১৩ নভেম্বর বাংলার ৬ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন রয়েছে। তার আগে রবিবার বঙ্গসফরে এলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যোগ দেন বনগাঁ সীমান্তে বিএসএফের এক অনুষ্ঠানে। সেখান থেকেই ফের বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিলেন তিনি। তবে উপনির্বাচন নিয়ে একটিও শব্দ খরচ করলেন না অমিত শাহ। তাঁর বক্তৃতায় একাধিকবার ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ উঠে আসে। তবে সরকারি অনুষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এদিন পেট্রাপোল সীমান্তে যাত্রী টার্মিনাল ভবন ও মৈত্রী দ্বার উদ্বোধন করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বনগাঁর অনুষ্ঠান মঞ্চে তিনি রাজ্যের সীমান্ত থেকে অনুপ্রবেশের ঘটনা নিয়ে সরব হন। পাশাপাশি, বিএসএফের সভা থেকে ঘাসফুল শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন অমিত শাহ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে বাংলায় বঞ্চনার অভিযোগও আনলেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার অশান্তির মূলে রয়েছে অনুপ্রবেশ। অনুপ্রবেশ বন্ধ হলেই বাংলায় শান্তি ফিরবে। ২০২৬ সালে বাংলায় পরিবর্তন আনুন। অনুপ্রবেশ রুখবে বিজেপি’। যদিও এ বিষয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলল তৃণমূল। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘অনুপ্রবেশ বন্ধ করার দায়িত্ব কার? অনুপ্রবেশের কথা অমিত শাহ বললে, এটা তো আত্মঘাতী গোল!’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত কে পাহারা দেয়? কোন মন্ত্রকের অধীনে? তাঁর মন্ত্রীর নাম কী? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই যদি বলেন অনুপ্রবেশ বাড়ছে তাহলে তো এর ব্যর্থতা তাঁর এবং সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বাহিনীর।’
রবিবার অমিত শাহ আরও বলেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলাকে কী দিয়েছেন মমতা? তৃণমূল তো কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে রয়েছে। কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাকে ২.৯ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। মোদী সরকার বাংলাকে গত ১০ বছরে দিয়েছে ৭.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু মোদীর দেওয়া টাকা বাংলায় এসে দুর্নীতির বলি হয়ে যায়। বাংলায় ‘অচ্ছে দিন’ আর বেশি দূরে নেই। আমরা বাংলাকে আরও উন্নত আরও সুজলা সুফলা করে তুলব।’ পাশাপাশি তাঁর কথায়, ‘২৬ এ আপনারা পরিবর্তন আনুন, বাংলার সার্বিক উন্নয়ন হবে।’
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় তৃণমূল সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে সরব হন। পুজোর মুখে বন্যার শিকার হয় বাংলা, সেখানেও কেন্দ্রের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। কিন্তু সেই দাবিকে এবার নস্যাৎ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে শাসকদল তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিজেপিকে বাংলায় নিয়ে আসার আর্জি জানান তিনি। এদিন বনগাঁয় ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, যাত্রী টার্মিনালের উদ্বোধন করে শাহ বলেন, ‘দেখতে ছোট জিনিস কিন্তু এটা প্রমাণ করে যে নরেন্দ্র মোদী কীভাবে কাজ করেন!’
রবিবার সল্টলেকে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। এদিন অনুষ্ঠান চলাকালীন মিঠুন জানান, গতবার বাংলায় বিজেপির ফলাফলে তিনি যথেষ্ট হতাশ হয়েছেন। এরপর তিনি বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কি ১ কোটি সদস্য সংগ্রহ করতে পারব? যদি পারি, ২০২৬ সালে বাংলার ক্ষমতায় আমরা থাকব।’ মিঠুন আরও বলেন, বিজেপিকে বাংলায় আসতে কেউ আটকাতে পারবে না। তাঁর কথায়, ‘আমাদের এমন কার্যকর্তা প্রয়োজন যারা মানুষের জন্য লড়াই করবেন, টাকার বিনিময়ে রাজনীতি করবেন না। আমি মৃত্যুমুখি রাজনীতি দেখেছি, নিজেও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। আমাদের ভয় দেখাবেন না। বিজেপির উপর আঘাত এলে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।’