• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

নাট্যনির্মাণে বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অনেকাংশে কমেছে,  আমরা অর্থের জন্য থিয়েটার করিনা : সোমনাথ বড়াল

নাট্যনিমার্ণে বুদ্ধিমত্তার দেখা মিলছে না আর৷ অতীতে যে ধৈর্য্য, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমে একটি নাটক প্রযোজনার কাজ সম্পন্ন করা হত তা বর্তমানে উড়ানের গতিতে হচ্ছে৷লোকসমাজকে বার্তা দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে থিয়েটারকে ব্যবহার করতেন সমাজ সংস্কারকরা৷ সেসময়ে জনসাধারনের উপর তার প্রভাবও ছিল তীব্র৷ কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের রুচি পরিবতর্ন হয়েছে৷

আজ থেকে প্রায় ২২৯ বছর আগে বাংলা নাটকের পথ চলা শুরু হয়৷ অতীতের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে বামপন্থী আন্দোলনে নাটকের ভূমিকা আজও অনস্বীকার্য। রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, নাটকে লোকশিক্ষা হয়৷ সমাজসংস্কারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থিয়েটার৷ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে নাট্যচর্চার ধরনও৷ অতীতের সেই চাকচিক্যে জমেছে বেশ খানিকটা ধুলো৷ নাট্যপ্রেমী দশর্কের সংখ্যা কমেছে অনেকখানি৷ এব্যাপারে অনেকে সিনেমাকে দুষলেও সিংহভাগ নাট্যব্যক্তিত্বদের বক্তব্য কিন্তু খানিক আলাদা৷ নাট্যনিমার্ণে বুদ্ধিমত্তার দেখা মিলছে না আর৷ অতীতে যে ধৈর্য্য, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমে একটি নাটক প্রযোজনার কাজ সম্পন্ন করা হত তা বর্তমানে উড়ানের গতিতে হচ্ছে৷ তখন নাট্য উপস্থাপনের উদ্দেশ্য ও ফলাফল ছিল অনেকখানি বিস্তৃত৷ লোকসমাজকে বার্তা দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে থিয়েটারকে ব্যবহার করতেন সমাজ সংস্কারকরা৷ সেসময়ে জনসাধারনের উপর তার প্রভাবও ছিল তীব্র৷ কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের রুচি পরিবতর্ন হয়েছে৷
 

রেডিও, সিনেমা, টেলিভিশন এবং বর্তমানে সমাজ মাধ্যম ক্রমান্বয়ে মানুষের বিনোদনের পরিসরকে নিজ দখলে রেখেছে। কিন্তু থিয়েটারের সেই স্বর্ণযুগে হয়েছিল সাংস্কৃতিক সংগ্রাম৷ ১৯৪২ -এর ভারত ছাড় আন্দোলন হোক কিংবা ১৯৪৩ সালের ভয়ঙ্কর মন্বন্তর, থিয়েটার পথ দেখিয়ে এসেছে আগাগোড়া৷ গড়ে উঠেছিল গণনাট্য সঙ্ঘ৷ এক নতুন সাংস্কৃতিক সংগ্রাম আর সেই সংগ্রাম থেকে জন্ম নেয় এক নতুন নাট্য ধারা, এক প্রকারের নাট্য আন্দোলন৷ পঞ্চাশ দশকে শম্ভূ মিত্রের ‘বহুরূপী’ আমাদের রবীন্দ্রনাথকে চেনালেন৷ ষাটে উৎপল দত্ত তাঁর লিটল থিয়েটার গ্রুপের ‘অঙ্গার’ নাটকের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। ষাটে আসেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পঞ্চাশ দশক থেকে তৈরী হয় নানা গ্রুপ থিয়েটার৷ বহু ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলা থিয়েটার৷

বর্তমানে থিয়েটারের গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এদিন ‘অযান্ত্রিক নাট্য সংস্থা’র নাট্যনির্মাতা সোমনাথ বড়ালের কথায় উঠে আসে নানা দিক৷ তাঁর কথায়, নাট্যনির্মাণে পরিচালকদের বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অনেকাংশে কমে এসেছে৷ বিষয়ের গভীরতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে৷ প্রকৃত অর্থে থিয়েটার করা শিল্পীদের সংখ্যা কমছে প্রতিনিয়ত৷ তবে হ্যাঁ, ভাল কাজ হচ্ছে৷ সংখ্যায় কম হলেও হচ্ছে৷

সিনেমার তারকাদের দিয়ে থিয়েটারে অভিনয় করানো নিয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা সম্পূর্ণ নাট্য নিমার্তাদের ব্যক্তিগত নির্বাচনের উপর নির্ভর করে৷ তবে পর্দার তারকদের দিয়ে মঞ্চে অভিনয় করালে তা বাণিজ্যিক সাফল্যতা পায় অনায়াসে৷ টিকিট বিক্রি হয় ‘হুহু’ করে৷ এক্ষেত্রে দশর্ক অভিনয় অপেক্ষা অভিনেতাকে দেখতে ভিড় করেন৷ এতে ভুল কিছু নেই৷ তবে থিয়েটার যাদের ধ্যানজ্ঞান, নাটক নিয়েই দিনরাত পড়ে আছেন যারা, তাঁদেরকেও সমান গুরুত্ব এবং সুযোগ দেওয়া উচিত৷

সম্প্রতি নাট্যদলগুলির প্রাপ্য সরকারি অনুদান নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন ও অভিযোগ উঠে আসছে। এই প্রসঙ্গে সোমনাথ বাবু বলেন, ” আমরা (অযান্ত্রিক নাট্য সংস্থা) অর্থের জন্য থিয়েটার করিনা৷ তবে হ্যাঁ, দল চালাতে অব্যশই অর্থের প্রয়োজন আছে৷ সরকার অনুদান দিচ্ছে ভাল কথা৷ অনেক দলের উপকার হয় এই অর্থে। কিন্তু অনেকেই আবার সবটা নিজের জন্য তুলে রাখেন৷ অর্থের হাতছানিতে থিয়েটার দল খুলে প্রকৃত নাট্যচর্চা সম্ভব নয়৷ থিয়েটার করতে গেলে অধ্যবসায় ও প্ররিশ্রমের প্রয়োজন হয়।”