আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ৬ এপ্রিল— পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের পাতে কোনোদিন এঁচোর চিংডি়, কোনো দিন শাক পোস্ত, তো কোনদিন ঢেঁড়স কোনোদিন পাঁচমিশালি সবজির তরকারি৷ ডিম ও অন্যান্য তরকারির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে রকমারি রান্না খাবার৷ আর পড়ুয়ারা সব আনন্দের সাথে মজা করে ও তৃপ্তিতে খাচ্ছে৷ আর এই সব সবজি তাদের নিজের স্কুলেরই সবজি বাগানে তারা নিজেরাই ফলিয়েছে৷ ছাত্র ছাত্রীদের উদ্যোগে এবং শিক্ষকদের সাহায্যে এই অসাধ্য সাধন হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের তিনটি সরকারি বিদ্যালয়ে৷
সরকারি ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্কুলকে কিচেন গার্ডেন করার জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছিল৷ তাতেই অনেক স্কুলই নিজদের স্কুলের মধ্যে করেছিলো” কিচেন গার্ডেন৷ ” এখন সেই বাগানে ছাত্র ছাত্রীরাই সবজি ফলাচ্ছে৷ যা নিয়ে চালানো হচ্ছে মিড ডে মিলের রান্না৷ পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের এরকম তিনটি স্কুলে এই চিত্র ধরা পড়লো৷ চৌবেরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাপানডাঙ্গা সাবিত্রী দেবী বালিকা বিদ্যালয় ও রেওরা প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ এই তিনটি স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্র ছাত্রীরা সকলে মিলে অতি যত্ন সহকারে নিজেদের স্কুলে তৈরি করেছেন কিচেন গার্ডেন৷ ফলিয়েছেন বিভিন্ন সবজি যা দিয়েই তারা ছোট ছোট বাচ্চাদের মিড ডে মিলে সবজির জোগান মিলছে৷
সাবিত্রী দেবী বালিকা বিদ্যালয়ে সবজি বাগানের সাথে রয়েছে কাঁঠাল গাছ৷ এই কাঁঠাল গাছের এঁচোড় দিয়েই বাচ্চাদের পাতে শিক্ষকরা দিতে পারছেন এঁচোড় চিংডি়৷ দুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফলানো হয়েছে বিভিন্ন শাক৷ খুদে পড়ুয়াদের পাতে দিচ্ছেন শাক পোস্ত৷ চৌবেরিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু সেনশর্মা বলেন তারা বিদ্যালয়ে সবজির বাগান করে সেখানে নানান ধরনের সবজি ফলিয়েছেন৷ সেই সবজি দিয়েই তারা মিড ডে মিল চালান৷ নিজেরাই সবজি বাগানের দেখাশোনা করেন৷ তিনি আরো বলেন নিজদের বাগানে ফলানো টাটকা সবজি ছাত্র ছাত্রীরা পায়, যাতে কোনো কীটনাশক দেওয়া থাকে না৷
রেওড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত কুমার ঘোষ বলেন বিদ্যালয়ের সবজির বাগানে সবজি ফলানোর ফলে ছাত্র ছাত্রীরা যেমন টাটকা, তাজা সবজি পায় তেমন তাদের বাগান তৈরির উপর একটা ঝোঁক তৈরি হয় যা তাদের ভবিষ্যতে অনেক কাজ দেবে৷ আর নিজেদের বাগানের সবজি রান্না করলে খরচও কিছুটা কমে৷ যার ফলে তারা কোনো কোনো দিন ছাত্র ছাত্রীদের স্পেশাল নিউট্রেশন হিসাবে অন্যান্য খাবার দিতে পারেন৷ পয়সা সাশ্রয় হওয়ার ফলে যেমন তারা আখের রস বাচ্চাদের খাইয়েছেন৷ সাবিত্রী দেবী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়তী আইচ মিত্র বলেন তাদের বিদ্যালয়ে সবজির বাগানের সাথে তারা বিদ্যালয়ে কাঁঠাল গাছ বসিয়েছেন৷ তাতে এখন অনেক এঁচোর ধরেছে৷ তাই দিয়েই তারা ছাত্রীদের এঁচোড় চিংডি় খাওয়াচ্ছেন৷ আর ছাত্র ছাত্রীরা প্রতিদিন খাবার মেনুতে নিত্য নতুন জিনিস পাওয়াতে খুবই মজা করে খাচ্ছে৷ জামালপুরের বিডিও পার্থ সারথী দে বলেন প্রতিটি বিদ্যালয়কে এ বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে যাতে কম বেশি সকলেই নিজেদের বিদ্যালয়ে কিচেন গার্ডেন করেন৷ এর জন্য সরকারি অনুদান ও পাওয়া যায়৷ তবে ব্লকের বিভিন্ন স্কুলে নিজেদের সবজির বাগানের সবজি দিয়েই মিড ডে মিল রান্নার ব্যাপারটায় তিনি বিদ্যালয়গুলোর প্রশংসা করেন৷ তিনি বলেন প্রয়োজনে তিনি নিজে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যাবেন কিচেন গার্ডেন দেখতে৷ জামালপুর ব্লকের দুই অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রাজেন্দ্র প্রসাদ মাজি ও অনিন্দিতা সাহা এই তিনটি স্কুলের যথেষ্ট সুনাম করেন ও বিদ্যালয় প্রশাসন কে ধন্যবাদ জানান৷ নিজেদের বিদ্যালয়ের সবজির বাগানের সবজি দিয়ে সুন্দর ভাবে মিড ডে মিল চালানোর জন্য৷ বলেন ব্লকের আরো অনেক বিদ্যালয়েই এরকম কিচেন গার্ডেন আছে৷ সারাবছরই বিদ্যালয়গুলির সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ রাখেন৷ তবে যদি প্রতিটি স্কুল যদি এই ভাবে নিজেদের স্কুলেই কিচেন গার্ডেন করে সবজি ফলিয়ে রান্না করে বাচ্চা দের খাওয়ায় তাহলে একদিকে যেমন বাচ্চারা টাটকা, তাজা সবজি পাবে যাতে কোনরকম বিষাক্ত কীটনাশক থাকবেনা, বিদ্যালয়ে বাগান হবার ফলে বিদ্যালয় হবে পরিবেশ বান্ধব ও খরচ ও কিছুটা সাশ্রয় হবে৷