সম্প্রতি কলকাতায় দেখানো হলো সুমন ঘোষ পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘দ্য স্ক্যাভেঞ্জার অফ ড্রিমস’। ২০২৩-এর অক্টোবর মাসে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছিল বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। তারপরে মুম্বই এবং আমেরিকাতে ও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় ছবিটি। খুবই প্রশংসিত হয়। আপাতত একটি পুরষ্কারও পেয়েছে ছবিটি।
প্রথম কলকাতায় শো হল গত ২২ অক্টোবর। পরিচালকের কথায়, ‘আমরা যে ধরনের কাজ দেখে বড় হয়েছি, কলকাতার সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনেছি, এখন আর সেই ধরনের ছবি কলকাতায় হয় না । মৃণাল সেন, গৌতম ঘোষ ,ঋত্বিক ঘটক , উৎপলেন্দু চক্রবর্তী মরা যে ধরনের ছবি করতেন, আমি চেষ্টা করেছি তাঁদের ধরন কে অনুসরণ করতে। তাঁদের জীবন নিয়ে বায়োপিক নয়। তাঁদের ধারাকে বজায় রেখে তার মধ্যে দিয়েই আমি তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে চাই।’
সুমন তাঁর আঠারো বছরের চলচ্চিত্র জীবনে নানা ধরনের ছবি– বাণিজ্যিক এবং আর্টহাউস, ডকু ফিচার ইত্যাদি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। বিষয়েও বৈচিত্র ছিল বেশ। হঠাৎ জমাদারদের নিয়ে সিনেমা কেন?
এই সাব-অলটার্নদের নিয়ে এখন আর তেমন কোন ছবি হয় না। ‘এই বিষয়টি নিয়ে ভেবেছি এবং তিন বছর ধরে রিসার্চ করে লকডাউনের পরে এই ছবির শুটিং শুরু করে ছিলাম।’ শুধু পরিচালনাই নয়, এই ছবির প্রযোজকও সুমন ঘোষ।
‘দ্য স্ক্যাভেঞ্জার অফ ড্রিমস’ ছবিটির হিন্দি নাম ‘বিরজু’। ছবিটির ডিউরেশন এক ঘন্টা সাতাশ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই একটি সম্পূর্ণ বাস্তব দৈনন্দিন জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন পরিচালক। সকালটা সুন্দর হয় যাদের জন্য, রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকে যাদের জন্য, তাদের কথা জানার বা তাদের জীবন নিয়ে ভাবার কোনও অবকাশই আমাদের থাকে না। তাদের জীবনযাত্রাই এই ছবির মূল বিষয় বা বলা যেতে পারে তাদের জীবনযাত্রার দলিল হয়ে থাকলো এই ছবি। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী এবং শার্দুল ভরদ্বাজ। আমরা যাদের বলি সুইপার বা ঝাড়ুদার, তাদের জীবনযাত্রা, দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা, প্রেম, অভিমান সব কিছুর মধ্যে দিয়েই অদ্ভুত গতিময় জীবনের স্বাক্ষর হয়ে থাকল এই ছবি। ছবির প্রতিটি দৃশ্য ভীষণ নিপুণ হাতে বুনেছেন পরিচালক। তাই তো ময়লা আবর্জনা ভাগাড়ের মধ্যেও স্বপ্নকে সতেজ করে বাস্তবের রূপ দিয়েছেন, স্বপ্ন দেখার জাল বুনেছেন তিনি। নিজেরা ময়লা ভাগাড় পরিষ্কার করলেও মেয়েকে শিক্ষার আলোয় দীক্ষিত করতে বদ্ধপরিকর বিরজু আর তার বৌ সোনা। কোথায় যেন তাদের মধ্যে দিয়েই সমাজে মহিলাদের রূপ বদলের ছবিটা স্পষ্ট তুলে ধরেছেন পরিচালক। ঘরে বাইরে সব জায়গায় সামাল দিতে বদ্ধপরিকর তাদের মহিলারাও।
হাতে টানা ময়লার গাড়িকে বিদায় জানাতে ভয় পাওয়া স্বামীকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করেন স্ত্রী সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য। সমাজের ময়লা পরিষ্কার করলেও মনে কোনও ময়লা নেই তাদের। স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্যের খুনসুটি থেকে শুরু করে সহবাসের দৃশ্য ভীষণই জীবন্ত করে তুলেছে ছবিটিকে। স্ত্রীর চরিত্রে সুদীপ্তা চক্রবর্তীর অনবদ্য অভিনয় এই ছবির অন্যতম সম্পদ। শার্দুল ভরদ্বাজের চরিত্রটির কথা কম, কিন্ত শরীরীভাষায় অভিব্যক্তির প্রতিটি মুহূর্তকে এমন সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন যা দর্শকদের মনে থাকবে। প্রত্যেকের সাবলীল অভিনয় এ ছবিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। প্রতিদিনের জীবনে আমরা যাদের কথা ভাবি না, তাদের জীবন যাত্রার ছবি তুলে এতো সুন্দর জুড়েছেন, যা দেখে মনেই হবে না চিত্রনাট্য ছাড়া এতো সুন্দর একটি গল্প ফুটে উঠতে পারে পর্দায়।