নির্যাতিতার বিচার চাইতে শিশুদের কুরুক্ষেত্রের ‘কৃষ্ণ’ সাজিয়ে নামাচ্ছে বিশ্বহিন্দু পরিষদ

আরজি করের ঘটনা মানুষের মনে দাগ কেটেছে। গভীর প্রভাব পড়েছে মনস্তত্ত্বে। বিশেষ করে মহিলাদের। অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ যে যার মতো প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন। অনবরত আন্দোলন চলছে। কারোর হাতে প্লেকার্ড, কারোর হাতে মোমবাতি। কেউ এঁকে প্রতিবাদ করছেন, কেউ গান গেয়ে প্রতিবাদে স্বর মেলাচ্ছেন। অবশ্য প্রতিবাদের স্বর একটাই, ‘বিচার চাই’। ৮ থেকে ৮০ সবাই দোষীদের কঠোরতম শাস্তি চাইছেন।

কলকাতায় এরকম প্রতিবাদের ঢেউ এর আগে কখনও কেউ দেখেছেন কি না, তা মনে করতে পারছেন না-সাধারণ মানুষ। এর মাঝেই এবার অন্য রকমের প্রতিবাদে শামিল হতে চলেছে বিশ্বহিন্দু পরিষদ। দেশের সব রাজ্যেই জন্মাষ্টমীর দিন ‘কৃষ্ণ সাজো’ কর্মসূচি পালিত হবে।

আগামী সোমবার জন্মাষ্টমী। ওই দিনই আবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রতিষ্ঠাদিবসও। ৬০তম জন্মদিনে এবারে গোটা দেশে সব চেয়ে বড় সাফল্য অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়েও প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে পরিষদের। সেই উপলক্ষে গোটা দেশে তারা নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে। অবশ্য এরাজ্যে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, সেখানে নির্যাতিতার বিচার চাইতে অন্য রকমের প্রতিবাদের নামতে চলেছে তাঁরা। সেই দিনে ‘বিচার চাই’ দাবি নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছোটদের ‘কৃষ্ণ’ সাজিয়ে মিছিল করার পরিকল্পনা করছে তারা। পরিষদের পরিকল্পনা সফল হলে, সোমবার কলকাতা-সহ সব জেলায় ওই প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। সেই কর্মসূচিতে কোথাও সংগঠনের দফতরের সামনে ছোটদের কৃষ্ণ সাজিয়ে, কোথাও আবার সেই ছোট ছোট কৃষ্ণদের নিয়ে মিছিল করার প্রস্তুতি চলছে। তবে এই কৃষ্ণ ব্রজের নন। বরং তিনি ‘বীর’ এবং ‘নারীর সম্ভ্রম রক্ষাকারী’। তিনি কুরুক্ষেত্রের কৃষ্ণ। যে কৃষ্ণের এক হাতে সুদর্শন চক্র এবং অন্য হাতে পাঞ্চজন্য শঙ্খ রয়েছে। সেক্ষেত্রে সাংগঠনিক প্রচারের কর্মসূচির বদলে কৃষ্ণের মিছিল করতে চায় পরিষদ। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে সারা রাজ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।


শনিবার বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত গোটা দেশে নানা কর্মসূচি রয়েছে। তারই অঙ্গ হবে শ্রীকৃষ্ণের আহ্বান। ধর্মরক্ষার জন্য এখন তাঁকেই দরকার। সাধারণ মানুষের আন্দোলনে তাঁর শক্তিই প্রয়োজন। কারণ, মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করা হলে, তিনিই সহায় হয়েছিলেন। এখন নারীর সম্ভ্রমরক্ষার জন্য চাই জনতারূপী শ্রীকৃষ্ণকেই।’

অবশ্য কৃষ্ণের সঙ্গে রাধাকে চান না শচীন্দ্রনাথেরা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাঙালি শক্তির তুলনায় ভক্তিতে বেশি আশ্বাস রাখে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, তাতে রাধাকান্ত কৃষ্ণ নন, প্রয়োজন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে পথ দেখানো কৃষ্ণের। তাঁর সাধনা করতে হবে। এটাই আমরা বলতে চাই।’

শচীন্দ্রনাথ বলেন, ‘নীতিশিক্ষার জন্য ধর্মস্থাপন প্রয়োজন। আমরা জানি, ধর্ম সংস্থাপনের জন্য যুগে যুগে অবতার রূপে ভগবান আসেন। সেই ‘সম্ভবামি যুগে যুগে’ মন্ত্র নিয়েই আমরা ধর্ম স্থাপনার আন্দোলন চাই। যা হলে নারীর উপরে নির্যাতন, নারীর অসম্মান বন্ধ হবে।’

ওদিকে আরজি কর-কাণ্ড টেনে আনার ভাবনা রয়েছে পরিষদের। এবিষয় শচীন্দ্রনাথ বলেন, ‘গোটা দেশেই আমরা বাংলার কথা বলব। কী ভাবে সারদা মায়ের বাংলা এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর আমলে নারী নির্যাতনের নরক হয়ে উঠেছে, তা আমরা গোটা দেশকে জানাতে চাই।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, শুধু ‘বিচার’ চাওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নয়।