৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হল অমর্ত্য ভট্টাচার্য্য পরিচালিত ছবি ‘লহরী’। এর আগেও দু’বার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর দুটি ছবি ‘অ্যাডিউ গোদার’ এবং ‘রুনানুবান্ধা’। এই উৎসবেই পুরস্কৃত হয়েছিল ‘অ্যাডিউ গোদার’ ছবিটি।
ওড়িয়া ভাষায় নির্মিত অমর্ত্যর ছবিতে একটা সাবলীল গল্প বলার প্যাটার্ন থাকে। কোনও সময়ই সেটা খুব জটিল আখ্যানে রূপান্তরিত হয় না। সীমাবদ্ধ বাজেটে একটি লোকেশন ও তার আশপাশের গ্রামীণ জীবনকে ঘিরে গড়ে ওঠে তাঁর চরিত্ররা। রিয়ালিস্টিক জীবনধর্মী গল্প। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
‘লহরী’-তে প্রধান দুটি চরিত্র। মাঝি ভুতা আর মেছুড়ে দীনু। চিলকার কোনও শাখা ঢুকে এসে একটা খাঁড়ি তৈরি করেছে, সেখানেই মাটির বাড়িতে তাদের জীবনযাপন। ক্কচিৎ পর্যটক আর বার্ড ওয়াচারদের আনাগোনায় কিঞ্চিৎ উপার্জন হয় দু’জনের। কিন্তু এক মহিলা পর্যটক ইকো-টুরিজমের প্ল্যান ঢুকিয়ে দেয় অভাবী ভুতার মাথায়। আর সেটাই হয়ে যায় ভুতা আর দীনুর জীবনে গেম চেঞ্জার। ভুতার বাসস্থান রূপান্তরিত হয় হোমস্টেতে, দীনুর মাছভাজা হয়ে ওঠে ডেলিকেসি, আদিবাসী মানুষ ‘বাঘ নৃত্য’ দেখিয়ে টুরিস্টদের থেকে পয়সা রোজগার করতে থাকে আর গ্রামের আরেক বেকার যুবক হয়ে যায় রিসর্টের ম্যানেজার!
অঞ্চলটা খুব ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বদলাতে থাকে ভুতার হাত ধরে। বহু গ্রামেই এখন এভাবেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিকিয়ে যাচ্ছে ইকো-টুরিজম নামক ব্যবসার ফাঁদে।
গল্পের এই সাদামাঠা চলনে খানিক বদল আসে, দীনুর ছেলের তার মা-কে মিস করার সাব-প্লটে। মা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর একটা চোরা কষ্টের শরিক হয় সে। কিশোরটির কাছে একটা ম্যানিকুইন হয়ে ওঠে তার প্রতীকী মা। এই পর্যায় থেকে ছবিটা কিছুটা দীর্ঘায়িত মনে হয়। কিন্তু ছিমছাম মেকিং আর সুন্দর ব্যাকড্রপের জন্য সার্বিকভাবে আলাদা একটি আবেদন তৈরি করে।
ছবির পরিচালক জানান, KIFF-এর সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগ রয়েছে। যে-বারোটা ছবি প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে, তার মধ্যে ‘লহরী’ আছে, এটা খুবই আনন্দের। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন ঝিলিক ভট্টাচার্য। চৌধুরী জয়প্রকাশ দাশ, চৌধুরী বিকাশ দাশ, দীপান্বিতা দাশ মহাপাত্র, সুশান্ত মিশ্র, স্বস্তিক চৌধুরী প্রমুখ অভিনয় করেছেন ছবিতে। ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য, সিনেমাটোগ্রাফি ও সম্পাদনার দায়িত্ব সামলেছেন পরিচালক স্বয়ং।