পঞ্চম দফার নির্বাচনেও অশান্তি এড়াতে পারল না নির্বাচন কমিশন। একশাে শতাংশ বুথে আধাসামরিক বাহিনী মােতায়েন থাকা সত্ত্বেও ভােটে ব্যাপক হিংসা ঠেকাতে না পারায় কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযােগ উঠেছে।
কোথাও বােমবাজি, বুথ দখল, ইভিএম ভাঙচুর, প্রার্থীদের আক্রান্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সােমবারের নির্বাচন পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। পঞ্চমীতে সাতটি কেন্দ্রের নির্বাচনে ব্যাপক হিংসার ঘটনায় উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের অবশ্য দাবি, ভােট শান্তিতেই হয়েছে। তবে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। চতুর্থ দফার নির্বাচনে অশান্তির ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সােমবারের নির্বাচনে সব থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তি এবং হিংসার ঘটনা কেন ঘটল, সেব্যাপারে দিল্লি থেকে রিপাের্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
সােমবার সকাল থেকেই ভােটপর্ব শুরু হতেই বারাকপুর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গােলমালের খবর আসতে শুরু করে। এদিন কমিশনের নজরে ছিল বারাকপুর কেন্দ্রটি। কিন্তু দেখা গেছে, বারাকপুর কেন্দ্রে ব্যাপক গােলমালের ঘটনা ঘটেছে। বিজেপির দুই প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং বারাকপুরের অর্জুন সিংসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফ আইআর দায়ের করা হয়েছে।
কমিশনের হিসাবমতাে সাতটি কেন্দ্রের নির্বাচনে মােট গড় ভােটের হার ছিল ৭৩.৯৭ শতাংশ। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁয় ৭৬.১৮, বারাকপুর ৭১.২৮, হাওড়া ৬৭.৫৯, উলুবেড়িয়ায় ৭৭.৫৭, শ্রীরামপুরে ৭৩.৩১, হুগলিতে ৭৬.১৪ এবং আরামবাগে ৭৫.৭৩ পড়েছে।
পঞ্চম দফার নির্বাচনে বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর অতিসক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আর এই বাহিনীর সক্রিয়তা নিয়ে কমিশন খোঁজ নিচ্ছে। এদিকে সাতটি লােকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কমিশনের সব থেকে নজর ছিল বারাকপুর কেন্দ্রটি নিয়ে। কেবলমাত্র বারাকপুর কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ ছিল সত্তর কোম্পানি বাহিনী। কিন্তু এই কেন্দ্রেই ব্যাপক গােলমালের ঘটনা ঘটে। নৈহাটিতে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। আর এই বারাকপুর কেন্দ্রে গােলমালের ঘটনা নিয়ে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী।
অন্যদিকে অর্জুন সিংও পাল্টা অভিযােগ করতে ছাড়েননি। শ্রীরামপুরের জগদীশপুরে বিজেপি-তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বেলা যত বাড়াতে থাকে, ততই বিভিন্ন এলাকা থেকে অশান্তির খবর আসতে শুরু করে। গয়েশপুর, তেঁতুলিয়া, মােহনপুর, বনগাঁ, হুগলি সহ একাধিক এলাকায় ব্যাপক অশান্তির ঘটনা ঘটেছে।
বনগাঁর হিংলিতে ব্যাপক বােমাবাজির ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বােমবাজিতে ১২জন জখম হয়েছে। মােট পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কমিশনের কর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন বলে জানা গিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাপক গােলমালের ফলে মােট ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অর্জুন সিং, লকেট চট্টোপাধ্যায় সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। জগদ্দল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নির্বাচনে বাহিনী থাকা সত্ত্বেও কেন এত গােলমাল তা জানতে চেয়ে আইজি বিএসএফেকে ডেকে পাঠানাে হয়।
কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালানাে থেকে শুরু করে ভুমিকা নিয়ে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ দফার নির্বাচনে বাহিনী দুটি এলাকায় গুলি চালিয়েছিল। হাওড়ায় তৃণমূলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাহিনীর সঙ্গে গোলমালের জেরে তিনিও নিগৃহীত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাহিনী লাঠিচার্জ করে। লাঠিচার্জে কয়েকজন জখম হয়েছেন। কমিশন এব্যাপারে প্রশাসনের কাছ থেকে রিপাের্ট তলব করে। তবে কোনও এফআইআর হয়নি।
অন্যদিকে হুগলির ধনেখালিতে ১৫৯ নম্বর বুথে ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিরােধীদের অভিযােগ, বিজেপি প্রার্থীর উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটেছে। হাওড়ার বালটিকুরি এবং উলুবেড়িয়াতেও গােলমালের ঘটনায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় অশান্তির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় ইভিএম বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও আক্রান্তের হাত থেকে রেহাই পাননি।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানাে হয়েছে, তারকেশ্বরের ১১০ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বনগাঁর একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁকে শাে-কজ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব জানিয়েছেন, হাওড়ার ২২৬ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর এবং ধনিয়াখালিতে ইভিএম ভাঙচুর করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। বিরােধীদের অভিযােগ, তাঁদের এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের এজেন্টদের বেলুড়ের লালবাবা কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযােগ ওঠে।
আইজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা জানিয়েছেন, গনেশপুর, বালটিকুরি, উলুবেড়িয়াতেও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কমিশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সিপিএমের পক্ষ থেকে প্রায় তিনশােটি অভিযােগ নিয়ে কমিশনের কাছে নালিশ জানানাে হয়েছে। তবে তাঁদের পক্ষ থেকে পুননির্বাচনের দাবি জানানাে হয়নি। অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে অর্জুন সিং সহ একাধিক প্রার্থীর উপর হামলার ঘটনায় কমিশনের কাছে নালিশ জানান হয়। শ্রীপ্রকাশ জাভরেকর বারাকপুর কেন্দ্রের সমস্ত বুথে পুনির্বাচনের দাবি করলেও রাজ্য বিজেপি নেতা ও জয়প্রকাশ মজুমদার কোনও মন্তব্য করতে চাননি।