রোগীর আত্মীয়দের হামলায় দু’লক্ষ টাকার ওষুধ নষ্ট

খায়রুল আনাম: একদিকে এক শ্রেণির চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা না দেওয়ার অভিযোগ আর অন্যদিকে যে কোনও তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনার জেরে বীরভূমের রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবায় যে বিঘ্ন ঘটে চলেছে তাতে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এই হাসপাতালেই চিকিৎসার গাফিলতির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এক রোগীর আত্মীয়কে বেআইনী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে শাসানী দিতে দেখা গিয়েছে। রোগীর আত্মীয়দের মারের হাত থেকে বাঁচতে আর সম্ভ্রম বাঁচাতে নার্সদের আলমারির পিছনে লুকনো থেকে শুরু করে সুন্দরী নার্সকে রোমিওদের ব্লেডের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে। আবার কর্তব্যরত নার্সদের বিরুদ্ধে রোগীকে পরিষেবা না দিয়ে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকার অভিযোগও করা হয়েছে।

এবার তিন দিনের মধ্যে একাধিক রোগীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রামপুরহাট মিডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিবেশ। গত ৩ আগস্ট নলহাটির কয়থা গ্রামের শেখ শুখচাঁদকে রামপুরহাট মেতিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করার পরে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান বলে তাঁর ছেলে শেখ রিপন অভিযোগ করেন। রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার পরে জানা যায়, অক্সিজেন সিলিণ্ডারে কোনও অক্সিজেন না থাকার কারণেই ওই রোগীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। এমন কী, সেই সময় কোনও চিকিৎসক ছিলেন না বলে অভিযোগ করা হয়।

আর এনিয়ে মৃতের আত্মীয়রা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে একশো জন চিকিৎসক চলে আসেন বলে অভিযোগ করা হয়। প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা থানার বড়টুলি গ্রামের রাজেন্দ্রপ্রসাদ চৌধুরীকে অসুস্থ অবস্থায় এনে এখানে ভর্তি করা হয়। ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছিলো ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে। সেখান থেকে রোগীকে হাসপাতালের অন্য বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ট্রেচার না পাওয়ায় ওই রোগীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় বলে অভিযোগকে কেন্দ্র করে চরম অশান্তি বাধে। অথচ এই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন রামপুরহাটের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার আবারও বিনা চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধলো রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।


জানা যায়, তারাপীঠ থানার শাসপুরে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ৩ আগস্ট আহত হন পাইকর থানার হাবিশপুর গ্রামের শেখ আনসারুল। তাঁকে এনে ভর্তি করা হয় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে। সেখানে তাঁর সিটিস্ক্যান করার কথা বলা হয় এবং রোগীকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, তারপর রোগীর আর কোনও চিকিৎসা না হওয়ার ফলে রাতেই শেখ আনসারুল মারা যান। তারপরই চিকিৎসার গাফিলতিতে শেখ আনসারুলের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে মৃতের বহু সংখ্যক আত্মীয় হাসপাতালে হাজির হয় এবং হাসপাতালের তিনতলায় মেডিক্যাল ওয়ার্ডের তিন তলায় ভাঙচুর চালিয়ে প্রচুর পরিমাণের জীবনদায়ী ওষুধ এবং আসবাবপত্র নষ্ট করে দেওয়া ছাড়াও চিকিৎসকদের পেটায় বলে অভিযোগ। এই হামলায় আসবাবপত্র ছাড়া দু’লক্ষ টাকার জীবনদায়ী ওষুধ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।

এই ঘটনায় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাস ৪০ জনের নামে পুলিশের কাছে এফআইআর করেন। তারপরই পুলিশ শেখ ফিটু, শেখ সাব্বির, শেখ সাহেব, শেখ হাসিবুল, শেখ অলিউল, শেখ উজির, শেখ মিঠু, শেখ আজিবুর, শেখ রাহুল, শেখ মাহিরুল ও শেখ রিঙ্কুকে গ্রেফতার করতে পারলেও অন্য অভিযুক্তরা বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। রামপুরহাট থানার পুলিশ ধৃতদের রামপুরহাট আদালতে হাজির করলে, আদালত শেখ ফিটু ও শেখ সাব্বিরকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজত ও অন্যদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মারধর-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার নিন্দা করে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। এই ঘটনায় এলাকার সাংসদ শতাব্দী রায়ের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পুলিশ পলাতক অভিযুক্তদের সন্ধানে জোর তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে।