• facebook
  • twitter
Wednesday, 23 April, 2025

সরকার যোগ্যদের পাশে থাকা সত্ত্বেও ডিআই অফিসে প্রতিবাদ কেন?

প্রশ্ন শিক্ষামন্ত্রীর

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ফাইল চিত্র।

চাকরি হারানোর প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ। প্রতিটি জেলায় ডিআই অফিসে অভিযান চালিয়েছেন চাকরিহারারা। কিন্তু কসবার ডিআই অফিসে ঘটেছে একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা। বুধবার এখানে চাকরি হারানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের কাছে মার খেতে হয়েছে চাকরিহারাদের। অভিযোগ, প্রতিবাদী শিক্ষিকাদের ওপরও লাঠি চার্জ করেছে পুলিশ। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। এরই মধ্যে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিষয়টি নিয়ে চাকরিহারাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, রাজ্য সরকার যখন যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে, তখন রাজ্যের প্রতিটি ডিআই অফিসে তাঁদের প্রতিবাদের কারণ কী?

তিনি বলেন, যখন কোনও শিক্ষকের বেতন বন্ধ হয়নি, বা কাউকে বরখাস্তের চিঠি দেওয়া হয়নি, তখন ডিআই অফিস অভিযান কেন? এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক মদত আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। বিষয়টিতে সংবাদ মাধ্যমের কোনও ইন্ধন আছেন কিনা সেবিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ব্রাত্য।

লাঠি চার্জ বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ-প্রশাসন কী করেছে বলতে পারব না। কিছু ঘটে থাকলে তা নিন্দনীয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও ডিআই অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন কী ছিল? কটা দিন আন্দোলন স্থগিত করা যেত না? এখনও পর্যন্ত কারও বেতন বন্ধ করা হয়নি। কোনও শিক্ষককে টার্মিনেশন লেটার দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জানিয়েছেন সর্বতভাবে চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন, তখন ডিআই অফিসে যাওয়ার প্রয়োজনটা কী?

এরপরই চাকরিহারা প্রতিবাদীদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শ, উসকানি ২৪ ঘন্টা থাকবে। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা হবে, তার মধ্যেও মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। তিনি ফের পরামর্শের সুরে বলেন, শিক্ষকদের ঠিক করতে হবে, তাঁরা সরকারের পাশে থাকবে, নাকি যাঁরা উসকানি দিচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে থাকবে। কারণ, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন এবং আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। তিনি প্রতিবাদীদের আরও একবার আশ্বস্ত করে বলেন যে, রাজ্য সরকার এবং শিক্ষা দপ্তর পুরোপুরি চাকরিহারাদের পাশে রয়েছে। সেটা তাদের বুঝতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। ইতিমধ্য়েই একজোট হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ প্রার্থীরা। ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা। গত ৭ এপ্রিল সোমবার, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের সঙ্গেই কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা দিয়েছিলেন, তিনি যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি যেতে দেবেন না।

ইতিমধ্য়েই ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬’ ব্যানারের নীচে একজোট হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ প্রার্থীরা। গত সোমবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের সঙ্গেই কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কথা দিয়েছিলেন – যোগ্য কারও চাকরি তিনি যেতে দেবেন না। তার জন্য আইন ও সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুসারেই পদক্ষেপ করবে তাঁর সরকার। তবে সেদিনও সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল বহু চাকরিহারা শিক্ষককে।

এদিন বিজেপি সাংসদ এবং হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অভিজিৎ যে ব্রাত্যের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন না, তা বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরেই ব্রাত্য অভিযোগ করেন, ‘আমরা অপেক্ষা করেছিলাম। কেন এলেন না জানি না, দল বারণ করেছে কি না আমি জানি না। দপ্তরে উনি জানিয়েছেন। উনি নিজেই আমার কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি জমা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে জানিয়েছেন, তিনি আসবেন না। কসবার ঘটনার প্রতিবাদে আসেননি, এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। শিক্ষা দপ্তর পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নয়। তা ছাড়া, এখানে এলেন না, কিন্তু এসএসসি দপ্তরে গেলেন? ওটাও তো সরকারি অফিস!’

শিক্ষামন্ত্রীর মতে, অভিজিতের না আসার নেপথ্যে ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এরপরেই বিজেপি সাংসদকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘উনি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিতে চাওয়ায় দলীয় রাজনীতিতে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হল কি না, দল ওঁকে বারণ করল কি না, সে সব উনিই বলতে পারবেন।’