ভ্রমণ: স্ট্যাচু অফ লিবার্টি

স্ট্যাচু অফ লিবার্টি(ছবি-Getty Images)

নতুন কিছু দেখতে যাবার কথা শুনলে মন কেমন আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে।এবার আমাদের তালিকায় ছিল আমেরিকা ভ্রমণ।আই.সি.সি.আর প্রেরিত দিল্লির শ্রীরাম ভারতীয় কলাকেন্দ্রের পঁচিশজন সদস্য এয়ার ইন্ডিয়ার বিশাল শ্বেতপক্ষীতে সতেরােঘণ্টা ভায়া লন্ডনে ব্রেকজানি করে নিউইয়র্কের বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম।অক্টোবরের জাঁকিয়ে শীত চারিদিকের আবহাওয়াকে কনকনে ঠাণ্ডায় মুহ্যমান করে দিলেও আমেরিকাবাসীরা যেন আরও উদ্যমে কর্মতৎপরতায় ছুটে বেড়াচ্ছে।নিউইয়র্কের সর্ববৃহৎ ফাইভ স্টার হােটেল পেন্টার দরজায় যখন আমাদের  বি.ডি.ও কোচ বাস নামিয়ে দিল,চারিদিকের গগনচুম্বী বিল্ডিংগুলাে দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলাম।বিশাল দেশ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।কত নয়নভুলানো দ্রষ্টব্যস্থান রয়েছে যা আমাদের একে একে দেখতে হবে। প্রথমে বেছে নিলাম পৃথিবী বিখ্যাত স্ট্যাচু অফ লিবার্টি।হােটেলের কারুকার্য,তৈলচিত্র,আলাের কারসাজি,অটোমেটিক লিফট,রুমগুলির আরামদায়ক পরিষেবা সবকিছু মন তপ্তিতে ভরিয়ে দিল।

পরের দিন হােটেলের বিশাল ডাইনিং হলে ব্রেকফাস্ট পর্ব সেরে সদলে ছুটলাম গন্তব্যস্থল লিবার্টি দর্শনে।যাকে দেখার উত্তেজনায় নিজেরাই নিউইয়র্কের সাবওয়ে দিয়ে ট্রেনে চেপে সাউথ ফেরি স্টেশনে পৌঁছােলাম।ট্রুপলিডার অশােকজী বয়স্ক মানুষ হলেও কর্মঠ এবং কর্তব্যপরায়ণ,তিনি আমাদের গাইড হিসেবে নিয়ে গেলেও দুনিয়া ঘুরে ঘুরে আমরাও কম অভ্যস্থ নই,তাই চনমনে স্বাধীন মনােভাব নিয়ে ট্রেনে চেপে বসলাম।আমেরিকার সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাউথ ফেরি স্টেশনটি আরও অভিনবত্বের ছাপ রাখে।ট্রেনগুলি যেমন চকচকে স্টিলের তৈরি,ঝাঁ চকচকে স্টেনলেস স্টিলের স্কাইস্ক্রাপারগুলিও ততােধিক আকর্ষণীয় এবং সবকিছুই ঝকঝকে স্টিলের পিলার দ্বারা আবিষ্ট- যার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ আয়নার মতাে নিজের স্পষ্ট প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠতে হয়।সাউথফেরি স্টেশনে নেমে আটলান্টিক মহাসাগরের স্বচ্ছ নীলাভ জলের গা ঘেঁষে ছােটবড় অনেক রকমারি অপেক্ষারত ফেরির মধ্যে আমরা এবং আর কিছু পর্যটক একটি ফেরিতে টিকিট কেড়ে উঠে পড়লাম।জলের মাঝে ছােট,বড় অনেক দ্বীপ আছে।একটি দ্বীপ বিখ্যাত শুধুমাত্র মিউজিয়ামের জন্য।ফেরির কোণে দাঁড়িয়ে আমরা দলবদ্ধ হয়ে ফটো তুলতে শুরু করে দিই।

চারিদিকে দিগন্ত বিস্তৃত নীলিমায় নীল প্রপল জলরাশি ফেনা কেটে কেটে তীরবেগে এগিয়ে চলেছে লিবার্টি দ্বীপের উদ্দেশ্যে।মিনিট দশের মধ্যেই নির্দিষ্ট দ্বীপে পৌঁছে গেলাম।দ্বীপটির নাম ‘বেডলাে  আইল্যান্ড’।দ্বীপের উপর উঠে প্রকান্ড লিবার্টির আলাে হাতে মূর্তিটি দেখে স্পেল বাউন্ড হয়ে গেলাম।পুরাে দ্বীপটি লিবার্টির সাজসজ্জায় উৎসর্গ তাই প্রচলিত নাম ‘লিবার্টি আইল্যান্ড’,ডানহাতে উর্ধ্বমুখী মশাল,বাঁ হাতে এক পুস্তক,মাথায় রাউন্ড ক্রাউন,গ্রীনকালারের আবক্ষ নারীমুর্তিটি উঁচু এক বেদীর উপর স্বাধীনতার প্রতীক স্বরূপ চারিদিকে বেষ্টিত জলরাশির মাঝে দণ্ডায়মান অবস্থায় যুগযুগান্তব্যাপী সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে।


স্যাচুটির উচ্চতা ১৫১ফুট ১ইঞ্চি,টর্চ বা মশাল হাতের দৈর্ঘ্য ৪২ফুট।নীচে থেকে মুর্তির মাথায় ওঠার জন্য আছে ১৬৮র্টি সিঁড়ি।মাথার ক্রাউনে দাঁড়াতে পারে ৪০ জন পর্যটক।এখানে স্ক্রিনের মাধ্যমে দেখানাে হয় কিভাবে ওই শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।মুর্তিটির ওজন ৪৫০,০০০ পাউন্ড।বেদীর উপর স্বাধীনতার প্রতীক।ফ্রান্সের জনসাধারণ ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকাবাসীদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি হিসেবে মুর্তিটি উপহার দেয়।তাই একে বলা হয় “লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড’।নিউইয়র্ক হারবারে প্রবেশ দ্বারে মশাল হাতে দাঁড়িয়ে আমেরিকার স্বাধীনতার নারীমুর্তি যা পৃথিবীবিখ্যাত এবং পৃথিবীর দুরদুরান্ত থেকে সারাবছর প্রতিনিয়ত ট্যুরিস্টদের ভীড় উপচে পড়ছে তার একঝলক দর্শনের অভিপ্রায়ে।

বিশাল সবুজ অপূর্ব সুন্দর । নারীমুর্তিটি তার সুউচ্চতায় চারিদিকে মায়ের স্নেহ আঁচলে যেন সর্বক্ষণ ঘিরে রেখেছে।তার হাতছানি এড়াবার উপায় নেই।মন জুড়িয়ে চারিদিকের মানুষ একে দেখছেন আর ছবি তুলছেন।মাথা উঁচু করে তাকে দেখতে হয়।এ এক অবিশ্বাস্য শােভা যা বারংবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।বিষন্ন হৃদয়ে একসময় তাকে বিদায় জানিয়ে ফেরির মাধ্যমে অনেকগুলাে দ্বীপের কলাকৌশল দেখে সাউথফেরি স্টেশনে ফিরে আইসক্রীম কোন খেতে খেতে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠলাম। পিছনে পড়ে রইল আটলান্টিকের গাঢ় নীলাভ জলের মাঝে অবিস্মরণীয় স্ট্যাচু অফ লিবার্টি যার মনােরম আকর্ষণ এড়ানাে যায় না।

(সম্ভব হলে আপনারাও একবার ঘুরে আসতে পারেন। আজকাল অনেক ট্রাভেল ট্যুরিজম সেন্টার গুলি বিশ্বপরিক্রমা করাচ্ছে।সবকিছু তাদের দায়িত্বে থাকে।অতএব একবার সুযােগ গ্রহণ করতে পারেন।)