পয়লা বৈশাখ ১৪২৬: নববর্ষ তখন আর এখন

(Photo: Getty Images)

পয়লা বৈশাখ ১৪২৬: দেখতে দেখতে সত্তরটা নববর্ষ চলে গেল, মনে পড়ে ছেলেবেলায় বাংলা মাসের শেষ আর নববর্ষের শুরুটা বেশ মজা করেই কাটতো। আগের দিন বিডন ষ্ট্রীটের ছাতুবাবু বাজারে চড়কের মেলা দেখে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত হয়ে যেতো। চড়কপুজা পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে নামকরা লোকোৎসব। একমাস ধরে ভক্ত আর সন্ন্যাসীরা কঠিন ব্রত আর সংযম পালন করেন, চড়ক পুজার দিন কয়েকজন প্রায় তিরিশ চল্লিশ ফুট উঁচু চড়কগাছ থেকে মাটীতে রাখা ধারালো বটী, গাছের কাঁটার উপরে ঝাঁপ দেন।

নববর্ষের দিন ভোর হতে না হতেই দোকানদার আর ব্যবসায়ীরা মাথায় ছোট ঝুড়িতে লক্ষ্মী আর গণেশের মূর্তি, ফুলমালা, ফলমূল নিয়ে মন্দিরে মন্দিরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন পুজা দেওয়ার জন্য। পুজার পরে লক্ষ্মী গণেশের মূর্তি যা যার দোকানে রেখে দেন সারা বছর ধরে পুজা করার জন্য। দোকানে ঢোকার দরজার উপরে সিঁদুর লাগানো আম পাতা আর নানা রঙের শোলার ফুল পাটের দড়িতে বেঁধে টাঙিয়ে দেন।

ব্যাবসায়ীদের কাছে নববর্ষের দিনটা হাল খাতার দিন , খদ্দেরদের সঙ্গে সারা বছরেরে হিসাবপত্র এক লাল রঙের মোটা খেরো খাতায় লেখা থাকে। নববর্ষের দিন খদ্দেররা নিজেদের দোকানে যান তাঁদের সারা বছরের বকেয়া  সামর্থ মতো শোধ করার জন্য। এখন নগদের সময় তাই ধারে জিনিসপত্র কেনার রেওয়াজটা আগের থেকে কমে আসছে  আর  খেরো খাতার ব্যবহারও দিনে দিনে কমছে । তবে ধারে জিনিষ পত্র বিশেষ করে সোনার গহনা এখনো ধারে কেনার চল আছে , তাই খেরো খাতার বদলে সোনার ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো নোটবুক বা ডাইরি সঙ্গে রাখছেন।


নববর্ষ মানেই ভালোমন্দ খাওয়া দাওয়া, বিশেষ করে নানা রকমের মিষ্টি। ছেলেবেলায় দেখতাম দোকানে দোকানে মিষ্টির প্যাকেট পাওয়া যেতো। চার পাঁচ রকমের মিষ্টি সঙ্গে একটা নোনতা, শিঙারা বা তিন-কোনা নিমকি। ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে দোকানে দোকানে ঘুরে মিষ্টির প্যাকেট আর সরু করে মোড়া নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার ব্যাগে পুরতাম।

আগেকার দিনের তুলনায় এখন মিষ্টির স্বাদ আর সাইজ পাল্টেছে। আগে ছিল গ্লাসে গ্লাসে দোকানেই বানানো শরবৎ, এখন রেডিমেড বোতলে বোতলে নানা রকম কোল্ড ড্রিঙ্কস, বছর দুই আগে কোলকাতায় এক সোনার গহনার দোকানে হাঁড়িতে থেকে বার করে কুলফি খাইয়েছিল।

নববর্ষের দিন অনেক কল কারখানায় দেখেছি টেবিল চেয়ারে বসিয়ে পেটপুরে ভুরিভোজের ব্যবস্থাও থাকে, মেন আইটেম অবশ্যই পাঁঠার মাংস আর মিষ্টি দই ও সন্দেশ। একটা জিনিস চোখে পড়ার মতো। ব্যবসায়ীরা নগদ টাকা আগেও পছন্দ করতেন আর এখনো করেন। তাই বকেয়া টাকা শোধ করতে দোকানে দোকানে কার্ডের ব্যবহার এখনো চোখে পড়েনি। কয়েক বছর পরে মনে হয় সেটাও শুরু হয়ে যাবে।

(লেখক ক্যানবেরা বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার)