সম্প্রতি ষষ্ঠ হায়দ্রাবাদ বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবে তিনদিন (১৯ থেকে ২১ জুন) ধরে হায়দ্রাবাদ প্রসাদ ফিল্ম ল্যাব-এ প্রদর্শিত হল একগুচ্ছ বাংলা চলচ্চিত্র।
উৎসবে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলি আবার প্রমাণ করল যে, চলচ্চিত্রের সাফল্যের পিছনে চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুর প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
এই উৎসবে মােট সাতটি চলচ্চিত্র দেখানাে হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে যে যে চলচ্চিত্রগুলি রয়েছে সেগুলি সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।
নগরকীর্তন – প্রথমেই নাম করতে হয় নগরকীর্তনের। কৌশিক গাঙ্গুলি পরিচালিত, ঋদ্ধি সেন ও ঋত্বিক চক্রবর্তী অভিনীত নগরকীর্তন এই সারিতে প্রথমেই ছিল। এই ছবিটি চার-চারটি জাতীয় পুরস্কার তার ঝুলিতে ইতিমধ্যেই নিয়ে নিয়েছে। এই চলচ্চিত্রের হাত ধরে ঋদ্ধি সেন ২০১৮-র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেতার। সম্মান অর্জন করেছেন। এক কথায় এটি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয় বললে কিছু ভুল বলা হবে না। অন্যদিকে ঋত্বিক চক্রবর্তীর অভিনয়ও প্রশংসনীয়। প্রথাগত প্রেম ও ভালবাসার বাইরে দুটি পুরুষের ভালবাসাকে স্বীকৃতি দেওয়া, বাংলা সিনেমায় এর আগে দেখা যায়নি। প্রথমদিকে কিছু আইনি জটিলতা থাকলেও তা ছবিটির সাফল্যকে আটকাতে পারেনি।
আহারে মন – প্রীতম ডি গুপ্তা পরিচালিত আহারে মন চলচ্চিত্রটি দেখলেই আপনি এক অদ্ভুত সুখানুভূতি অনুভব করবেন নিশ্চয়। ছবিটিতে কোনও গুরুগম্ভীর বার্তা নেই, আবার নেই কোনও হ্যাপি এন্ডিং। তা সত্ত্বেও ছবিটি আপনার ভাল লাগবেই। ছবিটি আমাদের সমাজের লুকিয়ে থাকা কিছু সামাজিক নিয়মরীতির জীবন বাস্তবতার কথা বলে। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনেতা অভিনেত্রীদের অসাধারণ অভিনয় এই ছবির সম্পদ।
আহা রে – রঞ্জন ঘােষ পরিচালিত আহা রে-তে দেখানাে হয়েছে একজন বাংলাদেশি মুসলিম যুবক এবং একজন মধ্যবিত্ত হিন্দু বাঙালি নারীর পারস্পরিক সম্পর্ককে। এছাড়াও এই সম্পর্কের মাধ্যম হয়েছে খাবার, এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বিভিন্ন পদ। দুই বাংলার খাবারই এই দুই যুবক-যুবতির প্রেমকে পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধান চরিত্রে আফরিন শুভ এবং ঋতপর্ণা সেনগুপ্ত।
উড়ােজাহাজ – বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পরিচালিত উড়ােজাহাজ-এ ফুটে উঠেছে এক অদ্ভুত কাল্পনিক ভাবনা। এক গ্যারেজ মেকানিক বাচ্চু মণ্ডল দিনের বেশিরভাগ সময় জুড়ে স্বপ্ন দেখে এড়ােপ্লেন চালানাের। হঠাৎ করেই সে শহরের বাইরে এক জঙ্গলে আবিষ্কার করে একটি ভেঙে পড়া বিমান। যেটি নাকি ব্যবহার হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। সে ভাবতে থাকে সেটি চালানাের। বাচ্চু মণ্ডলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চন্দন রায় সান্যাল।
তারিখ – চূর্ণী গাঙ্গুলি পরিচালিত তারিখ-এ একাকিত্ব, সম্পর্ক, বিচার-বিবেচনা প্রভৃতি বিষয়ের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটি বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন, ঋত্বিক চক্রবর্তী প্রমুখ। তারিখ-এ বলা হয়েছে যে, স্যোশাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার প্রসঙ্গেও আরও বেশি দায়িত্ববান হওয়ার কথা বলে তারিখ। যদিও ট্রোলিং এই মুহূর্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চলচ্চিত্রটি চেষ্টা করেছে স্যোশাল মিডিয়ার দ্বারা বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক প্রভাব ছড়িয়ে পড়া এবং তার গুরুত্বের উপর আলােকপাত করার ক্ষেত্রে।
এছাড়াও প্রদর্শিত হয় অর্পিতা চ্যাটার্জি, আদিল হুসেন, অনুভব কাঞ্জিলাল, অনির্বাণ ঘােষ অভিনীত এবং অর্জুন দত্ত পরিচালিত অব্যক্ত। ছবিটিতে মা এবং ছেলের পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপােড়েনের ছবি ফুটে উঠেছে।
পাশাপাশি আরও একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় এই চলচ্চিত্র উৎসবে। সেটি হল ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত পরিচালিত কেদারা। বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কৌশিক গাঙ্গুলি, রুদ্রনীল ঘােষ প্রমুখ।