কলকাতা, ১০ মার্চ: আসন্ন ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শীর্ষ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ফেলে দিল তৃণমূল। তাঁর বিরুদ্ধে একজন বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করল ঘাসফুল শিবির। ভারতীয় এই ক্রিকেটারের নাম ইউসুফ পাঠান। একদিকে পাঁচ দশকের অভিজ্ঞ একজন রাজনীতিবিদের দীর্ঘদিনের ভোটব্যাংক। আর অন্যদিকে একজন জনপ্রিয় ক্রিকেটারের অফুরন্ত ভক্ত। শেষ পর্যন্ত কে যে শেষ হাসি হাসবেন, তা বলা মুশকিল!
প্রসঙ্গত ইউসুফ পাঠান এখন শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন। তিনি গতকাল শনিবার রাতে কলম্ব থেকে মুম্বইয়ে আসেন। আজ রবিবার সকালে কলকাতায় পৌঁছন ব্রিগেডের সভায় যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেন হঠাৎ ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করল তৃণমূল? এই নিয়ে জানা গিয়েছে, ইউসুফের এই বাংলায় প্রার্থী হওয়ার নেপথ্যে অন্য কাহিনী আছে। সূত্রের খবর, বাংলার আর এক জনপ্রিয় ক্রিকেটারের স্ত্রীকে প্রার্থী করতে চেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু বাড়িতে রাজনীতি প্রবেশ করুক চাননি তিনি। তখন ইউসুফ পাঠানের নাম নিয়ে আলোচনা হয় তাঁর সঙ্গে। ওই ক্রিকেটার সম্প্রতি নবান্নে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি ইউসুফের নাম প্রস্তাব করেন। তারপরই তৈরি হয় পরিকল্পনা। ইউসুফের কাছে প্রস্তাব পৌঁছতেই তিনি এক কথায় রাজি হয়ে যান। রবিবার ব্রিগেডেই ইউসুফের সঙ্গে প্রথমবার কথা হয় মমতা–অভিষেকের। ব্রিগেডেই ক্রিকেটারের সঙ্গে আলোচনার পর এই প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হয় বলে সূত্রের খবর।
যদিও বহরমপুর থেকে টানা পাঁচবারের জয়ী সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। ২০১৪ সালে কংগ্রেসের যখন দুরবস্থা, তখনও বহরমপুরে ৩ লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন কংগ্রেস সাংসদ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে অধীর চৌধুরীকে হারাতে শুভেন্দু অধিকারীর উপর দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু কংগ্রেস থেকে বিধায়ক অপূর্ব সরকারকে ভাঙিয়ে এনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করেছিলেন। কিন্তু সমস্ত শক্তি উজাড় করে দিয়েও অধীর চৌধুরীকে হারাতে পারেননি। অধীর চৌধুরী প্রায় ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে যান।
এদিকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ইউসুফকে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করায় তিনি রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। আজ সামাজিক মাধ্যমে তিনি প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি জানান, ‘আমি চিরকালের জন্য মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ। যিনি আমাকে টিএমসি পরিবারে স্বাগত জানিয়েছেন। এবং পার্লামেন্টে জনগণের কন্ঠস্বর হওয়ার দায়িত্বে আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে, দরিদ্র ও বঞ্চিতদের উন্নতি সাধন আমাদের কর্তব্য। এবং আমি আশা করি সেটা অর্জন করতে পারব।’
অন্যদিকে এমন হেভিওয়েট প্রার্থী যে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে এটা একবারও ভাবেননি অধীর চৌধুরী। আত্মবিশ্বাসী অধীরবাবু তাই ইউসুফ পাঠান বহরমপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন শুনে হেসেছেন। আর এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ভালই হল তো। আমিও বিখ্যাত হয়ে যাব।’ অর্থাৎ অধীর চৌধুরী হারলে বা জিতলে দুটি ক্ষেত্রেই তিনি বিখ্যাত হবেন। কারণ ইউসুফ পাঠান ক্রিকেট তারকা। ভারতের নাম উজ্জ্বল করা ক্রিকেটার। গোটা বিশ্ব তাঁকে এক ডাকে চেনে। তাই তাঁর কাছে হারলেও বিখ্যাত হওয়া যাবে। জিতলে তো অবশ্যই বিখ্যাত হবেন।