে অভিযুক্তের। সাড়া না দেওয়ার কারণে অনেক প্রতিভা কাজ পান না। আর যখনই তাঁর স্বার্থে ঘা লাগে, তখনই তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। এটা কি কাম্য?’

অভিনেত্রী সঙ্ঘশ্রী সিংহ মিত্র আরও প্রশ্ন করেন,’ইন্ডাস্ট্রি’তে অরিন্দম শীল কিন্তু একা নন, এরকম আরও অনেক অরিন্দম শীল আছেন, তাঁরা শাস্তি পাবেন তো? তাঁর দাবি, ইন্ডাস্ট্রিতে শুধুমাত্র প্রযোজক, পরিচালক নন। এরকম আরও অনেক অভিনেতা, কলাকুশলী আছেন, যাঁরা এই ধরণের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদেরকেও প্রকাশ্যে আনা হোক।’

এদিকে অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী বলেন,’এটা একটা সিস্টেম হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির দিকে আঙ্গুল তুলে লাভ নেই। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীকে এরকম হেনস্থা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এজন্য সম্মিলিতভাবেই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের একটি প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।’

অন্যদিকে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত সম্পর্কে অরিন্দম শীলের খুড়তুতো বোন। তিনি অরিন্দমের সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনার পর মুখ খুলেছেন। সমাজ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। দেবলীনা লিখেছেন,’সময় সব বলে দেয়। সময়কে কখনওই চুপ করিয়ে রাখা যায় না। আমি এতদিন এ বিষয়ে কিচ্ছু বলিনি। আসলে মানুষটা তো সম্পর্কে আমার দাদা! আমার কাছে সম্মানের ছিলেন। কিন্তু, তিনি সম্মান হারিয়েছেন। রাগের থেকেও বেশি দুঃখ হচ্ছে। আমি ও মা, দু’জনেই খুব আহত। সহকর্মীদের থেকে অরিন্দমদার নামে বহু অভিযোগ শুনেছি। গত বেশ কয়েক বছর ধরে শুনে এসেছি। তার মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ আমি ব্যক্তিগতভাবে শুনেছি। সেগুলো প্রকাশ্যেই আসেনি। ‘

রাজ্যের একাধিক বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমে বিতর্কের শীর্ষে থাকা অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম শ্রীলেখা মিত্র বিষয়টি নিয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। রাজ্যের একটি প্রথম শ্রেণীর সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন,’অরিন্দম শীলের পরিচালনায় আমি একটাই ছবি করেছিলাম — “স্বাদে আহ্লাদে”। তারপরে কিন্তু তিনি আমাকে আর কোনও কাজে নেননি। আমার যদিও ওঁর সঙ্গে এমন কোনও অভিজ্ঞতা নেই। আসলে অরিন্দমের পরিচালনায় যে অভিনেত্রীরা বেশি কাজ করেছেন, তাঁরা আরও ভাল বলতে পারবেন। নিন্দুকেরা তো বলেই থাকেন, অরিন্দমের সঙ্গে কয়েকজন অভিনেত্রীর সম্পর্কও ছিল।’

তিনি বলেন, অনেকেই অরিন্দমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তবে অনেকে কাজ পাওয়ার জন্য সুযোগ নিয়ে থাকেন। শ্রীলেখা একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘সব সময় কিন্তু শুধু পুরুষরা দোষী নন। অনেক সময় কিন্তু মেয়েরা নিজেরাই আগ্রহী থাকেন।’

এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টির প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি বলেন,’পাপের ঘড়া উল্টোয়। ভেবেছিলাম এই জনমে সত্যিটা দেখে যেতে পারব না। কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছর লাগল।’ স্বস্তিকার এই মন্তব্য নিয়ে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেন শ্রীলেখা মিত্র। তিনি বলেন, ‘যেদিকে জল গড়ায়, তিনি সেদিকেই যান। তিনি মহান হয়ে উঠতে চান।’

উল্লেখ্য, আরজি কর কান্ড নিয়ে হেনস্থার ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য তথা দেশ। এরই মধ্যে যৌন হয়রানি নিয়ে মালয়ালম পরিচালক রঞ্জিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন শ্রীলেখা মিত্র। যা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এরপর অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীও বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে হেমা কমিটির মতো একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। এরপর একে একে দীর্ঘদিনের জমে থাকা হেনস্থার ঘটনায় মুখ খুলতে শুরু করেছেন একাধিক অভিনেত্রী। শনিবার রাতে অরিন্দমের সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সেই আগুনে যেন ঘৃতাহুতি পড়ল।