নির্দেশক অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটি প্রথম ছবি হলেও, তাঁর সাফল্যের বার্তা কিন্তু বেশ সাড়া জাগিয়েছে দর্শকদের মনে। বহুদিন পর একটা নিখুঁত গল্প বলার আঙ্গিক নিয়ে কোনও ছবি, মানুষকে এভাবে স্পর্শ করল। কী বলছেন অভিনন্দন? কথা বলবেন অবন্তী সিনহা।
প্রথম ছবি হিসেবে এরকম একটা কাব্যিক সিনেমা অত্যন্ত ঝুঁকির বলে মনে হয়নি?
সত্যি বলতে কী, ছবিটা করার সময় না তো আমি ঝুঁকি নিয়ে ভেবেছি, না ইউএসপি নিয়ে। নিজে ছবি করব এই অপেক্ষাতে ছিলাম। যখন ‘তিনকাহন’ লিখি তখন আমার বয়েস ১৯। ২০১৯ সালে আমার যখন ২৬, তখন এই ছবিটা শুট করি। আমার ইচ্ছে ছিল প্রথম ছবি একেবারে সিনেমার নিজস্ব ভাষা এবং ব্যাকরণ মেনেই করব। সেভাবেই জন্ম ‘মানিকবাবুর মেঘ’-এর।
ছবিটা মানুষের ভালোলাগার কারণ আপনার মতে কী?
ছবিটা যখন বিশ্বের বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হল, তখন স্বাভাবতই খুব আনন্দ হয়েছিল। কিন্তু ফেস্টিভ্যালে যে-চলচ্চিত্রের উদযাপন হয়, সেটা তো থিয়েট্রিকাল সিনেমার সঙ্গে তুলনা করে লাভ নেই। অথচ ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর যেটা হল, সেটা কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো ঘটনাই। কারণ এই ছবি প্ল্যান করে বাণিজ্যক দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি নয়। একটা শান্ত শহর, একজন শান্ত মানুষ আর একটা শান্ত মেঘ নিয়ে তৈরি ছবিটির একটা শান্ত চলন আছে, যেটা বোধহয় মানুষের ভালো লেগেছে। হল ভিজিটে গিয়ে আমরা দেখেছি মানুষ কাঁদছেন, আবেগে জড়িয়ে ধরছেন। তখন মনে হল একটা স্বতঃস্ফূর্ত আবেদন তৈরি করতে পেরেছে এই ছবি।
অঞ্জন দত্তর গানের ‘হরিপদ কেরানি’ কি কোনও ভাবে প্রভাবিত করেছিল আপনাকে মানিকবাবুর চরিত্রটা ভাবতে?
দুর্ভাগ্যক্রমে আমি ওই গানটা ছবি তৈরির আগে শুনিনি। পরে শুনে মনে হয়েছে সত্যিই বেশ রিলেটেবল। এটা যদিও আমার মৌলিক গল্প- কিন্তু মানিকবাবুর মিল চেকভের কেরানির সঙ্গেও যেমন আছে, সত্যজিতের বঙ্কুবাবুও তেমনই একজন মানুষ। এই ছাপোষা কেরানি আসলে একটি বিশেষ শ্রেণী ,যারা চুপিচুপি একা একা মরে যায়। ফ্রেঞ্চ সাহিত্য থেকে শুরু করে, মারাঠি কিংবা বাংলা সাহিত্যেও এমন চরিত্রের ছড়াছড়ি।
আমার উদ্দেশ্য ছিল একটা টাইমলেস ক্যারেক্টার বানানো, যার কোনও ডাইমেনশন নেই। একটা ট্রানসেনডেন্টাল চরিত্র, যা একশো বছর আগেও ছিল, একশো বছর পরেও থাকবে। যে জন্য কেউ কেউ আবার কাফকার চরিত্রের সঙ্গেও এর তুলনা করেছেন। সেটাই বরং একটা বড়ো পাওনা বলতে পারেন।
ছবির শেষে নির্দিষ্ট করে বলা হয় না হরিপদর ঠিক কী হল। আপনি কি ছোট গল্পের আঙ্গিকে, শেষ হয়ে হইল না শেষ- এই মেজাজটাই রাখতে চাইলেন?
হ্যাঁ একদমই ঠিক। ছবিটার যে-মুড, তাতে কোনও কিছুই সেভাবে দাগিয়ে দেওয়া নেই। একটা ন্যারেটিভ যেমন আছে- তেমনি এটা খালি ইনফর্মেশন কাট ইনফর্মেশন তো নয় যে, একটা কনক্লুসিভ এন্ড না হলে সেটার কোনও সমাপতন ঘটে না বা তার উত্তরণ হয় না। আমার মনে হয়েছিল পরিসমাপ্তিটা ওপেন টু অডিয়েন্স রাখাটাই বেটার। সেটার মধ্যে যেন কল্পনা থেকে যায়, একটা ব্যক্তিগত ইন্টারপ্রিটেশনের জায়গা থাকে।