ভােটার তালিকাতে কেউ নতুন নাম তুলতে গেলে যেন তাকে হয়রান না করা হয়। অনেকের অনেক সময় নথি হারিয়ে যায়, সে যদি থানায় ডায়েরি করে ভােটার তালিকাতে নাম তােলাতে আসে তবে তাকে যেন নাজেহাল না করা হয়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডায়েরিও একবার হারিয়ে গিয়েছিল। সেই ডায়েরি কিন্তু পরে তাঁকে গীতাঞ্জলির জন্য নােবেল এনে দিয়েছিলাে পরিস্কার বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার শিলিগুড়ি উত্তরকন্যাতে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি উন্নয়নের প্রসঙ্গে বারবার তাঁর বক্তব্য মেলে ধরেন। বিভিন্ন জেলার আধিকারিকদের উন্নয়নের কাজে কোনাে ঢিলেমি না করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষ যাতে বিভিন্ন কাজে সরকারি অফিসে গিয়ে হয়রান না হন সে নির্দেশও দেন তিনি।
ভােটার তালিকায় নাম তােলার প্রসঙ্গে আলােচনা শুরু হলে এক আধিকারিককে সভার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, বলুনতাে ভােটার তালিকায় নাম তুলতে গেলে কতগুলাে নথি প্রয়ােজন? সেই আধিকারিক রেসিডেন্সিয়াল শংসাপত্র ছাড়া ছটি নথির মধ্যে চারটে প্রয়ােজন বলে উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে সংশােধন করে দিয়ে বলেন, আপনি বসুন, আপনি সঠিক তথ্য জানেন না। একটি নথি হলেই চলবে। কাজেই এনিয়ে কোনও বিভ্রান্তি করা যাবে না।
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, যে সব সংস্থার মাধ্যমে আগে এই সংক্রান্ত কম্পিউটারের কাজ করা হয়েছে তাদের বাদ দিতে হবে। এরা অনেকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেনি। দেখা গিয়েছে, কারও নাম ভােটার তালিকা থেকে বাদ। এটা ঠিক নয়। কাওকে নাজেহাল করা বা কারও নাম বাদ দেওয়া একটা অপরাধ। জনগণনা প্রসঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়েছেন। আশা বা আইসিডিএসের কর্মীদের এই কাজে লাগানাে যেতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমার বাংলাতে হিন্দু-মুসলমান-খ্রিষ্টান-শিখ-জৈন সবার বসবাস। সকলকে নিয়ে আমার বাংলা। কাজেই বাংলাতে যারা থাকেন তাদের সকলের নাম ভােটার তালিকাতে থাকবে। তবে কারও নাম কিষানগঞ্জ বা ইসলামপুর দুজায়গাতেই থাকবে তা হতে পারে না। আবার কারও নাম অসমে বা এরাজ্যে দুজায়গাতেই ভােটার তালিকাতে থাকবে তেমন ঠিক নয়। এসব নিয়ে নানা রকম ছলনা চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিনও তিন জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে পরিস্কার করে বলে দেন, এ রাজ্যে এন আর সি করার কোনও পরিকল্পনা নেই সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী এদিনের বৈঠকে কৃষি ছাড়াও স্বাস্থ্য সাথি কার্ড নিয়েও আলােচনা করেন। তফশিলী জাতির শংসাপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষ যাতে কোনওরকম হয়রানির শিকার না হন সেকথাও বলেছেন।
তার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সাথির আওতায় আরও বেশি করে লােকজনকে যুক্ত করার কথা বলেন। স্বাস্থ্য সাথি কার্ডের জন্য মাইকে প্রচারের পাশাপাশি লিফলেট দেওয়ার উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরজন্য একজন নােডাল অফিসার নিয়ােগ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কৃষকদের সমস্যা সমাধানের দিকেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। শিলিগুড়ির বিশ্ব বাংলা শিল্পী হাটে সােমবার বিকালে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেখানে কম স্টল দেখে অবাক হয়ে যান। মঙ্গলবার তিনি তা নিয়ে উন্নয়ন বৈঠকে আলােচনা করেছেন। শিল্পী হাটকে সাজানাের কথা বলেছেন। সেখানে একটি ক্যাফেটেরিয়া তৈরির কথাও বলেছেন। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী কার্শিয়াঙের রাজ রাজেশ্বরী হলে দার্জিলিং পাহাড়ের উন্নয়ন বৈঠক করবেন। লােকসভা ভােটের পর বহুদিন পর তিনি দার্জিলিং পাহাড়ে গেলেন।