ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয় পরিচালক রিচি মেহতার উদ্যোগে নেটফ্লিক্সে এবার বহু সমালোচিত নির্ভয়া কান্ড ‘দিল্লি ক্রাইম’ সূচনা করল নারীশক্তির এক নতুন অধ্যায় । গত শুক্রবার মুক্তি পাওয়া সাতটি এপিসোডে বিভক্ত এই সিরিজটি দিল্লি পুলিশের সাফল্যের একটি রেকর্ড।ডিসিপি বর্তিকা চতুর্বেদীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শেফালি শাহ- এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রসিকা দুগ্গল, আদিল হুসেন এবং রাজেশ তৈলাং।
২০১২ সালে দক্ষিণ দিল্লির মুনীরকা সংলগ্ন এলাকায় দুই যুবক-যুবতীকে চলন্ত বাসে চরম মারধোর এবং যুবতীকে বারংবার নৃশংসভাবে ধর্ষণের ঘটনা কারোরই অজানা নয়, তবে আন্তর্জাতিক স্তরে এই সত্য ঘটনাটি অবলম্বনে টিভি সিরিজ এই প্রথম।
ইতিপূর্বে ‘ওয়ান্স এগেইন’ ছবিটিতে শেফালি শাহ এবং আদিল হুসেন কে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গেছে। তবে ডিসিপি চরিত্রে শেফালির অভিনয় একেবারে অন্য স্বাদের। লাস্যময়ী, চিরাচরিত ভারতীয় নারীসুলভ সৌন্দর্যের অধিকারিণী শেফালি এই সিরিজে দুর্বার সাহসী,কঠিন, বাস্তববাদী এবং নেতৃত্বসুলভ সকল গুণের অধিকারিণী এক পুলিশ অফিসার যিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শৃঙ্খলগুলিকে অনায়াসে তুড়ি মেরে মধ্যরাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন কাজে- যিনি একই সঙ্গে এক মা, এক স্ত্রী এবং সর্বোপরি এক আত্মবিশ্বাসী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পুলিশ অফিসার।
সদ্য আইপিএস অফিসার নীতির চরিত্রে রসিকার অভিনয় অনবদ্য।নৈশব্দ্য এবং চোখের দৃষ্টিতে অনুভূতি ফুটিয়ে তোলায় তার জুড়ি মেলা ভার।
এছাড়া রাজেশ তৈলাঙ্গের(ভূপেন্দ্র সিং) অসাধারণ অভিনয় উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না।এক অবিবাহিত মেয়ের বাবা এই পুলিশ অফিসারটি কেবল পরিশ্রমের জোরে ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের’ প্রধান- তাঁর জীবিকা তাঁর পারিবারিক জীবনে এক অশান্তির কারণ হলেও জীবিকার প্রতি তার ভালবাসা অটুট ও অবিচল।
সিরিজটির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বৈপরীত্যের অনায়াস সহাবস্থান।দিনরাত নির্ভয়া-কান্ডের তদন্ত করার পর ভূপেন্দ্র মেয়ের জন্য কাগজে পাত্রের সন্ধান করতে বসে। বর্তিকার দিল্লির প্রতি এবং পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অগাধ ভালবাসার পাশাপাশি রয়েছে তাঁর নিজের মেয়ের অবিরাম চেষ্টা দিল্লি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে বিদেশযাত্রা।
রোমহর্ষক এই সিরিজটির প্রতিটি এপিসোডে রয়েছে টানটান উত্তেজনা। বাস্তবের এইরূপ বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভূল পরিবেশনার তারিফ না করে পারা যায় না।সিনেমাটোগ্রাফি এবং আবহ সঙ্গীতের মেলবন্ধনে এটি ফিকশন ক্রাইম থ্রিলারের পরিবর্তে এক ডক্যুমেণ্টারির স্বাদ দেয়।
ধর্ষক জয় সিং-এর চরিত্রে মৃদুল শর্মার অভিনয় অনবদ্য। পুলিশের কাছে তার ন্যক্কারজনক কর্মকান্ডের নির্বিকার অনুশোচনাহীন স্বীকারোক্তি বমন উদ্রেক করে- শিহরণ জাগানো ওই বর্ণনা নির্ভয়াকান্ডে দোষীদের মানবিকতা বোধ সম্পর্কে এক বড় প্রশ্ন তোলে।
রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক চাপ কে সহ্য করেও সমগ্র ন্যায়ের জন্য পুলিশ মহলের অক্লান্ত লড়াই তুলে ধরা হয়েছে সিরিজটিতে। পুলিশের মানবিক প্রেক্ষিতগুলিকেও কৌশলের সঙ্গে দেখানো হয়েছে প্রতিটি এপিসোডে।
সামগ্রিকভাবে এই সিরিজটি দিল্লি শহর বিষয়ক অজানা আতঙ্ককে কিছুটা হ্রাস করতে সক্ষম হলেও এটি মূলত হানাহানি এবং চরম বিশৃঙ্খলার মাঝে শাশ্বত ন্যায়ব্যবস্থা ও মানবিকতা বোধের উপর আমাদের বিশ্বাস পুনর্স্থাপন করার এক সচেষ্ট প্রয়াস।