উপনির্বাচনের পরেই লড়াকু নেতাদের গুরুত্ব দেবে তৃণমূল

ফাইল চিত্র

বিধানসভা উপনির্বাচনের পর পরই সাংগঠনিক স্তরে বড়সড় রদবদল করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কমবেশি ১৫টি জেলার সভাপতি ও অন্য সাংগঠনিক স্তরে পরিবর্তন করা হতে পারে। সেই তালিকাও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। এই তালিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলীয় স্তরে আলোচনা চলছে। তবে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি এই তালিকায় সামগ্রিকভাবে সিলমোহর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংগঠনের পাশাপাশি ৭৪টি পুরসভা ও পুরনিগমের শীর্ষ পদেও রদবদল হতে চলেছে। দলীয় সূত্রের খবর, এত বড় রদবদল তৃণমূল কংগ্রেস এর আগে কখনও দেখেনি। কঠিন সময়ে যে সকল নেতারা দলের হয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তাঁদের সামনের সারিতে আনতে চাইছে রাজ্যের শাসকদল।

আরজি করেরে ধাক্কা সামলাতে ও ২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে আরও শক্তিশালী করতে ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এবার সামনে আনতে চলেছেন লড়াকু নেতাদের। যারা কোনও ‘সুপারিশে’ নয়, কাজের মাধ্যমে দলে জায়গা করে নিয়েছেন। সংগঠন আরও মজবুত করতে এই সকল নেতাদের উপরই ভরসা করতে চাইছে তৃণমূল। এছাড়াও মানুষের জন্য সর্বদা হাজির এই সকল নব্য নেতাদের সামনের সারিতে এনে সকলকে বার্তা দিতে চাইছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কাজ প্রত্যাশা মতো পূরণ না হওয়ায় ক্ষমতাশালীদেরও পদ ছাড়তে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তালিকায় থাকা নেতাদের নাম যাতে কোনও দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত না থাকে সেই বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। এক্ষেত্রে কঠিন সময়ে যারা দলের পাশে ছিলেন তাঁরা পদ পেতে পারেন বলে সূত্রের খবর।

লোকসভা নির্বাচনে দলের ফলাফলের উপর নির্ভর করে এই সব রদবদল করতে চাইছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলে নিষ্ক্রিয়দের ছেঁটে ফেলতে চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনে দলের হয়ে ভোট এনে দিতে পারেননি এরকম সাংগঠনিক পদাধিকারীদেরও চাইছেন না অভিষেক। তিনি চান, অপেক্ষাকৃত নতুন ও যোগ্যদের হাতে দায়িত্ব ও ক্ষমতা তুলে দিতে। সেই মতো পুরসভা, পঞ্চায়েত ও সাংগঠনিক স্তরে তালিকা প্রস্তুত করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেই তালিকা পৌঁছেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। এই তালিকায় থাকা নামগুলি নিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন মমতা। উপনির্বাচনের পর পরই জেলার নতুন সভাপতি ও অন্যান্য পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস।


দলীয় সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরে সাংগঠনিক স্তরে রদবদল হতে পারে। পাশাপাশি এই জেলায় দলের পুর প্রশাসনেও বদল হতে পারে। বীরভূম জেলার তিনটি পুরসভাতেও রদবদল হতে চলেছে। লোকসভা জিতলেও সিউড়ি, রামপুরহাট, বোলপুর পুরসভায় তৃণমূল হেরে গিয়েছে। এর জেরে পুরসভাগুলিতে বড়সড় রদবদল করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। হাওড়া ও হুগলির একাধিক পুর এলাকাও তালিকায় রয়েছে। উত্তরবঙ্গেও দলের সাংগঠনিক স্তরে একাধিক বদল করতে চলেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে মালদার নাম। এই জেলার সংগঠনেও রদবদল হতে পারে।

পুরসভা, পুরনিগমের ও সাংগঠনিক স্তরের রদবদল করা হলেও মন্ত্রিসভার বিষয়ে এখনই দলের সেভাবে কোনও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। মন্ত্রীদের বিষয়টি সম্পূর্ণ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ছাড়তে চাইছে দল। সূত্রের খবর, একাধিক দপ্তরের কাজের মূল্যায়ন করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, একাধিক মন্ত্রী ও আমলা প্রত্যাশা পূরণ করতে অসমর্থ হয়েছেন। কিন্তু আপাতত মন্ত্রীদের নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছে না শীর্ষ নেতৃত্ব।
দলীয় নেতৃত্ব দাবি করেছে, চলতি বছরের মধ্যেই তালিকা অনুযায়ী রদবদল সেড়ে ফেলতে চাইছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী বছরের শুরু থেকেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।