একেবারে ছোটবেলায় যখন পয়লা বৈশাখকে ‘একলা বৈশাখ বলতাম’, পড়তাম- তারপর ভুল শুধরে ‘একলা’ মানে পয়লা পড়তে পড়তে বুঝতে শিখলাম, ততদিনে শৈশবের সেই ‘একলা’র দিনগুলি ক্রমেই ফিকে হতে লাগল। ‘একলা’ হল পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ, হালখাতার দিন। এলাে বাংলা নিউ ইয়ার। নতুন ফাশনের ডাক। হারিয়ে গেল সেই কচি বয়সের হালখাতা বা একলা বৈশাখ। পরিণত বয়সেও এসে বুঝেছি একলা বৈশাখের সঙ্গে বেঙ্গলি নিউইয়ারের কি বিস্তর অমিল হয়ে গেছে।
চোখে দেখা সামাজিক বিবর্তনের চারটি স্তর সুদীর্ঘ বয়সকালে উপলব্ধি করে এখন আর বছরের প্রথম দিনটি সেভাবে মােটেই সাড়া দেয় না। বাংলা বছরের মাস দিনক্ষণই এখন কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবাে না। দোকানপাটে সাজসাজ রব, আলাের ঝলকানি দেখে মনে হয় আজ বাংলা নববর্ষ, আধুনিক ভাষায় বেঙ্গলি নিউইয়ার ডে।
শৈশবের সেই নববর্ষের পারিবারিক যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে গতানুগতিকতায় দাঁড়িয়েছে। বাড়ির ইয়ং জেনারেশনকে দেখি আমাদের সেই স্বভাবসিদ্ধ ঐতিহ্যকে সরিয়ে দিয়ে নতুনভাবে নিজেদের মতাে করে বেঙ্গলি নিউ ইয়ার সেলিব্রেট করে। নতুন জেনারেশন, বাধা দেওয়া নেই, সকলেই অ্যাডাল্ট। কোন অধিকারে পুরনাে সিস্টেমকে আঁকড়ে ধরার ধৃষ্টতা দেখাবাে। আমরা তাে নিউ এরা’র কাছে আউটডেটেড! মন বলে, যুগকে মেনে নে, উদারপন্থী হ, সংস্কারে যাস না। ওরা যে নব্যসভ্যতার প্রতিনিধি! কোথায় ওল্ড স্কুল আর কোথায় নিউএজ হাংরি জেনারেশন। কফি হাউসে নভিস তরুণী স্মােকারদের দু-তিবার সিগারেট ধরিয়ে ফুক ফুক করে সিলিংয়ের দিকে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াবার এক্সিবিশন দেখে বােঝা যায় নব্য যুগ সমাগত, চুলােয় যাক যে যার মতাে হালখাতার দিনগুলি।
ছােটবেলায় দেখেছি আমাদের পাড়ার কাছে পয়লা বৈশাখের আগেই সংক্রান্তির মেলা হত। নাগরদোলা পুতুল আর কত কি খাবার-দাবার। জিলিপি, সিঙ্গাড়া, পাঁপড়, ফুলুরি, কটকটি, বোঁদে হালুয়া, পুরী, গজা ইত্যাদির সম্ভার। হারিয়ে গেছে বিভিন্ন জায়গায় সংক্রান্তিতে সং-এর মিছিল, শ্রীশ্রী চড়কপূজা (এখনও মানিকতলায় দেখা যায়) ইত্যাদি।
সেসময় কলকাতাস্থ পূর্ববঙ্গীয়দের মধ্যে দেখা যেত অল্প করে ভাত আগের দিন জলে ভিজিয়ে রাখা হত এবং পয়লা বৈশাখ মধ্যাহ্ন ভােজনের আগে বাসি ভাত মুখে দিয়ে অন্যান্য খাবার খেতেন। এই প্রথার কারণ বাংলা বছরের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আহার দিয়ে যােগাযােগ রাখা। ছােটরা সংক্রান্তির দিনে পয়সা পেত বাবাদের কাছ থেকে– মেলায় খরচ করার জন্য। একে বলা হতাে ‘গােলিয়ার পয়সা’। মেলায় সংক্রান্তির দিনে ভাই-বােনেরা বাবা-কাকার হাত ধরে যেতাম। লাট্টু, টেক্কা মার্কা রাবারের বল কিনতাম। আজ আর নেই নববর্ষের আগে শুরু হওয়া মেলা, বেলুন, কটকটি, ফুলুরি, ঘুঘনি ইত্যাদি। সে মেলাগুলিই হারিয়ে গেছে। নতুন যুগের আহ্বানে চৈত্র সংক্রান্তি বা নববর্ষের মেলা হারিয়ে গেছে। তার বদলে এসেছে নববর্ষ বা চৈত্র সেল। সেল-সেল-সেল।
পূর্ববঙ্গীয়দের বাড়িতে রেওয়াজ ছিল পয়লা বৈশাখের আগের চৈত্র সংক্রান্তিতে নিমপাতা বাটা দিয়ে সকলকে স্নান করতে হত। সংস্কারের আড়ালে বসন্ত রােগের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ প্রথা। সে নিয়ম আর নেই, নেই আর মহানগরীতে নিমগাছের বহুল প্রাপ্তি। বাংলা বছরের নতুন প্রথম দিন বলে কথা। নিয়ম ছিল বাড়ির আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই নতুন জামা জুতাে-স্যান্ডেল পরে নববর্ষ উৎসব পালন করবে। মা-ঠাকুমাও বাদ যেতেন না। নির্দিষ্ট বিপণীতে বাবার সঙ্গে যেতাম। হত কেনাকাটি। যৌথ পরিবার, তাই কেনাকাটি শুরু হত অনেক আগে থেকেই। কিছু কিছু দোকানের নাম এখনও চোখের সামনে ভাসছে। যেমন মধ্য কলকাতার কলেজ স্কোয়ার চত্বরে পাঞ্জাব উইভিং স্টোর্স, ইস্টবেঙ্গল সােসাইটি, ধর্মতলায় ওয়াছেল মােল্লা, কমলালয় স্টোরস, ফ্লেকস-এর জুতাে, কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে তাত শিল্প সংগঠন, ভবিচরণ দাস ইত্যাদি। জামা-জুতাে কিনতে ধর্মতলায় যেতাম ট্রামে চেপে, ফাস্ট ক্লাসে। কি রাজকীয় মনে হত। কি বড় বড় টিকিট। হাতে হাতে ঘুরত। ভাবলেও অবাক হতে হয় সে যুগে কমলালয় স্টোরের মতাে ডিপার্টমেন্টাল দোকান ছিল, যার সেলুন এবং রেস্টুরেন্ট ছিল। কি বিশাল দোকান। ধর্মতলায় এখন আর সেই দোকান নেই। কিন্তু বিল্ডিংয়ের নাম সকলেই জানেন।
বাংলা নববর্ষের আগে জামাকাপড় কেনার সেই ভিড় এখনও মনে পড়ে। খাটি বাঙালিয়ানা। ঠাকুরমার সাদা থান আর চাদর কেনা হত কাত্যায়নী স্টোরস থেকে। সবই বাধা দোকান, সারা বছর দরকারে এখানকার দোকানগুলি থেকে কেনা হত। গয়না কেনা হত গরাণহাটার বিশেষ দোকান থেকে। কর্মকার মশাই আবার বাঙাল ভাষায় কথা বলতেন। বেশ মজা পেতাম। ওঁর দোকানে গেলে ছােট কাঁচের গেলাসে বাবাদের জন্য চা আর আমাদের জন্য ‘এস’ বিস্কুট বরাদ্দ ছিল। সেই লােভেই বাবার সঙ্গে যেতাম! দোকানে পাহারাদার ছিল। মালিক বসতেন লােহার রড দেওয়া খাচায়। বিদায় বেলায় উনি সিঁড়ি অবধি এগিয়ে দিতে আসতেন। এই আতিথেয়তা বােঝার মতাে বয়স তখনও ছিল না। গল্পচ্ছলে মাঝেমধ্যেই ওনার মুদ্রাদোষ ‘হালা’ কথাটা বেরিয়ে আসত কেন তা মােটেই বুঝতাম না! পরে শুনেছি উনি ‘ঢাকা’র লােক।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে টগরমাসি একদিন আগে এসে ঠাকুমা বাদে সব মেয়েদের পায়ে আলতা পরাতে আসত আর নরুন দিয়ে ওঁদের নখ কেটে দিয়ে যেতেন। বেরােবার আগে ঠাকুমার পা ধরে নমস্কার করে মাথার উকুন বেছে দিয়ে পাট করে আঁচড়ে দিতেন। ওই মহলে পুরুষদের প্রবেশাধিকার ছিল না। দিদিদের পায়ে আলতা লাগিয়ে ছুটোছুটি দেখতে ভালাে লাগত। এমন পায়ের সৌন্দর্য আর দেখা যায় না সচরাচর। ‘শ্রীমতী’ আলতা সিদুরের সেই রমরমা আর কই কিংবা রাঙাজবা? সুগন্ধী মহাভৃঙ্গরাজ বা জবাকুসুম তেলের গন্ধ আর ম-ম করে না। দিদি-কাকীমাদের জন্য ‘কণক’ সেন্ট আর কাকারা একদিনের মহারাজ হওয়ার জন্য বিদেশি সেন্ট ‘তানাকা’। আসত আফগান স্নাে আর ‘হিমালয় বােকে’ সুগন্ধ পাউডার। বাবাদের চিত্তরঞ্জন-এর ধুতি, ফিনফিনে গিলে করা পাঞ্জাবি। মা-কাকীদের জন্য ‘দিলীপ জর্দা’। আমার মতাে ছােটদের হাওয়াই বুশ শার্ট আর খাদি প্যান্ট, ইলাস্টিক দেওয়া বেল্ট আর কাবলি জুতাে। দিদিদের জন্য হাঁটুর নীচ অবধি লম্বা ফ্রক। ঠাকুমার জন্য সেমিজ। মায়েদের জন্য কোড়া চওড়া পার শাড়ি। ব্লাউজওয়ালা বাড়িতে আসতে। হারিয়ে গেছে আরও কত কি সমৃদ্ধ একলা বৈশাখ। একলা বললে বড় খেপিয়ে বলতেন, ‘ওটা হবে পয়লা, একলা নয়’। পরে মাথা নীচু করে শুধরে নিয়েছিলাম।
বাড়ির সবাই কড়া শাসনে তাড়াতাড়ি উঠে স্নান সেরে একপাতা ঠাকুরের নাম লেখা মাস্ট। লিখে বড়দের দেখাতে হত। তারপর জিভে জল আনা পয়লা বৈশাখের স্পেশাল প্রাতঃরাশ। ফুলকো লুচি, আলুর দম, ফালা করে লম্বা বেগুনভাজা, জিভেগজা, দরবেশ।দুপুরে পঞ্চব্যঞ্জন, মাছ-মাংস, নকুড়ের মিষ্টি এবং লাল দই। কখনও সখনও কুলপিও আসত। দ্বিপ্রহরে বিশ্রাম। সন্ধে হতেই নতুন জামা পরে বাবা-কাকার হাত ধরে হালখাতা করতে যাওয়া— মােটা কাকুর মুড়ি-চিড়ের দোকান, শৈলেন কাকুর চালের দোকান, কেলাে কাকুর মুদির দোকান, মণিহারী দোকান হয়ে গরাণহাটা। যদি প্রতিযােগিতা হত তাহলে গরাণহাটা শীর্ষে। অমন দিনে অতি বিনয়ী আদিখ্যেতা আর আপ্যায়নের বিপুল সম্ভার দেখার মতাে। যাওয়া মাত্র বরফে চাপানাে কোকাকোলা তারপর বড় মিষ্টির বাক্স দিয়ে আপ্যায়ন এবং সবশেষে মালিক গলবস্ত্র হয়ে রাধাকৃষ্ণের ছবি আঁকা ঢাউস ক্যালেন্ডার বাবার হাতে গুঁজে দিতেন। অতবড় ক্যালেন্ডার আর কেউ করতেন না। বড় হরফে ১২ পাতার ক্যালেন্ডার পেতাম পেপার মার্চেন্ট রঘুনাথ দত্তের দোকান থেকে। ছােট বড় ক্যালেন্ডার, মিষ্টির বাক্স, ঠোঙায় মিষ্টিতে সবার হাত ভরে যেত। মনে হত ‘আরও চাই আরও চাই’।
এমন দিনে সবকটা দোকানই যেন পয়লা বৈশাখের হালখাতা উপলক্ষে ভােল পাল্টে ফেলত, মালিক সহ। যেমন মনে আছে মুদির দোকান বিখ্যাত কেলাে কাকু সেদিন যেন বহুরূপী সাজতেন। সম্বৎসর কালাে আলকাতরা খালি গায়ে তেল-চিটচিটে নােংরা লুঙ্গি পরে ওই মােটা শরীরে হ্যারা গলায় ব্যবসা করতেন। কেলােকাকু- পাড়ায় ছােটবড় সবারই কেলাে কাকুই ছিলেন। দোকানটাও তেমন আগােছালাে থাকত। আর এই দিনে উনি অন্যরকম! এক সাইজ বড় ঢোলা সাদা ফলস প্লেট ওয়ালা হাফ শার্ট বুকে ডবল ঘরের প্লাস্টিকের রঙিন বােতাম। তেল চিটচিটে মাথায় ভেজাভেজা চুল আঁচড়ানাে, যা বছরের অন্য কোনওদিন দেখা যেত না! এমনতর সর্বদা বিরক্তময় দোকানদার সেদিন যেন কোনও অজানা নাট্য নির্দেশক-এর ডাইরেকশন অনুযায়ী পােশাক থেকে আহ্বানে বিনয়ের অবতার। তার উপর অন্যভ্যস্ত পােশাকে দেখা। আপ্যায়ন করতেন গামলা ভর্তি দইয়ের সরবৎ ভাড়ে তুলে হাতে দেওয়ার মাধ্যমে। অদ্ভুত ‘কুল’ থাকতেন। সন্ধেবেলা এ দোকান ও দোকান করে ক্লান্ত হয়ে যেতাম। নতুন কাবলি জুতাে পরে পায়ে ফোস্কা পড়ে যেত। পরে জুতাে খুলে খালি পায়ে বাড়ি ফিরতাম। পরবর্তীকালে এমন পয়লা বৈশাখ, হালখাতায় যাওয়া, বাড়িতে ভালাে-মন্দ খাওয়াদাওয়া, নতুন জামার জৌলুস কেমন করে যেন হারিয়ে গেল।
ইদানীং সময়ে শৈশবের নববর্ষ চিন্তা করলে মনটা চাপা আর্তনাদে ডুকরে ওঠে। হারিয়ে গেছে বাড়িতে স্পেশাল ভূরিভােজ, হালখাতা, বাবার কিনে দেওয়া নতুন জামা-জুতাে, বছরের প্রথম সকালে একপাতা ঠাকুরের নাম লেখা, মিষ্টির বাক্স আর বাংলা ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করার প্রতিযােগিতা। সােনার দাকান ছাড়া আর তেমন করে কেউ বাংলা ক্যালেন্ডার করে না। বাড়ির বড়রা পঞ্জিকার সাহায্যে বাংলা ক্যালেন্ডার ম্যানেজ করেন। কোথায় হারিয়ে গেল হালখাতার সাজগােজ করা দোকানের অবাক করা আপ্যায়ন। নতুন জামা-প্যান্ট ইত্যাদি পােশাক কেনা হয় নিজের ইচ্ছেমতাে, বাবা-কাকা কোনও ফ্যাক্টর নয়। তাঁদের তদারকি বা ইন্টারফেয়ার করার সওয়ালই নেই। শাসন করলে ফ্যান বা মেট্রো রেল। ভূরিভূরি টাকা দিয়ে দাও, ইচ্ছেমতাে পশ্চিমী ফ্যাশনের ব্র্যান্ডেড মেটেরিয়াল কেনার প্রতিযােগিতা। আগে উল্লেখিত দোকানগুলি সবই হরপ্পান, অচল। এক জোড়া শু্যর দাম ২০ হাজার, শার্ট ৩ হাজার, প্যান্ট ৫ হাজার, সেন্ট ন্যূনতম ৩-৪ হাজার। তাছাড়া এসেছে নানারকম পারফিউম, সেন্ট, পাউডার, আইলাইনার, বিউটি পার্লার। নামেই উৎসে আছে বেঙ্গলি নিউইয়ার, কিন্তু পুরােটাই পশ্চিমী ঘরাণার। ওয়েস্টার্ন স্টাইল আউটফিট। এখন আর ঐতিহ্যময় দোকান থেকে নব্যযৌবন কিছু কেনে না, কেনে ক্যাটালগ, বিজ্ঞাপন এবং হিন্দি তারকাদের নকল করে। হারিয়ে গেছে সেসব ঐতিহ্যময় দোকানের পসরা, চাহিদা তলানিতে। উত্তর কলকাতা তবুও খাবার-দাবার, হালখাতা নিয়ে ঐতিহ্য রাখায় লড়াই বলবৎ রেখেছে। ঢাকাই পরােটা দখিণে মিলতে পারে কি তেমন করে? ঘরে বানানাে সরবৎ, পান্না তাে আউটডেটেড!
পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের প্রেসেন্ট চেঞ্জড স্ট্যাটাস হল : নমাে নমাে করে ব্রেকফাস্ট সেরে। ঠাকুরের নাম না লিখে বেরিয়ে পড়াে। হাঁক দিয়ে আউট – ড্যাডি বেরােলাম, লাঞ্চ বাইরে করবাে। চিন্তাকরােনা, আই উইল, ইফ নেসেসারি কিপ ইন টাচ। রাতেও খাবাে না, বাই। মা : তােরা ক্রেডিট কার্ড নিয়েছিস তাে? বাবা : দুগ্গা দুগ্গা — ভালােভাবে ফিরিস কিন্তু! ভালােভাবে যাতায়াত করবি, কোনও ঝুট-ঝামেলা-পুলিশি হস্তক্ষেপে যাবি না। দিনের বেলা না খাস, পয়লা বােশেকের দিন অন্তত রাত্তিরে এসে বছরের প্রথম দিনটিতে খা না বাবা। না বাবা দু’বেলাই নেমন্তন আছে। মল ঘুরে পার্ক স্ট্রিটে লাঞ্চ আর রাত্তিরে লাউডন স্টিটে ‘রেভ’ পার্টি। ওলা, উবের ধরে চলে আসব। নাে টেনশন।
সত্যিই পয়লা বৈশাখ বা নববর্যে বাড়ির সেই নতুনত্ব অভিনবত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে। কিছু করার নেই যুগের হাওয়া। আগে বিভিন্ন স্কুল, পাড়ার ক্লাব, বারােয়ারি পূজা কমিটি নববর্ষের দিনে প্রভাতফেরী হত। এয়ােতিরাও লালপেড়ে শাড়ি পরে শঙ্খ হাতে প্রভাত ফেরীতে যােগ দিত। যােগ দিত আঞ্চলিক পাড়াভিত্তিক ব্যান্ড পার্টিগুলি। রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজত। সেই অতীত সংস্কৃতি আজ ইতিহাস। ঘরে ঘরে আর পাঁচটা দিনের মতাে এই দিনটাও আমরা ভুলে গেছি। পয়লা বৈশাখের সকালে উঠে ওরুজনদের প্রণাম করা। বাঙালির এই দিনটি পশ্চিমী প্রভাবে বিপণন হয়ে গেছে। এখন মলগুলি বাদে পাঁচতারা হােটেলেও ‘বেঙ্গলি নিউইয়ার’ স্পেশাল ডিস হচ্ছে। অথচ সেই ডিস এককালে বাঙালির ঘরে ঘরে ছিল। হ্যাক হয়ে গেছে। ভাপা ইলিশ, পাবদা মাছর পাতুড়ি, শুটকি, কষা মাংস, পিঠেপুলি, পায়েস আদি নিয়ে পাঁচতারা হােটেলগুলি ডাকাডাকি করে আমাদের হেঁসেলের দখল নিয়েছে। হােটেলে যাবে না? খাবার পার্সেল হয়ে আসবে। পশ্চিমী ঘরাণায় পয়লা বৈশাখ পেতে গেলে কলকাতার মল হােটেলগুলি তৈরি। মা-কাকিদের স্পেশাল রান্না আজ হারিয়ে গেছে। ফিরে এসাে সেই পুরনাে অবুজ ভাবে জানা ‘একলা বৈশাখ’- এমন পয়লা বৈশাখ চাই না।