সকাল থেকেই করিমপুরে ভােটের পারদ ছিল অনেক উঁচুতে। ৯৭ শতাংশ বুথে নজরদারিতে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবু বহু স্থানে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ছিল অশান্তির আবহাওয়া। একে অপরকে কালাে পতাকা দেখানাে, গাে ব্যাক জয়প্রকাশ ইত্যাদি ধ্বনিতে অশান্তির আবহ এক সময়ে চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
সকাল পৌনে ১০ টা নাগাদ সাহেবপাড়া স্কুলের জয়ঘাটা বুথে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, এখানে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই। তৃণমূলের ফুল ফুটবেই। পাল্টা জয়প্রকাশ বলেন, এরা সব তৃণমুলী গুণ্ডা। একসময়ে পুলিশকে লাঠিও চালাতে হয়। বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
সাত সকালে থানারপাড়া অঞ্চলের লক্ষ্মীপুরের ৩৯ নম্বর বুথে বিজেপির এজেন্টদের অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযােগ করেন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার। নদিয়ার জেলা শাসকের কাছে রিপাের্ট তলব করেন নির্বাচন কমিশনার। পরে কমিশনের প্রতিনিধিরা জানান, ওই এজেন্টরা নিজের বাড়িতেই বসে আছেন। তারা র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সাঙ্গে যেতে রাজি নয়।
সকাল ৮ টা নাগাদ থানারপাড়া থানার পিপুলখােলা বুথে বারবার ইভিএমের কাছে চলে যাওয়ার অভিযােগে কেন্দ্রীয় বাহিনী জয়প্রকাশকে বুথ থেকে বার করে দেন। তিনি ভােটারদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে এই বুথে তৃণমূল প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহরায় এসে কটাক্ষ করেন, ‘উনি মিথ্যে কথা বলতে ও নাটক করতে ভালােবাসেন’।
এদিকে গােটা দিন জুড়েই ভােটনাট্যের কুশিলব ছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে সােমবারের ভােটরঙ্গ। পুলিশ থেকে আধা সামরিক বাহিনী, সাংবাদিক সবাই ছুটে বেড়িয়েছে। পিপুলখােলার ৩৩ নম্বর বুথে জিয়াঘাট ইসলামপুর প্রাইমারি স্কুলে বিক্ষোভ ধাক্কাধাক্কি সবশেষে এক ব্যক্তির সজোরে লাথির আঘাতে পাশের জঙ্গলে ডিগবাজি খেয়ে পড়েন জয়প্রকাশ মজুমদার। জঙ্গল লাগােয় রয়েছে নয়নজুলি।
অভিযােগ বুথের পাশেই কিছু লােক রান্নাবান্না করছিল, তাদের কাছে মােবাইল ছিল। জয়প্রকাশবাবুর দাবি, রান্নার সাথে জটলা চলছিল। বুথে মােবাইল নিয়ে বসে আছে। আমি জানতে চাইলে আমাকে মারতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলে সাংঘাতিক ঘটনা ঘটতে পারতাে। প্রথমে রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই এই ঘটনা ঘটে। ধাক্কা ও পরে লাথি মারে। এ আঘাত গনতন্ত্রের ওপর মমতাবাহিনীর।
যেখানেই ওরা ভােট লুঠ করতে চাইছে আমি গেলেই গেল গেল রব উঠছে। বুথের পাশেই কুড়ি পাঁচিশ জন রান্না করছে। ওরাই পরে বেরিয়ে এসে মারে। বড়দি ওপরে আর তার নীচে ছােড়দি মহুয়া মৈত্র। এর জবাব মহুয়া মৈত্রকেই দিতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কার্যত তােপ দেগে জয়প্রকাশবাবু আরও বলেন, ‘আমাকে মারার পর কেন্দ্রীয় বাহিনী অ্যাকটিভ হয়। প্রথমে ইন্টারফেয়ার করলে এ জিনিস ঘটত না’।
জয়প্রকাশ নিগ্রহ নিয়ে তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি বলেন, বিজেপি প্রার্থী পরিকল্পিতভাবেই এটা করেছেন। আমরা ভােটদানে কাউকে বাধা দিইনি। উনি স্বাভাবিক অবস্থায় মায়ের ভােটদানকে শ্লথ করার চেষ্টা করেছেন। এজন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁকে বুথ থেকে বের করে দিয়েছে। ভােটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। করিমপুরে বিজেপির গােষ্ঠিদ্বন্দ্ব প্রকট হয়। গােষ্ঠিদ্বন্দ্বের শিকার উনি, নাহলে সহানুভূতি আদায়ের জন্য পরিকল্পিতভাবে টিভি চ্যানেল নিয়ে গিয়ে এসব করেছেন। হেরে যাবেন জেনেই সহানুভূতি কুড়ানাের চেষ্টা।
অন্যদিকে জয়প্রকাশ নিগ্রহের প্রতিবাদে কৃষ্ণনগর পুরসভার সামনে অবরােধ করে বিজেপি। নির্বাচন কমিশন নদিয়া জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে রিপাের্ট তলব করে। বিকেলে রিপাের্ট দিল্লিতে পৌঁছে যায় বলে খবর। বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী গােলাম রাব্বিও প্রক্সি ভােট নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযােগ জানিয়েছেন। বিজেপি নেতা মুকুল রায় নির্বাচন কমিশনে যান। তিনি নদিয়া জেলাশাসক ও এসপি’কে বরখাস্তের দাবি জানান।