• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

শহরের উষ্ণতম দিন ছিল মঙ্গলবার, হিট স্ট্রোকে ঘটল মৃতু্য

নিজস্ব প্রতিনিধি — মঙ্গলবার ছিল শহরের উষ্ণতম দিন৷ শহরের রাস্তায় দেখা গেল পিচগলা রোদ্দুর৷ যদিও মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের গানের পংক্তি অনুযায়ী কেউই আমাদের ‘বৃষ্টির বিশ্বাস’ দিতে পারেনি৷ বৃষ্টি তো দূরস্থান, আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে সপ্তাহভর দাপিয়ে বেড়াবে তাপপ্রবাহ৷ আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আগামী ৫ মে -এর আগে পর্যন্ত তাপমাত্রা কমার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ এমনকী বৈশাখে সামান্য

নিজস্ব প্রতিনিধি — মঙ্গলবার ছিল শহরের উষ্ণতম দিন৷ শহরের রাস্তায় দেখা গেল পিচগলা রোদ্দুর৷ যদিও মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের গানের পংক্তি অনুযায়ী কেউই আমাদের ‘বৃষ্টির বিশ্বাস’ দিতে পারেনি৷ বৃষ্টি তো দূরস্থান, আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে সপ্তাহভর দাপিয়ে বেড়াবে তাপপ্রবাহ৷ আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আগামী ৫ মে -এর আগে পর্যন্ত তাপমাত্রা কমার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ এমনকী বৈশাখে সামান্য হলেও বৃষ্টির আগমনী শুনিয়ে যায় যে কালবৈশাখী, তারও আকাল এখন৷

এদিকে সোমবার রাতেই শহরে প্রথম হিট স্ট্রোকে মৃতু্যর ঘটনা ঘটল৷ সুমন রানা নামে বছর ছাব্বিশের এক যুবক প্রাণ হারালেন প্রচণ্ড গরমে৷ সোমবার মধ্য কলকাতায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি৷ বড়বাজার থানার পুলিশের তৎপরতায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়৷ হাসপাতালে ভরি্‌র্তও করা হয়েছিল তাঁকে৷ শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতেই তাঁর মৃতু্য ঘটে৷

আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বিগত কয়েক দশকের রেকর্ড ভেঙে মঙ্গলবার কলকাতার তাপমাত্রা ছুঁল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ রেকর্ড অনুযায়ী এর আগে ১৯৫৪ সালে এপ্রিল মাসে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল ৪৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এটাই কলকাতার সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড৷ এদিকে অর্ধেক বৈশাখ ফুরিয়ে গেলেও কালবৈশাখীর ঝড়ের দেখা নেই৷ অন্য বছর এই সময় অন্তত এপ্রিলের মধ্যে দু-একটি মধ্যদিনের রক্ত নয়ন অন্ধ করা কালবৈশাখীর দেখা মেলে৷ গত বছর এমন দিনে অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল কালবৈশাখী ঝড় হয়েছিল৷ কিন্ত্ত এবছর এপ্রিলের দহন যেন অসহনীয় হয়ে উঠল৷ একটানা প্রায় ছাব্বিশ দিন ধরে চলল তাপপ্রবাহ৷ গোটা এপ্রিল কেটে গেল ‘আকালবৈশাখী’তে৷ সামান্য ঝড় কিংবা বৃষ্টির ছিটেফোঁটারও দেখা মিলল না৷

মৌসম ভবন জানাচ্ছে, এপ্রিলের কলকাতায় অন্তত তিন দিন বৃষ্টি হয়৷ গড় বৃষ্টির পরিমাণ হয় ৫৫ মিলিমিটারের মতো৷ কিন্ত্ত এবার এপ্রিলে বৃষ্টি হয়নি বলেই চলে৷ ৮ এবং ১১ এপ্রিল যেটুকু বৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে ১১ এপ্রিলের বৃষ্টিই যা একটু মাপার মতো, ০.৫ মিলিমিটার৷ অর্থাৎ এপ্রিল মাসভর বৃষ্টিবিহীন বৈশাখীদিন হয়েই রইল৷

কিন্ত্ত কেন এমন বৈশাখী ঝড়ের আকাল হল? ক্যালেন্ডারে চৈত্রের শেষ থেকে বৈশাখের মাঝামাঝির মধ্যে কালবৈশাখীর দেখা মেলে৷ আবহবিদরা জানাচ্ছেন, কালবৈশাখী ঝড়বৃষ্টি হয় বঙ্গোপসাগর থেকে আসা ‘অ্যান্টি সাইক্লোন’ বা বিপরীত ঘূর্ণাবর্তের কারণে৷ বঙ্গোপসাগর থেকে ওই ঘূর্ণাবর্ত আমাদের রাজ্যে আসে৷ অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড-বিহারে একটা শুষ্ক তপ্ত বলয় তৈরি হয়৷ যা বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প টানে৷ বঙ্গোপসাগরের ওই বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত রাজ্যের ওপর দিয়ে বিহার-ঝাড়খণ্ডে ঢুকে ফের পশ্চিমবঙ্গের ওপর ফিরে আসে৷ ফলে এই সময় দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখীর আবহ তৈরি হয়৷ সঙ্গে বজ্রগর্ভ মেঘ আর বৃষ্টি নামে৷

বঙ্গোপসাগরে বিপরীত ঘূর্ণাবত তৈরি হচ্ছে না৷ যেটুকু তৈরি হচ্ছে, তা পড়শি বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে৷ বঙ্গোপসাগর থেকে আর্দ্রতা টেনে আনার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না৷ এদিকে পশ্চিম এবং উত্তর পশ্চিম দিক থেকে শুষ্ক এবং তপ্ত হাওয়া সাহারা মরুভূমির দিক থেকে ক্রমাগত ঢুকছে রাজ্যে৷ ফল বাংলার চেনা প্যাচপেচে গরমের বদলে মরু রাজ্যের মতো শুকনো গরমের হলকা আর লু’তে দগ্ধ হচ্ছে বাংলা৷

তবে আশার কথা এই যে, কিছুটা সক্রিয় হয়েছে হিমালয়৷ উত্তর দিকে থেকে ঠাণ্ডা বাতাস নীচে নামছে৷ আবহবিদদের ধারণা, হিমালয়ের ওই ঠাণ্ডা বাতাসের প্রভাবে পশ্চিমা বাতাসের মুখ ঘুরবে৷ কমে যাবে বাতাসের স্তরের তাপমাত্রা কমবে, গরম ও বাষ্পপূর্ণ বাতাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মেঘ জমার পথ সুগম হবে৷ যার প্রভাবে মে মাসের ৫-৬ তারিখ নাগাদ দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রায় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷