• facebook
  • twitter
Sunday, 30 March, 2025

ভোটার তালিকার কারচুপি ধরতে নির্দেশ তৃণমূল জেলা সভাপতির

জেলা সভাপতি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন তার জন্য অতি দ্রুত কাজ শেষ করার লক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা যাচাই করতে হবে।

দলের সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ দ্রুত কার্যকর করতে হবে। বসে থাকলে চলবে না, বাড়ি বাড়ি ঘুরে গড়মিল ধরার কাজে নামুন। ভোটার তালিকায় কারচুপি ধরতে এমনই কড়া নিদান দিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। বর্ধমানের টাউনহলে এর জন্য বড়ো ধরনের সভার আয়োজন করা হয়। জেলার নেতা মন্ত্রীরা তো বটেই, পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত, সমস্ত বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য, বুথভিত্তিক কর্মীদের সবাইকে বাড়ি বাড়ি ঘোরা শুরু করতে বলেন। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, সাংসদ ডা. শর্মিলা সরকার, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার সহ শীর্ষ নেতৃত্ব। সভা উপলক্ষে টাউনহল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

জেলা সভাপতি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন তার জন্য অতি দ্রুত কাজ শেষ করার লক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা যাচাই করতে হবে। তিনি জেলার নেতা নেত্রীদের জানিয়ে দেন চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে সমস্ত ব্লক ভিত্তিতে রিপোর্ট জমা করতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করার কথা বলা হয়। ব্লকের রিপোর্ট এককাট্টা করে জেলার তথ্য পাঠানো হবে রাজ্যের কাছে।

তবে জেলা সভাপতির ডাকা ওই বৈঠকের আগেই জেলা জুড়ে অভিযান শুরু হয়েছে তৃণমূলের তরফে। আর তাতেই ধরা পড়ছে ভুয়ো ভোটার। এমনটাই দাবি নেতৃত্বের। এর মধ্যে কালনার পূর্বস্থলীর দুটি ব্লকে একাধিক অভিযোগ নিয়ে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। পূর্বস্থলী-১ ও ২ নং ব্লকে কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঘরে ঘুরেছেন বিধায়ক তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। মন্ত্রী বলেন, যেভাবে সারা রাজ্য জুড়েই ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে,তার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান। একই সঙ্গে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে তাঁদেরও তালিকায় আনার কাজ চলছে। তিনি জানিয়েছেন, একদিনে ভুয়ো ভোটার ধরা সম্ভব নয়, তাই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ও নেতা নেত্রীরা সম্মলিত ভাবে ধারাবাহিক ভাবে এই কাজ চালিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিজেপি দলের প্রতি কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি মন্ত্রী।

অন্যদিকে পূর্বস্থলী-২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে নামেন বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। জানান, এখানে তিনি তালিকায় এমন অনেক নাম পেয়েছেন তাঁরা সকলেই মৃত। কালেখাঁতলা পঞ্চায়েত এলাকাতেই প্রায় চারশো ভুয়ো ও মৃত ভোটারের নাম পাওয়া গেছে। বিধায়কের দাবি, ব্লকে প্রায় দেড় হাজার ভুয়ো ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে। খোঁজ খবর নিয়ে যাবতীয় তথ্য জমা করা হচ্ছে বিডিও দপ্তরে, এমনটাই জানিয়েছেন বিধায়ক। মারাত্মক অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই ব্লকের তেলিনপাড়াতে। এখানকার এক ভোটার রত্নেশ্বর দেবনাথকে এলাকার লোকজন কেউ কোনদিন দেখেনইনি, চেনেন না। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে তিনি বাংলাদেশের বাসিন্দা, ওই ব্যক্তি সেখানে শিক্ষকতা করেন। বিধায়কের অভিযোগ এই ঘটনার মতো অনেকের তালিকায় নাম আছে, অথচ তাঁরা এখানে আসেন না। শুধুমাত্র ভোটের সময় আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে থেকে আবার ফিরে যান। এঁরা সকলেই বহিরাগত। শুধু তাই নয়, এঁরা কেউ ভারতের বাসিন্দাই নন। বেশিরভাগই বাংলাদেশের বাসিন্দা। নদীয়া, মুর্শিদাবাদ সীমান্ত দিয়ে এঁদের যাতায়াত আছে বলে অভিযোগ।

এদিকে কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, ভুয়ো ভোটার তালিকা নিয়ে শুনানি হবে। বেআইনি ধরা পড়লে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হবে। অন্যদিকে একের পর ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম। তিনি বাড়ি বাড়ি ঘুরে যাচাই করার সময় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সব কারচুপির ষড়যন্ত্র চলছে। এসবের বিরুদ্ধে সকলের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। একই কথা বলেন, জামালপুরের বর্ষীয়ান নেতা মেহেমুদ খান। তিনি বলেন, ভোটারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার আছে। শুধুমাত্র কালনা মহকুমা নয়, জেলার রায়না, খন্ডঘোষ, মেমারি, জামালপুর, গলসি, কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম সব অঞ্চলেই ভুয়ো ভোটারদের তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।