বছর পাঁচেক আগে বর্ধমানে জাতীয় সড়কের পাশে তৈরি হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ল্যাংচা হাব। কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বুধবার নবান্নে জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে এই খবর পাওয়ার পরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিলেন পূর্ব বর্ধমানের ল্যাংচা হাব তথা মিষ্টি হারের পুনরুজ্জীবনের দাওয়াই। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে আসানসোল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করেছিলেন বর্ধমানের মিস্টি হাব-এর। বর্ধমানের জাতীয় সড়কের পাশে তৈরি হয়েছিল ল্যাংচা হাব। বহু ল্যাংচা প্রস্তুতকারক সেখানে দোকান দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি যে বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন হয়েছিল সেখানে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যেও জি আই ট্যাগপ্রাপ্ত মিষ্টি হিসেবে ল্যাংচা নাম নথিভুক্ত ছিল। ফলে বিপণনের তালিকায় ল্যাংচা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
বুধবার নবান্নের বৈঠকে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান ল্যাংচা হাবের পরিস্থিতি নিয়ে। তখনই তাঁকে জানানো হয় ল্যাংচা হাব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ল্যাংচা হাব বন্ধ কেন?
জবাবে জেলাশাসক জানান, মিষ্টি হারে অনেকেই দোকান খোলেন না। তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে মিষ্টি হাব। আসলে বর্ধমানের মিষ্টি হাব উদ্বোধনের পরে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ধুঁকতে থাকে।
বিপণন মার খাওয়ার জন্যই মিষ্টি হাবের ব্যবসায়ীরা একের পর এক দোকানের ঝাপ বন্ধ করতে থাকেন। মিষ্টি হাবকে বাঁচিয়ে রাখতে রাজ্য সরকারের পক্ষে অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল।
খড়গপুর আইআইটি’র বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল, যাতে মিষ্টি হাবকে লাভজনক রূপ দেওয়া যায়। কিন্তু তাতেও মিষ্টি হাবকে বাঁচিয়ে রাখা যায়নি।
বুধবার এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানান, ল্যাংণ্ডা হাব বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের তরফে অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শক্তিগড়ে যেভাবে ল্যাংচার দোকান গড়ে উঠেছে তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিল না মিষ্টি হাবের ল্যাংচার স্টলগুলি।
জাতীয় সড়ক ধরে চলাচল করা সব গাড়িই স্টপেজ দেয় শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানে। সেজন্যই মিষ্টি হাবে খরিদ্দার হচ্ছিল না। ফলে মিষ্টি হাব কার্যত প্যাকেজিং হাবে পরিণত হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুধবার স্বীকার করে নেন, অনেকের দোকান রাস্তার ওপরেই আছে, তাই ওঁরা ভেতরে দোকান করতে চান না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওঁদেরকে বলুন, রাস্তার ওপরের দোকানটা যেমন আছে থাক। আর মিষ্টি হাবের দোকানটা দ্বিতীয় দোকান হিসেবে থাকুক। আর এই প্রস্তাবে রাজি না থাকলে যাঁদের মিষ্টি হাব দোকানের জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের কাছ থেকে দোকান ফিরিয়ে নেওয়া হোক।
অন্য ইচ্ছুকদের মধ্যে আগামী তিরিশ দিনের মধ্যে ফেরত পাওয়া দোকান বিলি করে দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ কার্যকর করার জন্য জেলা প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই দেখার।