‘রাজনীতির ঝড়’ নাকি ‘ঝড়ের রাজনীতি’? যদিও দুই বিষয়কেই দক্ষতার সঙ্গে দমন করতে অভিজ্ঞ এবং প্রস্তুত রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র চোখ রাঙানিতে যে অভিঘাত তৈরি হবে, তার মোকাবিলায় সংগঠনকে প্রস্তুত রাখছে তৃণমূল। কোথায় কী প্রস্তুতি, আগেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তবে এবার কেবল প্রশাসন নয়, প্রস্তুত সংগঠনও। ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সাংগঠনিক ভাবে সেই নির্দেশিকাও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। সাংগঠনিক জেলাগুলির সভাপতিদের পাশাপাশি ব্লক সভাপতিদেরও সেই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত এবং পুর এলাকায় সাংগঠনিক ভাবে ত্রাণ এবং উদ্ধারের কাজে সংগঠনকে নামাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল।
বর্তমানের চিত্র স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির ঘূর্ণিঝড়ের বীভৎস স্মৃতি। সেক্ষেত্রে রাতভর রাস্তায় থেকে উদ্ধার এবং ত্রাণের কাজ তদারকি করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেটি নিতান্তই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও ঝড়ের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসকদলের অবিরাম লড়াইকে ‘ঝড়ের রাজনীতি’-এর তকমা দিয়েছিল বিরোধী মহল। যদিও ‘তৃণমূলই একমাত্র জনস্বার্থে রয়েছে’ বলে পাল্টা প্রচার করেছিল শাসকদল। প্রসঙ্গত, বাংলা ঘূর্ণিঝড় দেখে অভ্যস্ত। তা সত্ত্বেও অন্যান্য বারের দুর্যোগ মোকাবিলা এবং এবারের দুর্যোগ মোকাবিলার মধ্যে একটি মৌলিক ফারাক রয়েছে শাসকদলের কাছে। সেটি কি আরজি কর আবহ? এ প্রসঙ্গে দলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, ‘যেখানে দুর্যোগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে, সেখানে আরজি কর আন্দোলনের কোনও প্রভাব নেই ঠিকই। কিন্তু প্রান্তিক অংশের মানুষের পাশে থাকার জন্য গোটা দল নামলে বৃহত্তর রাজনীতিতে তার প্রভাব নিশ্চয়ই তৈরি হবে।’ সেই সঙ্গে, ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। সেই ভোটের আগে মানুষের পাশে থাকার এক বৃহত্তর ছবিও তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, প্রশাসন তো বটেই, দলীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী রাজনৈতিক দল হিসাবে তৃণমূল খোদ জনসাধারণের পাশে থাকতে চাইছে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদে। ‘বিজয়া সম্মিলনী’ অনুষ্ঠানের মতোই দুর্যোগ মোকাবিলায় দলের ইতিবাচক ভূমিকাও জনসংযোগের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে তৃণমূলের। এ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক উত্তম বারিক বলেন, ‘প্রশাসনের পাশাপাশি দলও ময়দানে রয়েছে। ইতিমধ্যেই রেসকিউ সেন্টারগুলিতে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।’ পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতিও জানিয়েছেন, তাঁর জেলায় দাঁতন ১ এবং ২ নম্বর ব্লক, মোহনপুর, নারায়ণগড় এবং পিংলার জামনায় ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে। সেই সব এলাকাগুলিতে মানুষের প্রয়োজনে দলের নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কলকাতা শহরেও পুরসভার তরফে কাউন্সিলরদের কাছে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টনের তালিকা পৌঁছে গিয়েছে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, উপকূলবর্তী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনের তরফে যেমন মানুষকে সতর্ক করার কাজ চলছে, তেমন সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূলও প্রচারের কাজে নেমেছে। পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ২৪ পরগণার বিভিন্ন এলাকায় টোটো বা রিকশায় তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে মাইকে প্রচার চলছে। পাশাপাশি, সাংগঠনিক ভাবেও বলা হয়েছে দলকে প্রস্তুত থাকতে। সিইএসসি-র কোন দল কোন ওয়ার্ডে, কোন এলাকায় প্রস্তুত থাকবে, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে কে থাকবেন, সেই নামের তালিকা, ফোন নম্বর-সহ কাউন্সিলরদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সমান্তরাল ভাবে দলের শাখা সংগঠনগুলিকেও বলা হয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত থাকতে। তবে, আম্ফান থেকে ফনি কিংবা রেমাল কোনো ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রেই সেভাবে দলীয় নির্দেশিকা জারি করে দলীয় নেতা-কর্মীদের মানুষের পাশে থাকার বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি দলের তরফে। রাজনৈতিক মহল বলছে, এবার ঝড়ের মোকাবিলায় প্রশাসনের পাশাপাশি দলকে নামিয়ে দু’টি কাজ একত্রে করতে চাইছে তৃণমূল। এক, নেতা-কর্মীরা যাতে নড়েচড়ে কাজ করেন এবং উপনির্বাচনের মুখে ইতিবাচক চিত্র ফুটে ওঠে। দুই, জনসংযোগ।