রাজ্যের নাম পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির সঙ্গে দেখা করল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়ান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্য সাংসদরা।
এদিন অধিবেশন চলাকালীন সংসদেই তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিন দফায় পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করে বাংলা করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মাসের শুরুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যের নাম বদলে বাংলা করা যাবে না। নাম বদলের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিও দেন।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, রাজ্য বিধানসভায় বাংলার নাম পরিবর্তন সর্বসম্মতিতে পাশ হয়েছে। যদিও সেটি নিয়ে গড়িমসি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্যও বলা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কনফারেন্স রুমেই হয়ে থাকে। সেই ঘরে বড়সড় একটি ওভাল টেবিলে চারদিকে সারি সারি করে চেয়ার পাতা। তৃণমূলের এক সাংসদ জানিয়েছেন ওই ঘরে ঢুকে সব সাংসদরা টেবিলের একদিকেই বসেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঢুকে তাঁদের নমস্কার জানিয়ে হেসে বলেন, এ কি আপনারা সবাই উল্টোদিকে কেন? আমার পাশে এসেও কয়েকজন বসুন। ভয় নেই, দিদি বকবেন না, কারও চাকরিও যাবে না। এতেই সহজ হয়ে ওঠে বৈঠকের পরিবেশ।
এরপর ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রধানমন্ত্রীর ডানপাশে গিয়ে বসেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বসেন মােদির বাঁ দিকে। সুদীপের পাশে সৌগত রায় এবং তাঁর পাশে বসেন অভিষেক। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুখেন্দু শেখর রায় প্রধানমন্ত্রীর মুখােমুখি বসেছিলেন।
রীতিমতাে হালকা মেজাজে কথাবার্তা হয়। প্রধানমন্ত্রী নাকি কল্যাণকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন কি ব্যাপার আজকাল আপনার গলা তাে বিশেষ পাচ্ছি না।
এদিনের বৈঠক যখন প্রায় শেষের দিকে তখন আলাদা করে অভিষেকের কুশল জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে বলেন, আপনার চোখ কেমন আছে। জবাবে নাকি অভিষেক বলেছেন, আগের থেকে অনেকটা ভালাে। দুবার অপারেশন করতে হয়েছে আরও একবার করতে হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী এদিন অভিষেকের কাছে জানতে চান তাঁর কোথায় চিকিৎসা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অভিষেক জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসা হায়দরাবাদে হচ্ছে।
এদিনের বৈঠক নিয়ে এক তৃণমূল সাংসদ বলেন, ভালাে বৈঠক হয়েছে। সৌজন্যের স্রোত ছিল এই বৈঠকে। তবে প্রধানমন্ত্রী পদে পুননির্বাচিত হওয়া নরেন্দ্র মােদিকে অভিনন্দন জানাতে এদিন তৃণমূল সাংসদরা ভুলে গিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এই নিয়ে কিছুটা আক্ষেপও রয়েছে প্রতিনিধি দলের একাংশের মধ্যে।
এদিন প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল সাংসদদের কথা মন দিয়ে শুনেছেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে রাজ্যের নাম বদল করার প্রস্তাব গৃহীত হয় বিধানসভায়। দলমতনির্বিশেষে রাজ্যের নাম ‘পশ্চিমবঙ্গ’ বদলে নতুন নাম রাখার বিষয়ে সম্মতি জানায়। তিনটি ভাষা বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দিতে বাছা হয় নাম। বঙ্গ, বেঙ্গল এবং বঙ্গাল নাম দেয় রাজ্যে। যদিও সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় কেন্দ্র।
পৃথক পৃথক নাম নয় বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দি এই তিনটি ভাষাতেই এক নাম রাখতে হবে বলে রাজ্যকে জানায় কেন্দ্র।এই ঘটনার পর রাজ্য সরকার রাজ্যের নাম তিনটি ভাষাতেই ‘বাংলা’ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।