তৃতীয়বার মমতা সরকার ক্ষমতায় আসার পরই সােস্যাল মিডিয়ায় একটা পােস্ট ঘােরাফেরা করছিল ‘ভারত দিদিকে চাইছে’। বুধবার নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সেই আর্জিই জানালেন কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকায়েতরা।
এদিন রাকেশ টিকায়েত বলেন, মমতাজি বাংলাকে বিজেপির হাত থেকে বাঁচিয়েছেন, এবার দিল্লিতে বিজেপিকে হারিয়ে দেশকে বাঁচাতে হবে। উল্টোদিকে মুখ্যমন্ত্রীও এদিন বলেন, কৃষকদের দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলনের পাশে থাকব।
২০২০ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে মােদি সরকারের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষক সমাজের আন্দোলনকে প্রথম থেকেই সমর্থন দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিংঘু সীমান্তে আন্দোলনস্থলে ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলকে পাঠিয়েছিলেন। এরপর একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কৃষক নেতারা বাংলায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়েছিল।
বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের হ্যাটট্রিক করার পরে বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দিল্লি থেকে কলকাতায় আসেন কৃষক আন্দোলনের তিন প্রতিনিধি। এঁদের মধ্যে ছিলেন কৃষক আন্দোলনের মুখ রাকেশ টিকায়েতসহ অন্য দুই কৃষক নেতা অনুজ সিংহ এবং যদুবীর সিংহ।
কলকাতার কৃষক আন্দোলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অজিত সিংহ বারি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্যই কৃষক নেতারা এসেছেন। মঙ্গলবার বড়বাজারের গুরুদুয়ারায় রাত্রিযাপন করেন। কৃষক বিরােধী কৃষি আইন নিয়েও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলােচনা হয়।
তৃতীয়বার বাংলার ক্ষমতা দখলের পরেই তৃণমূল নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতিতে মনােনিবেশ করতে শুরু করে। মমতার সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের কৃষক সমাজের কাছে ইতিমধ্যেই একটা ভাবমূর্তি রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কৃষক আন্দোলনের পথ ধরেই জাতীয় রাজনীতির ময়দানে পা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার নবান্নে কৃষকদলের প্রতিনিধিদের তিনি আশ্বাস দেন, বিরােধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলব। জোট বেঁধে কী করা যায়, তা নিয়ে আলােচনা করতে হবে। আর আগে ২০১৯ সালেও অবশ্য ব্রিগেডে সব বিজেপি বিরােধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া র্যালি’ও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভােটের ফলে সেই জোট নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়। তবে তৃতীয়বার বাংলায় বিজেপির পরাজয়ের পরে অনেকটাই বেশি শক্তিশালী তৃণমূল সরকার।
দেশ থেকে গেরুয়া সরকার উৎখাত করার জন্য তাই সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরােধী ইউনিয়ন গঠনের ডাক দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে কেন্দ্রের টিকানীতি, কৃষি-কৃষক নীতি নিয়েও এদিন তােপ দাগেন মমতা। শিল্প থেকে কৃষি, সবকিছুতেই মােদি সরকার ব্যর্থ বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে মমতার কৌশলী বার্তা, যাঁরা বিজেপির পুরনাে লােক আছেন, যাঁরা পুরনাে ঘরানার মানুষ এবং যে সমস্ত যুক নেতা মােদিকে দেখে চলে গিয়েছেন, তারা ফিরে আসুন। এককাট্টা হয়ে হিন্দুস্তানকে বাঁচান, যুবকদের বাঁচান, শ্রমিকদের বাঁচান।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, মমতার নেতৃত্বে বাংলার জয়ে মােদিসহ গােটা বিজেপি শিবিরই ধাক্কা খেয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, মােদির যােগ্য প্রতিপক্ষ হতে পানে মমতা। কংগ্রেসের বহু বড় বড় নেতা থেকে বিরােধী নেতৃত্ব ২০২৪ সালে লাকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মুখ করে লড়ার পক্ষপাতী।
বিরােধীদের এই ইচ্ছের কথা অজানা নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। সেই লড়াইয়ের ক্ষেত্রের বীজতলা প্রস্তুত হল বােধহয় কৃষক আন্দোলনের প্রতিনিধিদের হাত দিয়ে। তাই বুধবার তাদের সাক্ষী রেখেই বিরােধী ইউনিয়ন গড়ার ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।