বর্তমানে আমরা সকলেই রঙ্গিন প্রসাধনী ব্যবহার করে। মাথার সিঁদুর, চোখের কাজল,ঠোঁট জুড়ে নানা রঙের লিপস্টিক। নখে পরি নানা রঙের নেইলপলিশ। পায়ে পরি আলতা।
আলতার ব্যবহার বাংলাদেশ এবং ভারত দুই জায়গাতেই আছে।
লাক্ষা থেকে তৈরি হতো আলতা
প্রাচীনকালে প্রসাধনীর উপকরণ এখনকার মতো কৃত্রিম হত না। তখন উপকরণ ছিল সামান্য এবং তা প্রকৃতি থেকেই নেওয়া হত। সেই সময় আলতা তৈরি হত লাক্ষা দিয়ে। অর্জুন বা পলাশ গাছে এক বিচিত্র রকম ক্ষত তৈরি হয়। সেই ক্ষতের মতো অংশ দিয়ে লাল রক্তের মতো রস ঝরে পরে। এই ক্ষতযুক্ত ডালগুলো থেকেই তৈরি হয় লাক্ষা। লাক্ষা হল লাল রঙের চটচটে আটার মতো বস্তু যাকে বাংলাভাষায় বলা হয় গালা। প্রাচীনকালে এই গালা থেকেই তৈরি হত নানা প্রসাধনী। আলতা থেকে শুরু করে লিপস্টিক সবই। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি প্রসাধনী ব্যবহার করত মেয়েরা। শরীরের জন্যও তা ছিল একেবারেই সুরক্ষিত ও স্বাস্থ্যসম্মত।
মেয়েরা আলতা কেন পরে?
এটি মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে, ভারতের পূর্ব প্রদেশগুলোতে যেমন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশায় ব্যবহার করা হয়। এটি পূজা, বিবাহ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেয়েরা পরে।
প্রতি বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পূজা করতেন মায়েরা। সেই সময় পুজোর দিনে নাপিত বৌয়েরা বাড়িতে আসত। তাঁরা বাড়ির মেয়েদের পা পরিষ্কার করে আলতা পরিয়ে দিত। বৌদ্ধযুগেও আলতার চল ছিল। প্রসাধনীর পাশাপাশি মঙ্গলের প্রতীক মনে করা হতো আলতাকে। মেয়েদের সামাজিক অবস্থানও দেখানো আলতা দিয়ে।
দুর্গাপূজার ষষ্ঠীর দিন মায়েরা পালন করেন আলতা ব্রত। পূজার সময় দেবীকে সিঁদুর আর আলতা নিবেদন করতেন তারা। আলতা-সিঁদুর সধবা মেয়েদের মঙ্গলের প্রতীক। দুর্গাপূজার প্রথম দিন ষষ্ঠী। এইদিন মায়েরা সন্তানের মঙ্গলের জন্য দুর্গা ষষ্ঠী পালন করতেন এবং পায়ে লাল আলতা পরে ব্রত পালন করতেন। ভারতের বিভিন্ন দেবী মন্দিরে পূজার থালিতে সিঁদুরের সঙ্গে আলতা, টিপ ইত্যাদি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে রীতি কিছুটা আলাদা। এখানে মেহেদীর চল বেশি। বিয়ের অনুষ্ঠানেও মেয়েদের মেহেদী দেওয়ার চল শুরু হয়েছে এখন। তবে বাংলাদেশেও এর চল আছে। লাল পাড়ের শাড়ির সঙ্গে লাল টিপ, কাঁচের চুড়ির আর পায়ে আলতা বাঙালি নারীর শাশ্বত সৌন্দর্য। আগের দিনে গাঁয়ের বধূরা আলতা পরে পালকি চড়ে নতুন সংসারে পা রাখত। আলতা শুধু প্রসাধনী নয়, তার কাব্য সুষমা নিয়ে নারীর সৌন্দর্য সৃষ্টিতেও মুখর।