• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

বাণীর ফিল্ম ফেয়ার পাওয়ায় আফসোস হয়েছিল লতারও

অভিজিৎ রায়  চলচ্চিত্র পরিচালক গুলজার সে সময় সুচিত্রা ইন্টারন্যাশনালের ব্যানারে মীরাবাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মানের পরিকল্পনা কর ছিলেন৷ প্রধান চরিত্রে হেমা মালিনী এবং রানা ভোজ এর চরিত্রে অমিতাভ বচ্চনকে চুক্তিবদ্ধ করেন৷ প্রযোজক প্রেমজি ও জে সি মনচন্দা৷ সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলাল কে৷ সাধারণতঃ, গুলজার সাধারণত আরডি বর্মণকে তার চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব

Singer Vani Jairam. File photo: Manorama

অভিজিৎ রায় 
চলচ্চিত্র পরিচালক গুলজার সে সময় সুচিত্রা ইন্টারন্যাশনালের ব্যানারে মীরাবাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মানের পরিকল্পনা কর ছিলেন৷ প্রধান চরিত্রে হেমা মালিনী এবং রানা ভোজ এর চরিত্রে অমিতাভ বচ্চনকে চুক্তিবদ্ধ করেন৷ প্রযোজক প্রেমজি ও জে সি মনচন্দা৷ সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলাল কে৷ সাধারণতঃ, গুলজার সাধারণত আরডি বর্মণকে তার চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব দিতেন৷ ছবির মুহুর্ত এর দিন প্রধান অতিথি ছিলেন লতা মঙ্গেশকর৷ মুহুর্তের দিনই ছবির প্রযোজক প্রেমজি এবং জেএন মনচন্দা লতা মঙ্গেশকরকে ছবির জন্য গান গাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন৷ স্বাভাবিক ভাবে লতার কথায় প্রযোজকরা হতবাক৷ ছবির পরিচালক গুলজার সমস্ত কথা শুনে প্রযোজককে আশ্বস্ত করেন যে তিনি লতা মঙ্গেশকরের সাথে কথা বলবেন এবং তাকে ছবির গান গাইতে রাজি করাবেন৷
পরে গুলজার যখন একদিন লতার সাথে তার বাডি়তে দেখা করেন, তখন তিনি জানতে পারলেন যে তাঁর ভাই এবং সুরকার হূদয়নাথ মঙ্গেশকর তাঁরই কণ্ঠে মীরাবাইয়ের ভজনের দুটি অ্যালবাম করেছেন, তাই এই ছবির জন্য গান গাওয়া তাঁর পক্ষে ঠিক হবে না৷ একই ভাবে সুরকার লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলালের অনুরোধও প্রত্যাক্ষান করেন৷ এই দেখে ছবির সুরকার লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলাল ও ছবিটির কাজ ছেডে় দেন৷ এবার গুলজার তাঁর পরম বন্ধু পঞ্চমকে ছবির সুরকার হওয়ার প্রস্তাব দেন৷ কিন্ত্ত লতা মঙ্গেশকর গান না গাওয়ার কারণে আরডিও ছবিটি নিতে রাজি হননি৷ পরে গুলজার অন্যান্য সঙ্গীত পরিচালকদের সাথেও কথা বলেন কিন্ত্ত কেউই তাঁর এই ছবি করতে রাজি হননি৷ এদিকে যেহেতু হেমা মালিনির ডেট পাওয়া গিয়েছে তাই গুলজার আর দেরি না করে ছবির শুটিংয় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্ত্ত এখন ঝামেলা শুরু হয় অমিতাভ বচ্চনের ডেট নিয়ে৷ অন্য কোনও উপায় না দেখে গুলজার এরপর অমিতাভ বচ্চনের কে সরিয়ে বিনোদ খান্নাকে রানা ভোজের চরিত্রে সাইন করেন৷ ছবির শুটিং শুরু হলেও গানের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ একদিন ছবির কাহিনীকার ভূষণ বনমালী গুলজারকে বলেন – আচ্ছা ছবির সুরকার হিসেবে পন্ডিত রবিশঙ্করকে নিলে কেমন হয়৷ উনি তো এককালে হিন্দি ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন৷ ৭০-এর দশকে সেতারের জগতে পণ্ডিত রবিশঙ্কর এক জন বেশ নাম ডাক ওয়ালা শিল্পী হয়ে গিয়েছেন৷ বিশ্বজুডে় তার কনসার্ট চলছে এমন ব্যস্ত শিল্পী কি আর হিন্দি ছবির জন্য সময় দিতে পারবেন৷ তার উপর তিনি এখন কোথায় সেটাই জানা প্রায় দুষ্কর৷ সেদিনকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও তো আজকের মতো ছিল না, তাই পণ্ডিতজিকে খুঁজে পেতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল৷ এদিকে গুলজার লন্ডনের এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারেন যে পন্ডিতজি এখন লন্ডনে আছেন৷ গুলজারও দেরি না করে সোজা পৌঁছে যান লন্ডনে৷ সেখানে তিনি পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে নিজের ছবির সংগীত পরিচালনার প্রস্তাব দেন৷ সেই সাথে তিনি এটাও জানান যে লতা মঙ্গেশকর তাঁর এই ছবিতে গান গাইবেন না৷ পণ্ডিতজি গুলজারের কাছ থেকে সব শুনে এই বিষ;য় ভাবার জন্য কয়েকটা দিন চেয়ে নেন৷ তিনি গুলজার কে বলেন তাঁর লন্ডনে প্রবাস কালের মধ্যেই তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন৷ অনেক ভাবনা চিন্তার পর পণ্ডিতজি ঠিক করলেন যে তিনি এই চ্যালেঞ্জটি নেবেন যে লতা মঙ্গেশকর ছাড়াও ভাল গান করা যায়৷ যথা সময়ে পণ্ডিতজি ফোন করে গুলজারকে জানিয়ে দেন যে তিনি তাঁর ছবির সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন৷ এক মাস পর তিনি মাস খানেকের জন্য ভারতে যাবেন এবং সেই সময়ের মধ্যে তিনি ছবির সবকটি গান রেকর্ড করে দেবেন৷ গুলজার যেন রেকর্ডিং স্টুডিও, রেকর্ডিস্ট্ ও মিউজিক অ্যারেঞ্জার কে বুক করে রাখেন৷ যথারীতি গুলজারও মুম্বাইতে ফিরে এসে মিউজিক অ্যারেঞ্জারে বাসুদেব চক্রবর্তী কে ধরলেন৷ বাসু দা যেহেতু পণ্ডিত রবিশঙ্কর এর সাথে কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছিলেন তাই তিনিও বিনা বাক্যে রাজি হয়ে গেলেন৷ তিনি তখন সুরকার রাহুল দেব বর্মনের ইউনিটের চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট৷ বাসুদা পঞ্চমদার ইউনিট থেকে একমাস ছুটি নিয়ে পণ্ডিত জির কাজে নিযুক্ত হন৷ এদিকে পণ্ডিতজি দক্ষিণের প্রথিতযষা শিল্পী বাণী জয়রাম কে চিঠি লিখে এক মাস বাদে মুম্বাই (তখন বোম্বে) তে এসে যোগাযোগ করতে বললেন৷ ঠিক এক মাস বাদে পণ্ডিত জি মুম্বাই আসেন এবং এক মাসের মধ্যে ছবির বারো খানি গান শিল্পী বাণী জয়রাম কে দিয়ে রেকর্ড করিয়ে নেন৷ এদিকে যখন গানের কাজ শেষ পরিচালক গুলজার এর ছবির কাজ তখনও অসম্পূর্ণ৷ ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এর কাজ পরে করবেন বলে পণ্ডিতজি ফেরত লন্ডন চলে যান৷ এক বছরের মাথায় ছবির শুটিং শেষ হওয়ার পর তিনি ফিরে এসে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করে দেন৷ এই কাজের তত্বাবধায়ক ছিলেন বাসুদেব চক্রবর্তী৷ অনেক সাধ্য সাধনার পর ১৯৭৯ সালে গুলজার এর এই বহুপ্রত্যশিত ছবি মীরা মুক্তি পায এবং বক্স অফিসে ছবিটি ফ্লপ করে৷ কিন্ত তা বলে ছবির গান কিন্ত ফ্লপ করেনি৷ মীরা ভজন ‘মেরে তো গিরিধর গোপাল দুসরো না কোই’-এর জন্য বাণী জয়রামকে সেই বছরের ফিল্ম ফেয়ার বেস্ট ফিমেল সিঙ্গার এর পুরস্কার দেওয়া হয়৷