রাজ্যজুড়ে বিজয়া সম্মিলনী পালনের  সিদ্ধান্ত তৃণমূলের, সূচনা আজ থেকে

আরজি কর-অভিঘাত থেকে বেরিয়ে এসে বৃহস্পতিবার থেকেই বিজয়া সম্মিলনীতে দলকে পুরোদস্তুর জনসংযোগে নামাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। দলীয় কর্মসূচির অতীত বলছে, সাধারণত উৎসবের মরশুমে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি রাখে না তৃণমূল। বরাবর এটাই ‘ট্র্যাডিশন’। জনসংযোগ এবং নিজের এলাকায় উৎসবে যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা দেখতেই সক্রিয় থাকেন দলের ছোট, বড় এবং মাঝারি নেতারা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা বেসামাল। নভেম্বরেই রাজ্যের ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন রয়েছে। সুতরাং, চলতি মাসে শাসকদলের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম ‘জনসংযোগ’।

এই অবস্থায় দলকে জনসংযোগ কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কলকাতা সহ ৭টি জেলায়  বিজয়া সম্মিলনী  পালিত হবে। বীরভূমের মুরারই ১ ও ২ অঞ্চলে হবে এই অনুষ্ঠান। তাছাড়া  পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ, পূর্ব বর্ধমানের কালনা ১, উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর, টিটাগর ও মিনাখাঁ ১, দক্ষিণ কলকাতার ১৩২ ও ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়া সম্মিলনী পালিত হবে। প্রতিটি অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকছেন একজন করে স্থানীয় নেতৃত্ব । এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার প্রাক্তন সাংসদ তথা রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘পুজো-উৎসবের মরশুমে এবার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী, সদস্য, সংগঠক, জনপ্রতিনিধি-সহ গোটা পরিবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে বিজয়া সম্মিলনী পালনে নেমে পড়ছে।’

নিবিড় জনসংযোগই এবার বিজয়া সম্মিলনীর অন্যতম লক্ষ্য বলেও জানান কুণাল। তিনি আরও বলেন, ‘বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প ও ভাল কাজগুলিকে মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে। এর পাশাপাশি মানুষের যদি কোনও প্রস্তাব থাকে সেসবও শোনা হবে। বিরোধীরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যে কুৎসা ও চক্রান্ত শুরু করেছে সঠিক তথ্য তুলে ধরে দলীয় কর্মীরা তার জবাব দেবেন। সেই সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতিটাও তুলে ধরা হবে।  ওই সমস্ত বিষয়ে সিপিএম আমলে কী হয়েছিল, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে কী হচ্ছে, সেসবও তথ্য সহকারে মানুষকে বোঝাতে হবে। আগামী দিনে বাংলার সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস কী ভাবনা-চিন্তা করছে তাও বিস্তারিত ভাবে বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে তুলে ধরবেন দলের কর্মীরা।’


দলীয় সূত্রে খবর, এই মঞ্চেই জনসমর্থনের প্রমাণ দিতে দলে যোগদানের ব্যবস্থাও রাখার কথা ভাবা হয়েছে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘বিজয়া সম্মিলনী দলে নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই হয়। এবার সেই মঞ্চে দলে যোগদানের কথা ভাবা হয়েছে। নির্বাচনের পর থেকে বহু মানুষ যোগদানের ইচ্ছা জানিয়েছেন। বাছাই করে দলে নেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, বিজয়া সম্মিলনীকে সামনে রেখে জনসংযোগ এবারই কিন্তু প্রথম নয়। গত কয়েক বছর ধরেই দলের জনসংযোগ কর্মসূচিতে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানগুলি।

আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দলের একাধিক বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম, বীরভূম। স্থানীয় নেতারাই অংশগ্রহণ করবেন এই অনুষ্ঠানে। সুতরাং, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল যে কেন্দ্রবিন্দু হবেন তা বলাই বাহুল্য। দক্ষিণ কলকাতার বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে এই অনুষ্ঠানে থাকবেন বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। আজ বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে পশ্চিম এবং পূর্ব বর্ধমানেও।

তৃণমূল সূত্রের খবর, এই অনুষ্ঠানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হতে চলেছে, দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের প্রাধান্য দান। প্রত্যেক অঞ্চলেই এবার বিজয়া সম্মিলনী উদযাপনের মাধ্যমে দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা দেবে তৃণমূল। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তালিকায় রয়েছেন দলের একনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরাই। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার থেকেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, দলের সক্রিয় নেতা-কর্মীদের যেমন পুরস্কৃত করা হবে তেমনই দলের নিষ্ক্রিয় কর্মীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করা হবে। অভিষেক-বার্তার প্রতিফলনের আঁচ তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে। সূত্রের খবর, ন্যূনতম ৫-১০ জন পুরনো, একনিষ্ঠ কর্মীদের সংবর্ধনা দেবেন প্রত্যেক পুর এলাকার পুর-প্রতিনিধিরা। এছাড়াও লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা ভাল কাজ করেছেন, তাঁদেরও অনুষ্ঠানে সম্মানিতও করা হবে।