সপ্তাহ খানেক আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল যোগ দিয়েছেন বোন মেরিনা কুজুর। এবার কি দাদা জন বারলাও একই পথে হাঁটতে চলেছেন? সোমবার জন বারলার ডুয়ার্সের বানারহাটের লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের বাড়িতে যান তৃণমূল নেতৃত্ব। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বৈঠক। যদিও বৈঠকের পর দলবদল নিয়ে কিছু বলতে চাননি বারলা। অন্যদিকে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, এটা নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ জন বারলাকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। এ নিয়ে দলের বিরুদ্ধে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন বারলা। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগগার বিরুদ্ধে একাধিকবার তোপ দাগেন। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব একাধিকবার বারলার মন গলানোর চেষ্টা করে। যদিও তাতে যে খুব একটা লাভ হয়নি, গতকালের ‘সাক্ষাৎ’ তারই প্রমাণ।
সোমবার বিকেলে বারলার বানারহাটের লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের বাড়িতে উপস্থিত হন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক দীপেন প্রামাণিক ও তৃণমূলের জেলার মুখপাত্র দুলাল দেবনাথ। বেশ কয়েক ঘণ্টা বৈঠক চলে। বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসে দুলাল দেবনাথ বলেন, উনি আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ। বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা। উপনির্বাচনের আগে ওনার সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ।
জল বারলা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসবেন কি না, জানতে চাওয়া হলে তৃণমূলের আলিপুরদুয়ারের মুখপাত্র বলেন, সময় কথা বলবে। আর এ বিষয়ে যা বলার দলের রাজ্য নেতৃত্বে বলবে।
এদিকে বৈঠক শেষে জন বারলা আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগগার বিরুদ্ধের ক্ষোভ উগড়ে দেন। তিনি বলেন, এখানে ওয়ান ম্যান আর্মি চলছে। কিন্তু তাতেও কি দল টিকিয়ে রাখা গেল? আমার ভাই বিজেপি কার্যকর্তা হওয়া সত্ত্বেও মাদারিহাট থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। একাই জেলা চালালে কীভাবে চলবে। কোনও নেতারা নামতে পারছেন না। এভাবে তো চলবে না। ওরা যদি নিজের চেষ্টায় আমাকে ছাড়া জিততে পারে, তাহলে তো খুবই ভালো।
চা শ্রমিকদের করুণ অবস্থার কথাও তুলে ধরেন বারলা। প্রাক্তন বিজেপি সাংসদের কথায়, ২০১০ থেকে ২০২৩ অবধি চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য ২০ শতাংশ করে বোনাস দিতে পেরেছি। এবার তো বোনাস কম হয়ে গেল। চা বাগানের কেউ মণ্ডলে নেই, জেলাতেও কেউ নেই, আদিবাসী তো দূরের কথা।
রাজ্যের যে ৬ কেন্দ্রে ১৩ নভেম্বর উপনির্বাচন রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম মাদারিহাট। মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের দুটো গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। সেগুলি হল – বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত ও সাঁকোয়াঝোরা গ্রাম পঞ্চায়েত। জন বারলার এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রভাব রয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বারলা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গেলে এই দুটি পঞ্চায়েতে ভালো ফল করবে রাজ্যের শাসকদল।
২০ অক্টোবর জন বারলার বোন মেরিনা কুজুর যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে সুলকাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য তাঁকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। মেরিনার হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলে দেন দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। মেরিনা কুজুর বিজেপির তফশিলি উপজাতি বা এসটি মোর্চার জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি পদে ছিলেন।
মেরিনা বলেন, বিজেপির থেকে উন্নয়নের তেমন কোনও সহযোগিতা পাইনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজ দেখেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দলবদলের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত। এ নিয়ে দাদা জন বারলার সঙ্গে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন মেরিনা। বিজেপির নাগরাকাটা ১ নম্বর মণ্ডল কমিটির সভাপতি বরুণ মিত্র জানান, মেরিনা গত ৩ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। ফলে ওঁর দলবদলে বিজেপির কোনও ক্ষতি হবে না।