বিদ্যাসাগরের কর্মাটাঁড় : এখন যেমন

আধুনিক বাঙালির গোত্রপিতা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেন জীবনের শেষ আঠারোটি বছর অধুনা ঝাড়খণ্ডের কর্মাটাড়ে কাটিয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গে নানা মুনির নানা মত। কত সালে, কোন সূত্র ধরে কর্মাটঁড়ের সঙ্গে তাঁর যোগ তৈরি হয়, সেইসব সম্পর্কেও ধোঁয়াশা বড়ো কম নয়। এতদসত্ত্বেও নিশ্চিত করে যে কথাগুলো বলা যায়, তার অন্যতম একটি দিক হলো বিদ্যাসাগর ও কর্মাটাঁড় এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে বাঁধা। কলকাতার বাদুড়বাগানের বাড়িটির আগেই এই বাড়ি তিনি কিনেছিলেন এবং এখানে শেষ জীবনে আঠারোটি বছরের একটা বড়ো অংশ তিনি অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু কর্মাটাঁড়ে থাকাকালীন তাঁর কাজকর্ম সম্পর্কে তিনি স্বয়ং নিস্পৃহ।

কোথাও কিছু লিখেছেন বলে জানা যায়নি। ফলত কর্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নানান কথা পাথুরে প্রমাণ ছাড়া ছড়িয়ে রয়েছে, অনেকটাই মিথের আকারে। তবে এইসব ছড়িয়ে থাকা কথার মধ্যে দু’জনের আলোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী অন্যজন বিদ্যাসাগরের কনিষ্ঠ ভ্রাতা শম্ভুচন্দ্র। এঁরা দুজন স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বিদ্যাসাগরের জীবদ্দশায় কর্মাটাঁড়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। আর উপস্থিত হয়েছিলেন একদা আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তিনি গিয়েছিলেন মূলত চাকরির মুসাবিদা করতে। এই বিষয়টি হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর লেখায় পাওয়া গেলেও স্বয়ং আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবিষয়ে কিছু লিখেছেন বলে জানা যায় না।

বিদ্যাসাগরের জীবদ্দশায় যাঁরা কর্মাটাঁড়ে গিয়ে সেখানকার কথা লিখেছেন, অথবা না গিয়ে লিখেছেন, তাঁদের অধিকাংশেই মতামত এই যে, শারীরিক অসুস্থতার জন্যই বিদ্যাসাগর তখনকার অনেক বাঙালির মতো পশ্চিমে সময় কাটানোর জন্য বাড়িটি কিনেছিলেন। কিন্তু একটা কথা মনে হয়, শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে পশ্চিমে হাওয়াবদলের যেসব কথা বলা হয়, সেগুলো বিদ্যাসাগরের কর্মাটাঁড়ে যাওয়ার অনেক পরের ঘটনা। সেদিক থেকে তো মনে হয় বাঙালির পশ্চিমে যাওয়ার পথিকৃৎ বিদ্যাসাগর স্বয়ং। এর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ ও শহর কলকাতা সম্পর্কে তাঁর মধ্যে তৈরি হওয়া একধরনের বিরূপতা হয়তো যুক্ত হয়ে থাকবে। প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন দেওঘরে। আর্থিক কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাই মধুপুর ও জামতাড়া এই দুই স্টেশনের মধ্যবর্তী কর্মাটাঁড়কে বেছে নিয়েছিলেন।


জনৈকা ইংরেজ মহিলার কাছ থেকে পাঁচশো টাকায় বাড়িটি কেনা হয়। রেলওয়ে ব্যবস্থার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এইসব অঞ্চলে কাঠের ব্যবসায় ইংরেজ ব্যবসায়ীরা নিজেদের নিয়োগ করে। এরকম একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী বাড়িটি তৈরি করেন। এবং তাঁর অকালমৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী বাড়িটি বিক্রি করে লণ্ডনে ফিরে যান। এই প্রসঙ্গে একটি প্রচলিত কাহিনি জানা যায়। বর্ধমান রাজপরিবারের সঙ্গে কিছুদিন আগেই বিদ্যাসাগরের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বর্ধমান রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি আধুনিক চিন্তায় উজ্জীবিত শিক্ষিত মুসলিম পরিবারের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। এই পরিবারের কোনো একজন এই সময়ে বিহারের দুমকায় মহকুমা শাসক ছিলেন। তাঁর যোগসূত্রে বাড়িটি কেনা হয়। উদ্দেশ্য হাওয়া বদল।

একথা সত্য যে, ১৮৭৩ অথবা ১৮৭৪ যখনই বিদ্যাসাগর এখানে আসুন না কেন, আসবার পরে এই অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়, বিশেষ করে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের তাঁর যে একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়, সে কথা পাওয়া যাবে প্রতক্ষ্যদর্শী শম্ভুচন্দ্র, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর লেখাতেও। এই দু’জন ছাড়া তৃতীয় যে মানুষটি কার্মাটারে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তিনি আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। মূলত চাকরি-প্রার্থনায়। তাঁর এবিষয়ে কোনো লেখা অবশ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু লেখাগুলো পড়লে বোঝা যায় কর্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগর কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যাননি।

একটা কথা অবশ্য গৌতম চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, যার সঙ্গে সাঁওতাল বিদ্রোহের সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘সম্ভবত সাঁওতাল পরগণা এলাকার বিদ্রোহ কবলিত এলাকার মানুষের সাহায্যের জন্যই পণ্ডিত মহাশয় কোলকাতার ব্যস্ততম জীবন ত্যাগ করে এখানে এসেছিলেন।’ কথাগুলোর কোনো সূত্র তাঁর লেখায় নেই, এবং কথাগুলো আমাদের অনেকটাই কষ্টকল্পিত মনে হয়েছে। কারণ বিদ্যাসাগর কর্মাটাঁড়ে গিয়েছিলেন ১৮৭২-৭৩ সাল নাগাদ, সাঁওতাল বিদ্রোহের ঘটনা ১৮৫৫ সালে। অন্তত বিদ্যাসাগরের কর্মাটাঁড়ে যাওয়ার সঙ্গে সাঁওতাল বিদ্রোহের কোনো প্রত্যক্ষ প্রভাব নেই। তবে মানুষ বিদ্যাসাগর যে মানবিক মহত্বের মহিমায় মহিমান্বিত, সেখানে দাঁড়িয়ে বলাই যায় সাধারণ মানুষের কাছাকাছি গিয়ে তাদের উন্নতির জন্য তাঁর প্রয়াসগুলোর একটি প্রকল্প অবশ্যই কর্মাটাঁড়ে বসবাস।

কর্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের জীবনের শেষ আঠারোটি বছর, কিন্তু একটানা নয়। মাঝে মাঝে তিনি এখানে এসেছেন। এবং এই সময়ে সাঁওতাল জনজাতির মধ্যে শিক্ষা বিস্তারসহ তাদের উন্নতির জন্য নানান প্রয়াসে নিয়োজিত করেছেন। কিন্তু কোনোটাই সেগুলোকে পরিকল্পনামাফিক প্রয়াস হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। হয়তো ১৮৬৬-তে উত্তরপাড়া থেকে ফেরার পথে তিনি যে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন, সারাজীবন সেই অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাননি এবং খুব স্বাভাবিক কর্মাটাঁড়ের কর্মকাণ্ডে আমাদের চেনাজানা বিদ্যাসাগরকে খুব একটা দেখা যাবে না। আদিবাসীদের জন্য শিক্ষাদানের ব্যবস্থা, তাদের চিকিৎসা, কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাদ্য সরবরাহের যেসব কথা পাওয়া যায়, তা অনেকটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগের সীমায় আবদ্ধ। সেইসব কর্মযজ্ঞে যদি বিপুল বিস্তৃতির পরিসর থাকত, তাহলে বিদ্যাসাগরের বাড়ি তিরোধানের প্রায় আশি বছর পর্যন্ত আবিষ্কারের আড়ালে থেকে যেত না।

আদিবাসীদের গ্রামগুলোতে পাওয়া যেত তাঁর কিছু না কিছু স্মৃতিচিহ্ন। এমনকি বিদ্যাসাগরের তিরোধানের পরে কলকাতার সিংহদাস মল্লিক তাঁর পুত্র নারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে নেবার পরেও বাড়ির গায়ে যে স্মৃতিফলকটুকু লাগিয়েছিলেন, সেটুকু এবং বিদ্যাসাগরের খাটটি ছাড়া অন্য কোনো স্মৃতি সেখানে মিলবে না। বাস্তবত এখনকার কর্মাটাঁরে বিদ্যাসাগরের বাসভবন ‘নন্দনকানন’টি আছে, বিদ্যাসাগর নেই। মন্দের মধ্যে ভালো এটুকুই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিহার বাঙালি সমিতির যৌথ উদ্যোগ এবং তদানীন্তন বিহার সরকারের রাজ্যপালসহ বিভিন্ন পদাধিকারীদের সৎ উদ্যোগে অন্তত রামগোপাল গুটগুটিয়া নামের এক ব্যবসায়ীর চক্রান্তের বেড়াজাল ছিঁড়ে বিদ্যাসাগরের বাড়ি আপন অস্তিত্বে ফিরে এসেছে। এক্ষেত্রে সিংহদাস মল্লিক পরিবারের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রাখতে হবে। বিদ্যাসাগর যে মাটির বেদিতে বসে আদিবাসীদের শিক্ষাদান করতেন বলে পরিচিত, তার পেছনে জন্মেছে বটগাছ এবং আকারে তার আজ বেশ বড়োসড়ো। তারই ছায়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। বিহার বাঙালি সমিতি নন্দনকানন কিনে নিয়েছিলেন সিংহদাস মল্লিকের উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে চব্বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে। সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতেও এই মূল্য নেহাত নগণ্য। ১৯৭৪ সালে। কিন্তু

বিদ্যাসাগরের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধায় মল্লিকরা আপত্তি করেননি। ১৯৭২-এর ২৬ ডিসেম্বর তৈরি হয়েছিল ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি’ এবং এখানে বঙ্গীয় নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থ সেনগুপ্ত ও অন্যান্যদের উদ্যোগে স্কুল শুরু হয়। প্রথমে বিদ্যাসাগরের বাসভবনে এবং পরে তৈরি হয় দুটো আলাদা বিল্ডিং। আরও পরে কলকাতার ‘পথের পাঁচালী’ সংস্থা তৈরি করেছেন ‘ভগবতী ভবন’, সংস্কার করা হয়েছিল বিদ্যাসাগরের দাতব্য চিকিৎসালয়। আপাতত সবগুলো বন্ধ। বিদ্যাসাগরের তিরোধানের কিছু পরে স্থানীয় বাঙালিদের উদ্যোগে নবগৌর বিদ্যালয়ট, বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়টি ১৯২৮ সালে কর্মাটাঁড় রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বদিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর উপরতলায় ‘বিদ্যাসাগর লাইব্রেরি’।

বিদ্যালয়টি সরকার অনুমোদিত হলেও বাড়ির মালিকানা সরকারের নয়‌। কেননা কোনো অজ্ঞাত কারণে তদানীন্তন স্কুল কর্তৃপক্ষকে জমির মালিক রেজিস্ট্রেশন করে দেননি। ফলে স্কুলটি উঠে গেছে ছ’কিলোমিটার দূরে কঁরো গ্রামে স্বাধীনতা সংগ্রামী সখারাম গণেশ দেওস্করের বাসভবনে। আজকের কর্মাটাঁড়ে যে দশ-বারোঘর বাঙালি বসবাস করেন সেই পাড়ার মধ্যে কর্মাটাঁড়-কঁরো রোডের সামনে লাইব্রেরি আজও ভগ্নদশা নিয়ে অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। কিন্তু জমির মালিকানা সংক্রান্ত ঝঞ্ঝাটে লাইব্রেরির কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বন্ধ। বিহার রাজ্য ভেঙে যাবার পরে বিহার বাঙালি সমিতি ও ঝাড়খণ্ড বাঙালি সমিতির তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি’।
তবে এইসবের মধ্যে রেল দপ্তরের ভূমিকা বেশ প্রশংসাযোগ্য মনে হয়েছে আমাদের।

২০২৩-এর ডিসেম্বর মাসে কর্মাটঁড়ে রেলওয়ে স্টেশনেরআধুনিকীকরণ শুরু হয়েছে। আগেই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল ‘বিদ্যাসাগর’। প্লাটফর্মের ভেতরে বসেছে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি, যা অনেকটাই বিরল ঘটনা। স্টেশনের লাগোয়া বিরাট পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বিদ্যাসাগর পার্ক’। কিন্তু বিদ্যাসাগরের বাড়ি ‘নন্দনকানন’-কে ঘিরে বর্তমান স্মৃতিরক্ষা সমিতির পরিকল্পনা অনেকটাই অসংলগ্ন মনে হলো আমাদের। বিদ্যাসাগরের জীবদ্দশায় বাড়িতে প্রবেশের সদর দরজা বন্ধ, কিন্তু অনেক প্রশস্ত দরজা তৈরি হয়েছে দক্ষিণ দিকে। এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেই বামহাতে বেশ বড়োসড়ো বাগান। চোখে পড়বে একটি ভিত্তিপ্রস্তরে লেখা রয়েছে কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজের দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে অধ্যক্ষ-অধ্যাপক-অধ্যাপিকা থেকে শুরু করে ছাত্র সংসদের পদাধিকারীদের নামধাম। বিশালকায় ফলক, কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে, খোদিত বিদ্যাসাগরের উদ্ধৃতিটিও ভুল। অধ্যক্ষসহ কলেজের একগাদা অধ্যাপক ও ছাত্র সংসদের

পদাধিকারীদের নাম এবং একদা খাদ্যমন্ত্রী (বর্তমানে জেলনিবাসী) জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম। আপাতত সেলোটেপের আড়ালে থাকলেও অনুমান করা কঠিন নয়। এগুলো দেখতে দেখতে কোনো দেবমন্দির বা মসজিদে দানের বিনিময়ে ফলক নির্মাণের স্মৃতি আপনার মনে জেগে উঠতেই পারে। স্মৃতিরক্ষা সমিতি হয়তো আর্থিক সঙ্গতির অভাবে এসবের অনুমোদন দিচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের এটাও ভাবতে বলব যে তাতে স্বয়ং বিদ্যাসাগর হারিয়ে যাচ্ছেন।

আমরা কথা বলেছিলাম বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির বর্তমান সভাপতি দেবাশিস মিশ্র, সাধারণ সম্পাদক চন্দন মুখোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ সচ্চিদানন্দ সিংহ মহাশয়ের সঙ্গে। আর্থিক সঙ্কট ও সময় দেবার মতো মানুষের অভাবের কথা ফুটে উঠেছে তাঁদের কথায়। আপাতত পুরনো ও নতুন মিলিয়ে চারটি গেস্টরুম সামান্য আয়ের উৎস। একটা সেলাই শিক্ষার স্কুল চলে, যেখানে বাস্তবত কোনো আয় নেই। সামাজিক নানান অনুষ্ঠানে নন্দনকানন চত্বর ভাড়া দেওয়া হয়। সরকারের কাছে অধিগ্রহণ দাবি নিয়ে স্পষ্ট অভিমত পাওয়া গেল না কারোরই কাছে। বরং কর্পোরেট সেক্টরের সঙ্গে যৌথভাবে কোনো আইআইটি কলেজ তৈরির কথা ভাবছেন তাঁরা, এমনটাই বেরিয়ে এল বর্তমান কোষাধ্যক্ষ সচ্চিদানন্দবাবুর কথায়। বিদ্যাসাগরের জন্মদিন, তিরোধান-দিবস, বাড়িটি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে হাতে পাবার দিন ‘গুরুদক্ষিণা দিবস’ পালন করা হয় সাড়ম্বরে। কিন্তু বিদ্যাসাগরচর্চার কোনো পরিসর নেই। বিস্ময়কর ঘটনা এই যে সুরক্ষিত বাড়িতে যথেষ্ট ব্যবহারযোগ্য ঘরগুলোর মধ্যে একটিও বিদ্যাসাগরের লেখা বই পাওয়া যাবে না। অথচ সেগুলো সংগ্রহই জরুরি ছিল।

পশ্চিমে ঘুরতে যাওয়া বাঙালির প্যাশনের মধ্যে সম্ভবত আজকের বাঙালির মধ্যে রয়ে গেছে। মধুপুর, দেওঘর, জিডি বা গিরিডি ঘুরতে যাওয়ার সঙ্গে কর্মাটাঁড়ে ঘুরতে যাওয়ার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কর্মাটাঁর বা তার আশেপাশে এমন কিছু নিছক ভ্রমণপিপাসু বাঙালি পাবেন না, যা তাঁদের মনকে তৃপ্ত করতে খুব একটা পারে। তার জন্য দুটো স্টেশন পরেই রয়েছে মধুপুর। কিন্তু বিদ্যাসাগর-অভিমুখী বাঙালির কাছে মধুপুর-জসিডি-দেওঘরের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহের হবে পিতার মুখোমুখি পুত্রের দাঁড়ানোর মতোই আবেগ-শ্রদ্ধা-ভালোবাসার। নিভৃত বাসী পিতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আজকের প্রজন্ম যেন সহজেই উচ্চারণ করতে পারে—
‘পিতা নোহসি পিতা নো বোধি
নমস্তেহস্তু মা মা হিংসীঃ।’
‘বিশ্বানি দেব সবিতর্দুরিতানি পরাসুব
যদ্ভদ্রং তন্ন আসুব॥’