আমরণ অনশনে আরজি করের দুই জুনিয়র ডাক্তারও

আরজি কর হাসপাতালকে ঘিরে তৈরি হওয়া আন্দোলনে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তাররা না থাকায় উঠতে শুরু করেছিল প্রশ্ন। এরই মাঝে রবিবার রাতে ধর্মতলার অনশনমঞ্চে বাকি অনশনকারীদের সঙ্গে যোগ দিলেন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার আশফাকউল্লা নায়ার ও অনিকেত মাহাতো।

১০ দফা দাবিতে শনিবার রাত থেকে ধর্মতলায় ‘আমরণ’ অনশনে বসেছেন ৬ জন জুনিয়র ডাক্তার। তাঁরা কেউই আরজি করের চিকিৎসব বা পড়ুয়া নন। রবিবার এই ছ’জনের সঙ্গে যোগ দিলেন আরজি করের ২ জন জুনিয়র চিকিৎসকও।

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে রবিবার দুপুরে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ। সেই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে এক ব্যক্তি লেখেন, ‘দাদা, ১০ জন যেতে বললে ৩৫ জন যাও, আর অনশনে মাত্র ৬ জন। তাও আরজি করের কেউ নেই। এই দ্বিচারিতা বন্ধ করে মানুষের পরিষেবা ঠিক মতো দেওয়া শ্রেয়!’ উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুকে ঘিরে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেখানে এই হাসপাতালের কেউ না থাকায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। তবে রবিবার সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অনশনকারী ৬ জন জুনিয়র চিকিৎসকের সঙ্গে যোগ দিলেন আরজি করের ২ চিকিৎসকও।


শনিবার যে ৬ জন অনশন শুরু করেছিলেন তাঁরা হলেন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের পড়ুয়া অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা মেডিক্যালের ইএনটি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট তনয়া পাঁজা, ওই একই কলেজের ক্যানসার বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট স্নিগ্ধা হাজরা, এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগের পড়ুয়া অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের প্যাথোলজি বিভাগের পিজিটি তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের পড়ুয়া পুলস্ত্য আচার্য।
রবিবার সারাদিন ধরে বৃষ্টির মধ্যেও আন্দোলনে অবিচল থেকেছেন আন্দোলনকারীরা। তবে সরকারের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি বলে জানা গিয়েছে। রবিবার সকালে অনশনমঞ্চে বায়ো টয়লেট আনা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এ নিয়ে পুলিশকে ইমেল করেন আন্দোলনকারীরা।

ধর্মতলায় অবস্থান বিক্ষোভ ও অনশনের অনুমতি পুলিশের তরফে দেওয়া হয়নি। পুজোর আগে ধর্মতলা চত্বরে ভিড় বেশি থাকায় এবং মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে যেতে সমস্যা হতে পারে বলে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনশনে বসেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের স্বচ্ছতার পাশাপাশি অনশনকারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে অনশনমঞ্চে সিসিটিভি বসিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।

রবিবার সকালে বায়ো টয়লেট নিয়ে অনশনমঞ্চে জটিলতা তৈরি হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে বায়ো টয়লেটের জন্য পুলিশকে ইমেল করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ বিভিন্ন টালবাহানা করে বলে অভিযোগ ওঠে। এর জেরে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ। এ প্রসঙ্গে রবিবার সকালে চিকিৎসক অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বায়ো টয়লেট নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে ভাবতেই পারিনি। আমরা বায়ো টয়লেট এনেছিলাম। কিন্তু পুলিশ জানায় এটা গ্রিন জোন। তাই বায়ো টয়লেট রাখা যাবে না। আপাতত আমরা কিছুটা দূরে গিয়ে একটি টয়লেট ব্যবহার করছি।’ টয়লেট ব্যবহার করতে দূরে যেতে হচ্ছে বলে সমস্যা হচ্ছে অনশনকারীদের। তবে দুপুরের দিকে জুনিয়র ডাক্তাররা নিজেরাই বায়ো টয়লেট তৈরির কাজে হাত লাগান।

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সমর্থনে তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গেল সিনিয়র
চিকিৎসকদেরও। পাশাপাশি  অনশনকারী ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন অন্যান্য জুনিয়র ডাক্তাররাও। দুপুরের দিকে এসেছিলেন আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ কিঞ্জল নন্দ, দেবাশিস হালদাররা। অনশন শুরু পর কত সময় অতিক্রান্ত হল তা ঘণ্টা হিসেবে বোর্ডে লিখে রাখা হচ্ছে। রবিবারের বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় খুলে গিয়েছিল মঞ্চের ত্রিপলের একাংশ। এরপর জুনিয়র ডাক্তাররা নিজেরাই ত্রিপল বাঁধার কাজে হাত লাগান। গোটা দিনে একাধিকবার
অনশনকারী ডাক্তারদের শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা হয়।