নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন বাসু ভাগনানি

বাশু ভগনানি দ্বারা পরিচালিত পূজা এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড। প্রযোজক ভাগনানি নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেছে। বিশ্বাসের অপরাধমূলক লঙ্ঘন এবং বিতর্কিত লাইসেন্স চুক্তিতে প্রতারণার অভিযোগ। অভিযোগটি একাধিক ছবির চুক্তি লঙ্ঘন নিয়ে করা হয়েছে।

মুম্বই পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ শাখার কাছে দায়ের করা অভিযোগে ছবির স্বত্বের বৈধতা নির্ধারণের জন্য একটি প্রাথমিক পর্যায়ের তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই বিষয়ে, অর্থনৈতিক অভিযোগ বিষয়ক তদন্ত শাখা নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়াকে দুটি সমন জারি করেছে। যথাযথ নিয়মে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য কী?
দ্য স্টেটসম্যানের সঙ্গে কথা বলার সময়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র ইন্সপেক্টর রবীন্দ্র আভাদ নিশ্চিত জানান, নেটফ্লিক্সে দুটি আইনি সমন পাঠানো হয়েছে। তবে, নেটফ্লিক্স জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হয়নি।


পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করুন এবং দেখুন। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারি না।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে নেটফ্লিক্সের অফিসিয়াল অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। যদিও মিডিয়া রিপোর্টগুলি দেখে মনে হয়েছিল, নেটফ্লিক্স এই দাবিগুলিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আভাদ উল্লেখ করেছেন যে, কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জমা দেওয়া হয়নি। ‘তাঁরা তাঁদের সংস্করণ আমাদের কাছে পাঠায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আব উনকে হিসাব সে তদন্ত হোগা?’

আভাদ আরও উল্লেখ করেছেন, পূজা এন্টারটেইনমেন্ট অন্যান্য শিল্প সমকক্ষদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। যাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে একই অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদিও এই ব্যক্তিদের কেউই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেননি।

প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল?
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে দুটি পক্ষের মধ্যে একটি লাইসেন্সিং চুক্তি। যেখানে নেটফ্লিক্স পূজা এন্টারটেইনমেন্ট দ্বারা নির্মিত তিনটি চলচ্চিত্রের জন্য সাবস্ক্রিপশন-ভিডিও-অন-ডিমান্ড অধিকার অর্জন করে। ছবিগুলি হল: ‘মিশন রানিগঞ্জ: দ্য গ্রেট ভারত রেসকিউ’, ‘ বড়ে মিয়া ছোট মিয়া’, এবং ‘হিরো নং ১’।

প্রযোজক বাশু এবং জ্যাকি ভাগনানি পরিচালিত পূজা এন্টারটেইনমেন্ট বর্তমানে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে আইনি জটিলতা সেই সমস্যা আরও কিছুটা বাড়িয়ে তুলল। এ বিষয়ে ইওডব্লিউ-র তদন্তকারী কর্মকর্তা রবীন্দ্র আভাদ স্টেটসম্যানকে জানান, নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষকে সমন পাঠালেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা হাজিরা দেয়নি। তাহলে কি নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে তদন্তাকারী সংস্থা? যদিও তিনি এ বিষয়ে খোলাখুলিভাবে কিছু বলতে চাননি। তবে তিনি জানান, বিভিন্ন সূত্রে খবর, নেটফ্লিক্স এই দাবিগুলিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে তাদের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জমা পড়েনি।

এই চুক্তিতে পূজা এন্টারটেইনমেন্টকে পূর্বে ২৮১ কোটি প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যাই হোক, এই ফিল্মের জন্য উৎপাদন ও বিপণন খরচ ৬৪৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা উভয় কোম্পানির জন্যই চ্যালেঞ্জিং বিষয়।

অভিযোগ উঠেছে যে নেটফ্লিক্স প্রতিনিধিরা পূজা এন্টারটেইনমেন্টকে বিভ্রান্ত করেছে। এর ফলে ভবিষ্যতের অর্থপ্রদানের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আর্থিক বিনিয়োগ হয়েছে। ভাগনানি বিশেষভাবে রেজিনাল্ড শন থম্পসন, কিরণ দেশাই, মনিকা শেরগিল এবং নেটফ্লিক্সে ফিল্ম লাইসেন্সিং প্রধান বিভা চোপড়া সহ বেশ কয়েকটি মূল নেটফ্লিক্স নির্বাহীদের দিকে আঙুল তুলেছেন। সব মিলিয়ে নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে ভাগনানির অভিযোগের তালিকা অনেক বড়। যদিও তদন্তকারী সংস্থা ইওডব্লিউ-র উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলেই জানিয়েছেন ভাগনানি।

সমস্যার সূত্রপাত কীভাবে?

‘হিরো নং ১’, ‘মিশন রানিগঞ্জ,’ এবং ‘ বড়ে মিয়া ছোটে মিয়া’-এই তিনটি চলচ্চিত্রের এসভিওডি স্বত্বকে কেন্দ্র করেই যাবতীয় অভিযোগের সূত্রপাত। এখানে এসভিওডি-র অর্থ সাবস্ক্রিপশন ভিডিয়ো অন ডিমান্ড। এটি মূলত একটি ব্যবসায়িক মডেল। এই মডেল অনুযায়ী, স্ট্রিমিং পরিষেবার বিষয়বস্তুর লাইব্রেরি অ্যাক্সেস করার জন্য ভোক্তাকে একটি মূল্য দিতে হয়। প্রযোজক ভাগনানির অভিযোগ, নেটফ্লিক্সকে এই তিনটি চলচ্চিত্রের স্বত্ব প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু ভাগনানিকে তাঁর প্রাপ্য ৪৭.৩৭ কোটি টাকা দেয়নি স্ট্রিমিং জায়েন্ট নেটফ্লিক্স। এখানেই শেষ নয়, ভাগনানির আরও অভিযোগ, তাঁর সংস্থা অর্থাৎ পূজা এন্টারটেইনমেন্টকে চুক্তির শর্তাদিও পুনর্বিবেচনার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগেই অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায় একটি চলচ্চিত্র।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ‘গণপথ’ এবং ‘মিশন রানিগঞ্জ’-এর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির সময় উত্তেজনা বেড়ে যায়। পূজা এন্টারটেইনমেন্ট অভিযোগ করে যে, ফিল্মগুলির বক্স অফিসের দুর্বল পারফরম্যান্সের পরে, নেটফ্লিক্স লাইসেন্স ফি নিয়ে পুনরায় আলোচনা করার চেষ্টা করেছিল, এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা পূজা এন্টারটেইনমেন্ট-এর চুক্তি অনুযায়ী, এই অভিযোগ যুক্তিযুক্ত নয়। যখন পূজা এন্টারটেইনমেন্ট এই পুনঃআলোচনা প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে, তখন তাঁরা নেটফ্লিক্স লাইসেন্সিং চুক্তিটি সম্পূর্ণ বাতিল করার দাবি জানায়।

ভগনানি তার অভিযোগে দাবি করেছেন যে, নেটফ্লিক্স তার আর্থিক বাধ্যবাধকতার প্রতিশ্রুতি ছাড়াই তার প্ল্যাটফর্মে চলচ্চিত্রগুলিকে সম্প্রচারিত করছে। তখন ভগনানি চুক্তির অধীনে তিনি ৪৭ কোটির বকেয়া অর্থ দাবি করেন।  অর্থনৈতিক দুর্নীতি তদন্ত শাখার সঙ্গে নেটফ্লিক্স-এর সহযোগিতার অভাব হিসাবে যা বর্ণনা করা হয়েছে, তা হল এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সংস্থার প্রধান ব্যবস্থাপকরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করা হয়। এখন থেকেই সমস্যার সূত্রপাত ঘটে।