নির্যাতন-পাচারের শিকার নারীদের সংবর্ধনা সপ্তমীতে

বিশেষ কোনো থিম বা আলোক-সজ্জা নেই, তবে মণ্ডপের ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে মানবিকতা। চলতি বছরে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ কলকাতার রাজারহাটের ড্রিম অ্যাপার্টমেন্ট পুজো কমিটির। কথায় বলে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কণ্ঠেও অনুরণিত হয় এই বাক্য। এবার সেই পথেই হেঁটেছে ড্রিম অ্যাপার্টমেন্ট পুজো কমিটি। যৌনপল্লী এবং নারী পাচার থেকে উদ্ধারকৃত ৫৫ জন নারীদের নিয়ে এবার উৎসবে শামিল হবে ড্রিম অ্যাপার্টমেন্ট পুজো কমিটি। নারী পাচার থেকে যৌন নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধের শিকার হওয়া নারীদের সংবর্ধিত করা হবে এই পুজো কমিটির তরফ থেকে।

তাঁদের অব্যক্ত যন্ত্রনা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার একটি মঞ্চ হিসাবেই আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে ড্রিম অ্যাপার্টমেন্ট পুজো কমিটি। পাশাপাশি আরজি কর আবহে নারী সচেতনতার বিষয়টিকে জোরদার করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটি। উল্লেখ্য, এই পুজো কমিটি কর্তৃক মহাসপ্তমীর শুভ সন্ধ্যায় আয়োজিত হবে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানেই যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া ৫৫ জন নারী উপস্থিত থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন এবং তাদের সংবর্ধনাও দেওয়া হবে।

ড্রিম অ্যাপার্টমেন্ট পুজো কমিটি একা নয়, বরং আনন্দ কেন্দ্র অনাথ আশ্রমের সঙ্গে একত্রিত হয়ে এই মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে। যৌথভাবে গৃহীত এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের উদ্দেশ্য, যৌন নির্যাতন এবং নারী পাচারের শিকার হওয়া নারীদের পুনর্বাসন করা। পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করে জীবনের ধারাবাহিকতাকে সচল রাখা। এখানেই শেষ নয়, ড্রিম অ্যাপার্টমেন্ট পুজো কমিটি এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বঞ্চিত নারীদের পোশাক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দান করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এই পুজো কমিটির সম্পাদক প্রবল আদ্য এবং অরুন্ধতী ব্যানার্জী জানিয়েছেন, ‘আমরা সবসময় তাদের সঙ্গে এই উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার কথা ভাবতাম, কিন্তু তা এতদিন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।


আমরা আনন্দিত যে সাধারণ মানুষ এই অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছায় সেবাদানে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। মানবতার বৃহত্তর পরিসরের দিকে আমরা এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি। সকলের সহযোগিতা মিললে আগামী বছরও এমন উদযাপন চালিয়ে যাবো।’ এবার প্রশ্ন হল, এই নারীদের পরিচয় কি প্রকাশ্যে আনা হবে? প্রসঙ্গত, ভারতীয় দণ্ডবিধি বা ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’-এর ২২৮ নং ধারা অনুযায়ী, ধর্ষিতা বা যৌন হেনস্থার শিকার নির্যাতিতার নাম, পরিচয় প্রকাশ্যে আনা দণ্ডনীয় অপরাধ। বর্তমানে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’র ৭২ নম্বর ধারাতেও বলা হয়েছে, কেউ যদি নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে আনেন, তাহলে জেল হতে পারে। এ প্রসঙ্গে প্রবল আদ্য এবং অরুন্ধতী ব্যানার্জীর বক্তব্য, ‘আমরা এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করার সময় তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণেই তাদের পরিচয় প্রকাশ করবো না।’ নিঃসন্দেহে, নারী ক্ষমতায়নের পদক্ষেপ হিসাবে ড্রিম অ্যাপার্টমেন্ট পুজো কমিটির এই উদ্যোগ সর্বত্র প্রশংসিত।