• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বাচ্চাদের অসুখ রুখতে বড়দের করণীয়

আজকের ব্যস্ত জীবনে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। মনের অসুখ হলে লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসা করানো দরকার।

বাচ্চাদের মনের অসুখের কারণ একাকিত্ব

আজকের ব্যস্ত জীবনে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।  মনের অসুখ হলে লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসা করানো দরকার। এই ব্যাপারটা নিয়ে এই ব্যাপারটা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে ওয়াল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ ১৯৯২ সাল থেকে অক্টোবর মাসকে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ বছরে ‘young people and mental health in a changing world’ থিমের উপর ভিত্তি করে বিশ্বজুড়ে ছোটদের মনের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

বাচ্চাদের মন খারাপ বাড়ছে:

বাবা মা ব্যস্ত নিজেদের কর্ম জগতে। দাদু- ঠাকুমা থাকেন অন্য বাড়িতে।কাকা, পিসি বা মাসিরও অভাব। ছোট পরিবারের শিশুরা খুব একা হয়ে যাচ্ছে আর একাকীত্ব থেকে বাড়ছে মানসিক সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে যে বয়সন্ধির কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মনের অসুখ বাড়ছে। কুড়ি শতাংশ বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা যায় ১৪ বছর বয়সের মধ্যে ৫০ শতাংশ ২৪ বছর বয়সে ৭৫% মনের অসুখ ধরা পড়ে।৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের মধ্যে কোন না কোন সময় মানসিক সমস্যার শিকার হয়।বড়রা তা বুঝতে পেরে বকাবকি মারধর করলে সমস্যা বেড়ে গিয়ে আত্মহনন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে । বিভিন্ন মনের অসুখের মধ্যে আছে অ্যাংজাইটি,ডিপ্রেশন, ইটিং ডিজঅর্ডার, বাইপোলার ডিজঅর্ডার,স্কিৎজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনের অসুখের উপসর্গ হিসেবে চুপচাপ বসে থাকা ,চিৎকার-চেঁচামেচি, জিনিসপত্র ভাঙচুর, আত্মহত্যার কথা বলার চেষ্টা করা  ইত্যাদি দেখা যায় এমনকি স্কুলের সহপাঠীদের মধ্যে মারামারি হিংসা ও মারামারির প্রবণতাও বাড়ছে।

বাচ্চাকে মোবাইল দেবেন না

রিচি রিচ কে চেনেন?১২ বছরের এই বালককে আপনারা না চিনলেও কার্টুন চ্যানেলের দৌলতে বাড়ির বাচ্চাদের কাছে রিচি রিচ খুব বিখ্যাত। বিশ্বের ধনীতম বালকের একটি নিজস্ব উড়োজাহাজ আছে। মধ্যবিত্ত বাড়ির বাচ্চারা অনেক সময় রিচির সঙ্গে তুলনা করে  মা বাবার কাছে যা ইচ্ছে তাই  চায় ।মা-বাবার পক্ষে সব আবদার মেটানো সম্ভব নয়। ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে বাস্তব সমস্যা দিন দিন বাড়ছে ।বাচ্চা থেকে বড় সকলের মনের অসুখ এটি একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর থেকে বার করার দায়িত্ব অবশ্যই বাবা মা সহ কাছের মানুষদের। একই সঙ্গে স্কুলের একটা দায়িত্ব আছে তবে সবার আগে সচেতন হোন বাড়ির মানুষরা। বাবা-মা নিজেরাই যদি ইন্টারনেট অ্যাডিক্ট হন বাচ্চাকে সময় দেবেন কিভাবে? কাছের মানুষদের সঙ্গ না পেলে বাচ্চাদের সমস্যা হবেই। শিশু থেকে বয়স্ক সকলের মনের অসুখের পিছনে একটা বড় কারন একাকীত্ব।

বন্ধুর সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খেতে শেখান

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্কুলে যাওয়ার সময় মায়েরা বাচ্চাদের শিক্ষা দেন যে পুরো টিফিনটা যেন সকলের অলক্ষ্যে নিজে খেয়ে নেয়। বন্ধুদের ভাগ দিতে মানা করেন। আর এর থেকে শিশু বয়সের বাচ্চার মনে হিংসার বীজ বপন হয়। এজন্য কিন্তু বড়দের ভূমিকা নেহাত কম নয় ।বিশেষ করে ছোট থেকে বাবা মাকে যেমন আচরণ করতে দেখে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের আচরণের তার ছাপ পড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার মধ্যে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে চলার সূত্রপাত। এমনকি কোন সহপাঠী যদি তার থেকে এক-দু নম্বর বেশি পায় তাই নিয়েও অনেক মা-বাবা তুলনা করে বাচ্চাটিকে হেয় করেন, এমনকি মারধর করতেও দ্বিধা করেন না। এর থেকে কিন্তু বাচ্চাদের মনে হিংসার সৃষ্টি হবে। বাচ্চাকে ভালো মানুষ হতে শেখান,ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া কে জীবনের লক্ষ্য বেঁধে দিলে ভবিষ্যতে যে ভাল মানুষ হবে তা কিন্তু নয়। এছাড়া পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ দিলে পড়ার প্রতি অনীহা তৈরি হবে। এ কথা বোঝা উচিত বাচ্চাকে ভালো ব্যবহার পেতে হলে নিজেদের সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা দরকার ছোটদের সামনে কোন সহকর্মী বা বসের নিন্দা অথবা আত্মীয়দের সমালোচনা করবেন না। সব থেকে বড় কথা ছোটদের সবসময় একটা নিয়মের মধ্যে বড় করে তোলা উচিত। একমাত্র সন্তান হওয়ায় তাকে আদর দিয়ে মাথায় তুলবেন না। নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে বড় করে তুলুন। প্রতিটি মানুষকে সম্মান করতে শেখান, তবেই মনের সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হবে।