সংসদে ওয়াকফ আইন সংক্রান্ত সংশোধনী বিল পাশ হতেই সরব হয়েছেন রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজ। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও তোলপাড় হয়েছে। যার জেরে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের অন্যতম মুখ গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী যথেষ্ট বিব্রত বোধ করেন। গত কয়েক দিন ধরে কেন্দ্রের সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। বেশ কিছু প্রতিবাদ কর্মসূচিও করেছেন। তাঁকে এবার আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সিদ্দিকুল্লাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ওয়াকফ আইন জারি করতে দেওয়া হবে না’!
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার নয়া ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে কলকাতায় মৌলালি থেকে রামলীলা ময়দান পর্যন্ত সংখ্যালঘু সমাজের একটি মিছিল বের হয়। মিছিল শেষে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে সিদ্দিকুল্লা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাঁকে ফোন করে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, রাজ্যে ওয়াকফ আইন জারি করতে দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার মিছিল শেষে সংখ্যালঘু সমাজের মানুষকে অশান্তি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সিদ্দিকুল্লা। কেউ যাতে কোনও উস্কানিতে পা না দেন, সেই অনুরোধ করেছেন তিনি। তিনি রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
পাশাপাশি ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে এক কোটি মানুষের গণ স্বাক্ষরিত চিঠি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পাঠানো হবে বলে তিনি রাজ্যের সংখ্যালঘুদের আশ্বাস দিয়েছেন।
সম্প্রতি সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুরে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছড়ায়। একাধিক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। ওই সময়ে রাজ্যের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এমন কিছু পরিস্থিতি হয়নি, যার জন্য পুলিশকে এ ভাবে লাঠিচার্জ করতে হবে।’ জঙ্গিপুরে উত্তেজনার জেরে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি নদিয়ার নবদ্বীপেও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে একটি লরিতে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। পর পর এই অভিযোগগুলি আসার পর সংখ্যালঘুদের সংগঠন ‘জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ’-এর প্রধান মুখ সিদ্দিকুল্লা বলেন, ‘যাত্রিবাহী বাস ভাঙচুর হোক চাই না। কেউ ভাঙচুর করে থাকলে আমরা দুঃখিত।’
উল্লেখ্য, শুরু থেকেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে সংসদে সরব হয়েছে। এই বিল নিয়ে আলোচনার সময়েও সংসদে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল সাংসদরা। সংসদে বিলটি পাশ হয়ে যাওয়ার পরে গত শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পার্ক সার্কাস সাতমাথার দখল নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল একাধিক মুসলিম সংগঠন। ক্রমে সেই আঁচ ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের অন্যান্য সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নেতাজি ইন্ডোরের একটি সভা থেকে ওয়াকফ নিয়ে বাংলার সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ‘দিদি’ হিসাবে তিনি মুসলিমদের পাশে থেকে তাঁদের সম্পত্তি রক্ষা করবেন।