জাতীয় বীর, বটুকেশ্বর দত্ত

বিশ্বজিৎ সরকার

বর্ধমান শহর ছাড়িয়ে সদরঘাট তথা কৃষক সেতু অতিক্রম করে যে রাস্তাটি সোজা চলে গেছে তা মিশেছে আরামবাগে। আর সদরঘাট অতিক্রম করে দু’কিলোমিটার পেরোলেই বাঁকুড়া থেকে আরেকটি রাস্তা এই রাস্তাতে মিশেছে, এটি বাঁকুড়া মোড় নামে পরিচিত। এই রাস্তা ধরে বাঁকুড়া অভিমুখে বারো-তেরো কিলোমিটার গেলেই মেলে ওজোরপুকুর স্টপেজ, একটু পেরিয়েই খেজুরহাটি, খণ্ডঘোষ। এই ওজোরপুকুরের মোড়ে দু’দশক আগে একটি বিবর্ণ টিনের সাইনবোর্ডে অপেশাদারি হস্তে লেখা থাকতো, ‘এই রাস্তা ধরে গেলেই মিলবে ওয়াঁরির বটুকেশ্বর দত্তের বাড়ি’। তবে তখন কাঁচা রাস্তা। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার প্রকল্প এই সব এলাকায় আসতে একটু দেরি। নানান কাজে এই রাস্তায় যাওয়া-আসা থাকায় প্রায়ই চোখে পড়ত এই সাইন বোর্ড।

হেমন্তের এক দুপুর অতিক্রান্ত বিকেলে কৌতূহল ভরে হাজির হয়েছিলাম ওঁয়ারি গ্রামে বটুকেশ্বর দত্তের জন্মভিটে দর্শনে। তখনো টোটো বঙ্গের আনাচে-কানাচে এমন সুলভ ছিল না, রিকশাই ছিল ভরসা। তাও আবার পাওয়া যেত ওই খেজুরহাটিতে। বটুকেশ্বর দত্তের নাম শোনেননি, সুতরাং নামিয়ে দেবেন গ্রামের মুখে এমনই চুক্তি। পশ্চিম সূর্যের তামাটে কিরণ আছড়ে পড়েছে দু’ধারের বিস্তীর্ণ ঈষৎ হলুদ ধানখেতে। চারদিকের গাছগাছালি ঘেরা গ্রামের সরু রাস্তার মধ্যে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে বাংলার মোহনীয় রূপ।এমনই তৃপ্তিকর দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে এলাম গ্রামের মুখে। নামিয়ে দিলেন রিকশাচালক। প্রকৃতির অপার প্রাচুর্যে ভরা ওঁয়ারি গ্রামে সবুজের সমারোহ। অবশিষ্ট পথে.হাঁটার আনন্দ উপভোগ করতে করতে দু-একজন মানুষের সঙ্গে গল্পচ্ছলে জেনে নিচ্ছি বটুকেশ্বরের জন্মভিটের অবস্থান। এ গ্রামে যে এমন একজন বিপ্লবী মানুষ ছিলেন তা অবগত নয় অনেকেই। তবে একটি কলেজ ছাত্র এবং মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক ঠিক সুলুক-সন্ধান দিয়ে দিলেন। ক্ষ্রেত্রভূমিতে গিয়ে দেখি বটুকেশ্বর দত্তের পিতৃগৃহ ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়। দেওয়ালের মাটি ছেড়ে পড়ছে, বাড়ির অপেক্ষাকৃত শক্ত দেওয়াল পড়শিদের ঘুঁটে দেওয়ার অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে। অন্যদিক আগাছায় ভরা দেওয়াল বেয়ে উঠে গেছে লতার বাহার।কার্নিশের টিনের জোড় দেওয়াল ছেড়ে শূন্যে অবস্থান করছে।স্থানীয় একজন সন্ধান দিলেন ‘বটুকেশ্বর স্মৃতি সঙ্ঘ’ নামে এক ক্লাবের, যেখানে পাওয়া যেতে পারে বটুকেশ্বরদত্ত ও তাঁর পিতৃগৃহের নানান খবরাখবর। অতএব ছুটলাম সেই ক্লাবে, বাড়িটির বর্তমান হালহকিকত জানতে।


সূর্য ডুবতে সামান্য কিছুক্ষণ বাকি তবে তার আগেই গ্রামের চারদিকের বাঁশঝাড়, ঝোপ ও বড় গাছের ছায়াঘন উপস্থিতিতে এখানে আঁধার নেমে এসেছে।পথিমধ্যেই দেখা হল ক্লাবের তৎকালীন প্রেসিডেণ্টের সঙ্গে, তিনি নিয়ে গেলেন ক্লাবে। জানালেন এ ভিটে সংরক্ষণে গ্রামবাসীদের চেষ্টা, বটুকেশ্বর কন্যা ভারতী বাগচীর এ ব্যাপারে আন্তরিকতা এবং নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথাও। শোনালেন বটুকেশ্বর সর্ম্পকীয় অজানা অনেক স্থানীয় তথ্য। তিনি জানালেন, আজই এই গ্রামে এসেছেন বটুকেশ্বর দত্তের এক নিকট আত্মীয়, তিনি উঠেছেন অমুকের বাড়িতে, একবার দেখা করতে পারেন। সেই ভর সন্ধেতেই হাজির হলাম সেই বাড়িতে। বটুকেশ্বর দত্তের জন্মভিটে নিয়ে আমাদের মতো তথ্য-সংগ্রাহক এবং সাংবাদিকদের এত আগ্রহ কেন, এমন কথা হজম করলাম।পারিবারিক মানুষটি যে আজ পারিবারিক চৌহদ্দি অতিক্রম করে জাতীয় বীরের জায়গায় আসীন শুধু এই কথাটি জানিয়ে বিনম্র চিত্তে বিদায় নিলাম। বটুকেশ্বর দত্তের স্ত্রী অঞ্জলি দত্ত এবং মেয়ে ভারতী বাগচী তখন পাটনায়, সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা।

বটুকেশ্বর দত্তের ভগ্ন বাড়ির খবর নিয়ে একটি প্রতিবেদন এই প্রতিবেদক কর্তৃক এই দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকাতে প্রকাশিত হয় ২৪ ডিসেম্বর ২০০০৪। সেই বাহ্যিক উত্তাপের শুরু। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি বড় হাউসের এই খবর একটু অন্য মাত্রা এনে দেয়। নড়ে চড়ে বসে সরকার। তবে এই পথ পেরুতে আরও সময় লেগেছে ছ’টি বছর। ২০১০ সালের ১৭ আগস্ট রাজ্য হেরিটেজ তালিকায় স্থান পায় বটুকেশ্বর দত্তের জন্মভিটে। ‘বটুকেশ্বর স্মৃতি সঙ্ঘ’ এবং স্থানীয় মানুষের লেগে থাকা প্রচেষ্টা এবং উত্তরোত্তর মিডিয়ার প্রচারে বটুকেশ্বর দত্তের জন্মভিটে সংস্করণের দাবি সোচ্চার হইয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে সরকারিভাবে ঘোষণা হয় সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ। অবশেষে সরকারি অনুদানে সংস্কারের কাজ শুরু হয় ২০১৫-২০১৬ সালে। ধীরে ধীরে তৈরি হয় মিউজিয়াম ঘর, তৈরি হয় ভগৎ সিং ও তাঁর আবক্ষ মূর্তি। কেননা ভগত সিং ও বটুকেশ্বর এই বাড়িতেই কিছুদিন ছিলেন, প্রতিবেশী নগেন্দ্রনাথ ঘোষ ও খগেন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়ির নিচে আন্ডারগ্রাউন্ডের নিরাপদ আশ্রয়ে। সময়কাল ১৯২৯সালের একেবারে প্রথম। তার কিছু আগে ঘটে গেছে লালা লাজপত রায়ের হত্যার প্রতিবাদে স্যান্ডোস হত্যা (১৭ ডিসেম্বর ১৯২৮)।মূল অভিযুক্ত ভগৎ সিং চলে এসেছেন কলকাতায় বটুকেশ্বরের সঙ্গে। আর এই বটুকেশ্বরই তাঁকে নিয়ে এসেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে, কলকাতা থেকে দেশের গ্রামে ওয়াঁরিতে।

বর্ধমানের ছেলে বটুকেশ্বর দত্তের সঙ্গে কীভাবে ভগৎ সিংয়ের বন্ধুত্ব ও বিপ্লবী কাজে যোগদান সেই প্রসঙ্গে যাওয়া যাক। আসলে বটুকেশ্বর দত্তের জন্ম ও বাড়ি অধুনা পূর্ব বর্ধমানের ওঁয়ারি হলেও বেড়ে ওঠা উত্তর প্রদেশের কানপুরে।তাঁর পিতা গোষ্ঠবিহারী দত্ত ছিলেন রেলের কর্মী। পিতার কর্মসুত্রে বটুকেশ্বরও থাকতেন কানপুরে। কানপুরের বেঙ্গলি মিডল স্কুলে পড়াশোনা করতেন। কানপুরের মল রোডে থাকাকালীন কিশোর বটুকেশ্বর খেয়াল করেন এই এই মল রোডে নেটিভদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা। কিশোর বটুকেশ্বর এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই মাঝে-মধ্যে ঢুকে পড়তেন সেই সংরক্ষিত এলাকায়। ঘটনাটি চোখে পড়ে স্থানীয় প্রেস মালিক গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থীর। গণেশ বিদ্যার্থীর সংবাদপত্রের (প্রতাপ) প্রেসটি ছিল বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘর, সেখানে শচীনন্দ্রনাথ স্যান্যাল, সুরেশ চন্দ্র, পাঞ্জাব ন্যাশনাল কলেজের অধ্যাপক জয়চন্দ্র বিদ্যালঙ্কার, বিজয় সিং নাহারের মতো বিপ্লবীদের গোপন আনাগোনা।গণেশ বিদ্যার্থী নিজেও একজন বিপ্লবী। এখানেই যোগাযোগ ঘটে বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে, ভগৎসিং তখন পাঞ্জাব ন্যাশনাল কলেজের পাঠ অসমাপ্ত রেখে অধ্যাপক জয়চন্দ্র বিদ্যালঙ্কারের যোগা্যোগে চলে এসেছেন কানপুরে। অবশ্য ভগৎ সিং তখন বটুকেশ্বরের কাছে বলবন্ত সিং। ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর ক্রমেই অভিন্নহৃদয় বন্ধু হয়ে ওঠে। ১৯২৪ সালে কানপুরের ভয়াবহ বন্যার সময় দুই বন্ধু ত্রাণকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। গঙ্গাতীরে গিয়ে অনেককে উদ্ধার করেন। রাতের বেলায় সারারাত গঙ্গাতীরে বড় লণ্ঠন নিয়ে নিশানা দেখাতেন যাতে ডুবন্ত প্রাণী বা মানুষ পাড়ের এমন আলোর দিশা পেয়ে তীরে চলে আসতে পারে। উভয়েই শচীন সান্যাল প্রতিষ্ঠিত হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন। এই সময়েই ঘটে এই রিপাবলিকান দলের নেতৃত্বে কাকোরী ট্রেনে সরকারি অর্থলুটের ঘটনা। শচীন সান্যাল, আসকাফঊল্লা খান, রোশন সিং, রাজেন লাহিড়ী, চন্দ্রশেখর আজাদ-সহ ৪৪ জন বিপ্লবী অভিযুক্ত হন।বটুকেশ্বরের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি না হলেও বিপ্লবী দলের সঙ্গে যোগসাজশ বাড়িতে জানাজানি হলে তাঁর বড়দা তাঁকে নিয়ে আসেন কলকাতায় (১৯২৬)। টেলারিংয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত হন।

কিন্তু কলকাতায় থাকাকালীন আবার যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তিনি ফিরে যান কানপুরে এবং বন্ধু বলবন্ত সিং তথা ভগৎ সিংয়ের সঙ্গী হন। কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলায় রিপালবিকান পাটির অনেকে গ্রেপ্তার এবং শহিদ হওয়ায় পার্টির ছন্নছাড়া অবস্থা হয়। এই অবস্থায় হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন ভগৎ সিংয়ের উদ্যোগে হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন (HSRA) নামে আত্মপ্রকাশ করে ১৯২৮ সালের ৮ ও ৯ সেপ্টম্বর ফিরোজ শাহ কোটলার সম্মেলনে ।চন্দ্রশেখর আজাদ নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। বটুকেশ্বর দলের অন্যতম সদস্য।এই সময়েই সাইমন কমিশন আসে ভারতে। সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। কমিশন দিল্লিতে এলে ভগৎসিং, বটুকেশ্বর এবং জয়দেব কাপুর সশস্ত্র হয়ে কমিশনের নাগাল পাওয়ার চেষ্টায় থাকেন, কিন্তু সুবিধা করতে পারেন না। এই সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের লাঠিচার্যে লালা লাজপত রায়ের মৃত্যু হলে অবশেষে ভগত সিং এবং চন্দ্রশেখর আজাদ স্যাণ্ডার্স হত্যার প্রতিশোধ নেন। এই অ্যাকশনে বিভিন্ন কর্মী বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। দায়িত্বে ছিলেন বটুকেশ্বরও। লালা লাজপত রায়ের হত্যার বদলা হিসেবে স্যান্ডোস হত্যায় ভগৎসিংয়ের সঙ্গে তাঁর নামও উঠে আসে। তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ প্রমুখের নামে, কেননা তাঁরাই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ভগৎ সিং সঙ্গী বটুকেশ্বরকে নিয়ে সেই রাতেই প্রথমে পাঞ্জাবের কালাম গ্রামে এবং পরে এই ওঁয়ারিতেই আশ্রয় নেন। ১৯২৯ সালের জানুয়ারির শেষ থেকে ফ্রেবুয়ারির প্রথম দিকে প্রায় ১৬ দিন এই ওঁয়ারির বাড়িতেই ছিলেন তাঁরা দু’জন। তবে তাঁরা এই সময় উভয়েই ভারতের বিপ্লববাদের অগ্রণী নেতা যতীন্দ্রনাথ ব্যানার্জী যিনি পরবর্তী কালে নিরালম্ব স্বামী হিসেবে পরিচিত তাঁর আশ্রমে যান। এই জেলারই নিকটবর্ত্তী চান্না গ্রামে তাঁর আশ্রম।

এই সময়কালেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্তভাবে আছড়ে পড়ছে শ্রমিক আন্দোলন, শুরু হয়েছে শ্রমিক ধর্মঘট। সাম্যবাদী চিন্তাও একটি নির্দিষ্ট রূপ লাভের অপেক্ষায়। দেশের এই ক্রমবর্ধমান আন্দোলনকে নির্মূল করতে সচেষ্ট হল ব্রিটিশ সরকার। তৈরি করে ‘পাবলিক সেফটি বিল’ ও ‘ট্রেড ডিসপিউট বিল’। এই দুই বিল পাস করে জনগনের সংহতি এবং বিদ্রোহকে দমন করার চেষ্টা করল ব্রিটিশ সরকার। সাধারণ জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও এই কালা কানুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ওঠে। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করে না। হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রতিরোধ কর্মসুচি গৃহীত হয়। ওঁয়ারিতে বসেই এ খবর পান বটুকেশ্বর ও ভগৎ সিং।

এদিকে পুলিশও তাঁদের এই অবস্থানের ব্যাপারে আঁচ পেতে থাকে। তাঁরা ওঁয়ারি পরিত্যাগ করে যোগাযোগ গড়ে তোলেন পার্টির সঙ্গে। ‘এই বিলগুলির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ, তা শুনতেই চাইছে না সরকার, তাদের কানে ঢোকাতে হবে’— এই প্রসঙ্গ তোলেন তাঁরা। সুতরাং এই দুই কালা কানুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দায়িত্ব তাঁদের উপর দেওয়া হোক, এমন দাবি তোলেন। এবং দাবি আদায়ে সমর্থ হন। এই দুই বিলের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিবাদ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯২৯ সালে ৮ এপ্রিল দিল্লির কেন্দ্রীয় বিধান পরিষদে ব্রিটিশ সরকার বিল দুটি বিশেষ ক্ষমতা বলে আইনে রূপান্তরিত করতে গেলে তাঁরা অধিবেশনের কিছু আগে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সাহেবি বেশে সংসদ কক্ষের দর্শকাসনে বসেন। এবং সভা আরম্ভের সঙ্গে সঙ্গেই ভিতরে বোমা নিক্ষেপ করেন। তাঁদের পরপর বোমার আওয়াজে কেঁপে ওঠে সংসদ কক্ষ। সকলেই প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু কাউকে মারতে নয়, তাঁরা বোমা ছুঁড়েছিলেন ফাঁকা জায়গা।

আসল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবাদ, এই বোমা ছিল ইংরেজ শাসনের উপর আঘাত।তাঁরা সংসদের কক্ষেই আওয়াজ তোলেন ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ এবং লিফলেট প্রচার করতে থাকেন। উল্লেখ্য এটাই ছিল ভারতের মাটিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইনকিলাব ধবনি। তাঁরা কাউকে হত্যা করতে চাননি, ‘বধিরকে জাগাতে গেলে সুঊচ্চ গলার প্রয়োজন হয়’, ফরাসি দার্শনিক বোলিয়েরের এই তত্ত্বকে সামনে রেখেই ছিল এই কর্মকাণ্ড। লিফলেট প্রচার শেষে তাঁরা নিজেরাই ধরা দেন। তবে তাঁদের উদ্দেশ্য ও প্রয়াস বিফলে যায়নি। আসমুদ্র হিমাচলে এই ঘটনা আলোড়ন তোলে, জনমানসে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও স্বাধীনতার স্পৃহা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় শোনা যাক স্বয়ং বটুকেশ্বর দত্তের কথা যা সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে— ‘নীতি নির্ধারণের বৈঠকে— সরদার এগিয়ে এসে তার নিশ্চিত মৃত্যুর সঙ্গে খেলার প্রস্তাব তুলল। সঙ্গে সঙ্গে আমিও। কয়েক বছর আগে কানপুরে গঙ্গার পারে বসে দু’জনে একসঙ্গেই আত্মাহুতি দেব— ভেবেছিলাম, তা রূপায়িত করার সময় এসে গিয়েছিল। আমরা দু’জন— সরদার ও আমি— বোমা নিয়ে আগ্রা থেকে দিল্লি পৌঁছে গিয়েছি। প্রায় এক মাস দিল্লিতেই ছিলাম। আমি হাফপ্যাণ্ট, কামিজ ও জুতো পরতাম আর সরদার তার সেই ছড়ানো টুপি পরে থাকত।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় খবরের কাগজে বোমা মুড়ে কোটের ভেতরের পকেটে রেখে আমরা অ্যাসেম্বলি ভবনে যেতাম, সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতাম। পাহারায় নিযুক্ত সান্ত্রীদের গতিবিধি দেখতাম আর ভাবতাম, ‘কীভাবে আমাদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারব’। এই সফল অ্যাকশনের পর তাঁরা ধরা দিলে পুলিশ প্রথমে তাঁদের দিল্লি জেলে রাখে। এই সময়ই তাঁরা কোর্ট চত্বরকে বিপ্লবী মতাদর্শ প্রচারের মঞ্চ ব্যবহার করেন। ৬ জুন তাঁরা এক বিবৃতিতেদের তাঁদের বক্তব্য পাঠ করেন। ১৯২৯ সালের ৬ জুন সেশন আদালতে বিচারকালে বটুকেশ্বর দত্তের বিবৃতি আজও কোন গণসংগ্রামের মাইলস্টোন হিসেবে চিহ্নিত। এই বিবৃতিতে বলেন— ‘মানুষের জীবনকে আমরা পবিত্র বলে মনে করি। এমন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আমরা বিশ্বাস রাখি যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি পূর্ণ শান্তি ও স্বাধীনতার সু্যোগ পেতে পারে।… মানবতার প্রতি আমাদের ভালোবাসা কারো চেয়ে কম নয়। কারোর প্রতি আমাদের ব্যক্তিগত দ্বেষ নেই। প্রাণীমাত্রকেই ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখে এসেছি আমরা’।

প্রতিবারই শুনানির সময় তাঁরা আদালত কক্ষকে স্বাধীনতার প্রচার স্থল হিসেবে ব্যবহার করতেন কখনো-বা ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’, ‘সরফরোসি কি তমন্না অব হামারে দিল মে হ্যায়’ গাইতে গাইতে কোর্টে আসতেন। বিচারে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হলে বটুকেশ্বরকে লাহোর সেন্ট্রাল জেল এবং ভগৎ সিংকে মিয়াওয়ালী জেলে একই গাড়িতে পাঠানো হয়। এই গাড়ির মধ্যেই তাঁরা জেলের কর্মসুচি ঠিক করে নেন।এরপরে বটুকেশ্বর দত্ত যতবারই আদালতে হাজির হয়েছিলেন ততবারই আদালত কক্ষকে স্বাধীনতা ও সাম্যের প্রচার স্থল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।

বলা হয়, জেল বা কারাগার হল একজন বিপ্লবীর পরীক্ষার চূড়ান্ত জায়গা। জেলে থাকাকালীন বিপ্লবী ভাবনাকে বাস্তবায়িত করেছেন বটুকেশ্বর। সেই সময় রাজনৌতিক বন্দীদের প্রতি অবমাননাকর আচরণ করা হতো। লাহোর জেলে বন্দীদের অতি নিম্ন মানের খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে রাজবন্দীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার প্রতিবাদে তিনি রাজবন্দীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলে আন্দোলন চালিয়ে যান। আন্দোলন শুরুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে শত শত দেশপ্রেমিক ছাত্র-যুবক জেলের সামনে বিক্ষোভ কর্মসুচি শুরু করেন। লাহোর সেন্ট্রাল জেলে রাজনৈতিক বন্দীদের মানবিক সুযোগ-সুবিধার জন্য তাঁর এই রাজনৈতিক আন্দোলন ভারতের মানবাধিকার আন্দোলনের এক দলিল। দাবি আদায়ের নিমিত্তে এই সময় তিনি অনশন শুরু করেন। তাঁদের সমর্থনে অন্যান্য বিপ্লবীরাও একত্রে মিলিত হয়ে অনশন শুরু করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক সংগ্রাম হিসেবে অনশনকে তুলে ধরা। লাহোর জেলেই তখন বন্দী ছিলেন বিপ্লবী যতীন দাস, যিনি ভাবতেন ‘শত্রুর সঙ্গে সম্মুখ লড়াইয়ে গুলির আঘাতে প্রাণ দেওয়া বা ফাঁসির রশিতে জীবন দেওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। অনশনে সংগ্রামীদের তিল তিল করে মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যেতে হয়। পিছু হটলে বিপ্লবীদের প্রতিষ্ঠা ধুলোয় লুটিয়ে পড়বে।’ ৬৩ দিন অনশনের পর সেই যতীন দাস শহীদ হন। এই অনশন কর্মসুচির ফলে বন্দীদের কিছু দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় সরকার। তবে লাহোর জেল থেকে তিনি নির্বাসিত হন আন্দামানে ।

১৯২৯ সালের জুলাই মাসে এই মামলায় যাবজ্জীবন চলাকালীনই লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি সাজা হয়। ফাঁসির প্রাক্কালে বটুকেশ্বর চিঠি পান ভগৎ সিংয়ের কাছ থেকে। চিঠিতে তিনি লেখেন– ‘তোমার থেকে আমার বিচ্ছেদ বেদনাদায়ক, কিন্তু এর থেকে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধিত হবে। ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দিয়ে আমি দুনিয়াকে দেখিয়ে দেব যে, বিপ্লবের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কেউ হাসতে হাসতে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারে। আমি তো মরে যাব, কিন্তু তুমি আজীবন কারাবাসের শাস্তি ভোগ করার জন্য বেঁচে থাকবে আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমি এটা প্রমাণ করে দেবে যে, বিপ্লবী নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আজীবন তিল তিল করে যন্ত্রণা সহ্য করে যেতে পারে। মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার থেকে তুমি বেঁচে গেছ। প্রাপ্য যন্ত্রণা সহ্য করে তুমি দেখাতে পারবে যে, ফাঁসির দড়ি, যা আলিঙ্গনের জন্যে আমি তৈরী হয়ে বসে আছি, সেই যন্ত্রণায় একমাত্র যন্ত্রণা নয়। বেঁচে থেকে বিপ্লবী সারা জীবন কষ্ট সহ্য করার শক্তি রাখে’। বটুকেশ্বর সেই জীবন-কষ্ট অবশ্য সারা জীবনই বয়ে বেড়িয়েছেন। দ্বীপান্তর অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন, টিউবারকিউলোসিসে আক্রান্তও হয়েছিলেন। মেজদা বিশ্বেশ্বর দত্ত প্রাণান্তকর চেষ্টা করে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্বীপান্তরের সময়কাল কমিয়ে নিয়ে আসেন। অবশ্য বটুকেশ্বরের ভগ্নস্বাস্থ্যও অন্যতম কারণ ছিল। সালটা ১৯৩৮। তবে জেল থেকে ছাড়া পেলেও বাংলা ও পাঞ্জাবে তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। এই সময় তিনি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও চিকিৎসার প্রয়োজনে কিছুদিন থাকেন দিল্লি হাসপাতালে, কখনো-বা জামশেদপুরে। দেওঘরে ও মতিহারি জেলে নজরবন্দী থাকেন। ১৯৪১ সালে এই নজরবন্দী থেকে মুক্ত হন ।

হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের তখন ছন্নছাড়া অবস্থা। পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে এলাহাবাদের আলফ্রেড পার্কে প্রাণ গেছে চন্দ্রশেখর আজাদের, ফাঁসি হয়ে গেছে ভগৎ সিং ও রাজগুরু সুখদেবের। হাল ছাড়া নৌকাকে কীভাবে স্রোতের বিরুদ্ধে উড়িয়ে যাবেন, এ চিন্তা তাঁর ছিল, বিশেষ করে দেওঘরে নজরবন্দী থাকাকালীন ভগৎ সিংয়ের লেখা চিঠি তাঁর হাতে আসে, যে চিঠিতে প্রিয় বন্ধু লিখেছিলেন ‘বটুকেশ্বর, আমাদের যাবার ঘন্টা শোনা যাচ্ছে, যে কাজ সম্পূর্ণ করতে পারলাম না তা তোমাকে করতে হবে। যাবার আগে তোমাকে একবার কাছে পেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু সুযোগ নেই, তাই অর্ধচক্ষে তোমাকে প্রাণ ভরে দেখে নিলাম। চন্দ্রশেখর চলে গেছে, রাজগুরু শুকদেবকে নিয়ে আমিও যাচ্ছি। আমাদের বিপ্লবী দলের প্রদীপ তুমি রইলে, তোমার উপর সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে গেলাম’। না, বটুকেশ্বর পারেননি এই সংগঠনকে চাঙ্গা করে ভগৎ সিং কল্পিত সত্যকারের স্বাধীনতা আনতে। শারীরিক দিক থেকে বিশেষ অসুস্থতা এর এক কারণ। ১৯৩৮ সালের পর থেকেই সহিংস বিপ্লবী রাজনীতির ধারাও ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পট পরিবর্তনও ঘটে। গান্ধীজির নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলন দেশ জুড়ে সাড়া ফেলে। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি অবশ্য নিস্ক্রিয় থাকেননি। স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ থেকে সরে যাননি, বিশেষ করে বিহারে পাটনায় ১৯৪২ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন। জয়প্রকাশ নারায়ণ গ্রেপ্তার হলে বিহারে এই আন্দোলনের দায়ভার তাঁর কাঁধে বর্তায় ।ফলে অচিরেই সরকার গ্রেপ্তার করেন তাঁকে। প্রথমে বাঁকিপুর, পরে হাজারীবাগ জেলে তিনি প্রায় চার বছর বন্দী থাকার পর ছাড়া পান। কিন্তু মাউণ্ট ব্যাটনের দেশভাগের পরিকল্পনায় তিনি ব্যথিত হয়ে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান।

রাজনীতি থেকে সরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মেজদা বিশ্বেশ্বর দত্ত এক প্রকার তাঁর অজান্তেই তাঁর বিবাহ ঠিক করে ফেলেন। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে পাত্রী আসানসোল নিবাসী সতীশচন্দ্র দাসের কন্যা অঞ্জলি দাসের সঙ্গে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এরপর সাংসারিক জীবন। কন্যা ভারতী দত্তের জন্ম। এই সময় সংসার চালানোর জন্য নানান ছোটখাট কাজে ব্যাপৃত ছিলেন তিনি। কিন্তু স্বাধীন সরকার তাঁর কথা মনে রাখেননি। এমনকি সরকারি স্কিমের আওতায় বাসের পারমিট পাওয়ার জন্য সরকারি আমলার কাছে তাঁকে অপদস্থও হতে হয়েছে। অবশ্য জীবনের শেষ সময়ে ১৯৬৩ সালে তৎকালীন বিহার সরকার তাঁকে বিধান পরিষদের সম্মানিত পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি এই অনুরোধ ফেলতে পারেননি। তবে বেশিদিন এই পদে থাকতে পারেননি। কেননা সভা চলাকালীনই তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসায় মেরুদণ্ডের ক্যান্সার ধরা পড়ে। পাটনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে দিল্লির মেডিক্যাল ইন্সস্টিটিউটে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় এবং সে অসুস্থতা থেকেই তাঁর মৃত্যু ১৯৬৫ সালের ১৯ জুলাই।

বটুকেশ্বরের রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রথমে তিনি সহিংস বিপ্লবী, পরে সাম্যবাদী চেতনায় উদ্দীপ্ত এক অগ্রণী যোদ্ধা এবং সেখান থেকে জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে তাঁর পরিসমাপ্তি। ভগৎ সিং যে স্বাধীনতা আনতে চেয়েছিলেন সেই স্বপ্নের স্বাধীনতা থেকে এ স্বাধীনতা অনেক দূরতর। ভগৎ সিং, রাজগুরু শুকদেব আজাদের মৃত্যু তাঁকে সারাজীবন ব্যথা দিয়েছে। বোমা নিক্ষেপ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিএম কাউল যিনি পরবর্তীকালের লেফটেন্যাণ্ট জেনারেল, দিল্লির হাসপাতালে তাঁকে দেখতে গেলে তাঁর ক্ষোভ বেদনা অক্ষমতার কথা গভীর দুঃখ ও আবেগের সঙ্গে বলেছিলেন।

অসুস্থ থাকাকালীন তাঁকে দেখতে এসেছিলেন ভগত সিংয়ের মা বিদ্যাবতী দেবী। বিদ্যাবতী দেবী তাঁর মধ্যেই ভগত সিংকে দেখতে পেতেন। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীও এসেছিলেন। ফিরোজপুরে সেখানেই বটুকেশ্বর তাঁর একটি ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। সে ইচ্ছা হল মৃতুর পর ভগৎ সিংয়ের পাশে যেন তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর এই ব্যক্তিগত ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন ভারত সরকার। মৃতুর পর ফিরোজপুরে ভগৎ সিংয়ের পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

বটুকেশ্বর জাতীয় বীর হিসেবে মর্যাদা পেলেও এ বঙ্গে প্রায় উপেক্ষিতই ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বটুকেশ্বর-চর্চা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি সংগঠিতভাবে বটুকেশ্বর স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছেন এলাকার মানুষ। গঠিত হয়েছে ‘বটুকেশ্বর স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি ও ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’। এই ট্রাস্টে আছেন সরকারি পদাধিকারী ব্যক্তিসহ অনেক বটুকেশ্বর-প্রেমী মানুষ। ‘বটুকেশ্বরস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি ও ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’-এর প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, বটুকেশ্বরের লেখা গল্প থেকেই ‘শহীদ’ সিনেমা যা ১৯৬৫ সালে ১৩তম National Film Award-এ পুরস্কৃত হয়, যদিও এই খবর সরকারিভাবে বটুকেশ্বরের পরিবারকে আজও জানানো হয়নি। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবছর ধরে ওঁয়ারি গ্রামে চলছে বটুকেশ্বর মেলা। ১৯ নভেম্বর বটুকেশ্বরের জন্মদিন উপলক্ষে বসে এই মেলা। এ বছর অনুষ্ঠিত হবে ১৮ থেকে ২০ নভেম্বর। ট্রাস্ট-এর প্রাপ্ত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, আগামী ৮ এপ্রিল ২০২৫ বটুকেশ্বর স্মৃতি সংরক্ষণের একটি বৃত্ত সম্পন্ন হবে। কেননা এই জন্মভিটেয় পর্যটন কেন্দ্রের রূপায়ণ মিউজিয়ামের উদ্বোধন এবং সার্বিক সৌন্দর্যায়নের মধ্য দিয়ে জনসমাগমের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে। দেরিতে হলেও এই মহান বিস্মৃত বিপ্লবীর কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।