ছক্কা মারল তৃণমূল ধরাশায়ী বিরোধীরা

উপনির্বাচনে জেতার পর তৃণমূল কর্মীদের বিজয়োল্লাস। নিজস্ব চিত্র

গত কয়েক মাসে আর জি কর আন্দোলন নিয়ে উত্তাল হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। দলে দলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিলেন। যা দেখে বিরোধীরা রীতিমতো উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল। তারা মনে করেছিল রাজ্যের ছয় কেন্দ্রের উপনির্বাচনে রীতিমত ধাক্কা খাবে শাসক দল। ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল শাসক দল ছক্কা হাঁকিয়েছে। এমনকি উত্তরবঙ্গের মাদারিহাটে, তৃণমূল ইতিহাস তৈরি করে প্রথম বারের জন্য জোড়াফুল ফোটাল। ভোটের ফলাফলে বাকি ৫আসনের মতো মাদারিহাটও বিজেপির ছন্নছাড়া অবস্থা প্রকাশ্যে এনে দিল। প্রসঙ্গত, এ যাবত কোনও ভোটেই মাদারিহাটে জিততে পারেনি তৃণমূল। চা-বাগান ঘেঁষা এই আসনটি ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ছিল বামশরিক আরএসপি-র দখলে। ২০১৬ এবং ২০২১ সালের ভোটে এই আসনে জিতেছিলেন বিজেপির মনোজ টিগ্গা। সেই মনোজকে এ বার লোকসভায় দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। আলিপুরদুয়ার আসন থেকে তিনি জিতে সাংসদ হয়েছেন। সে কারণেই মাদারিহাটে উপনির্বাচন হয়েছে। যে ভোটে জিতে বিধায়ক হতে চলেছেন তৃণমূলের জয়প্রকাশ টোপ্পো।

মাদারিহাট, সিতাই, তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটি, হাড়োয়া, সব কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। ভোটের ব্যবধান কোথাও ৫০ হাজারের বেশি তো কোথাও আবার তা লাখ পেরিয়েছে। যা দেখে চওড়া হাসি ঘাসফুল শিবিরে। পাশাপাশিই আরও এক বার ভোটের ফল প্রমাণ করে দিল, বাংলায় বাম-কংগ্রেস এখন প্রান্তিক শক্তি। গ্রাম, শহর— কোনও আসনেই তাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একমাত্র হাড়োয়া আসনে বাম সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুল ইসলাম দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। এই একটি আসনেই জামানত বজায় রয়েছে তাঁদের । বাকি ৫ আসনেই জামানত খুইয়েছেন বামপ্রার্থীরা। পৃথক ভাবে লড়ে ৬ টি আসনেই জামানত খুইয়েছে কংগ্রেস।

যে ৬’টি আসনে উপনির্বাচন ছিল, তার মধ্যে নৈহাটি এবং মেদিনীপুর শহরাঞ্চল। বিধানসভার মধ্যে কিছু পঞ্চায়েত এলাকা থাকলেও সেগুলি শহরঘেঁষা এলাকা। বাকি ৪ কেন্দ্র সিতাই, মাদারিহাট, তালড্যাংরা এবং হাড়োয়া পুরোটাই গ্রাম। সে দিক থেকে তৃণমূলের এই জয় গ্রাম-শহর দুই অংশের মানুষেরই জনমতকে প্রতিফলিত করল বলে দাবি শাসক শিবিরের।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, আর জি কর আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকলেও তা একেবারে নগরকেন্দ্রিক। যার কোনও প্রভাব গ্রামাঞ্চলের মাটিতে পড়েনি। বরং লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বিনামূল্যে রেশন, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্পের প্রত্যক্ষ সুবিধা পান তাঁরা। বাড়ির সামনে ঝকঝকে পাকা সড়ক রয়েছে। ফসলের ক্ষতি হলে মেলে সরকারি বিমা। ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর আগে এ সমস্ত সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখেছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে আন্দোলন, দ্রোহের ঝাঁজ শুধুমাত্র কলকাতা ও হাতেগোনা কিছু শহরের মধ্যে আবদ্ধ থেকে গিয়েছে।

৬টা আসনে গো হারা হারার পর দোষারোপের পালা শুরু হয়ে গেছে বিজেপি শিবিরে। গতবারের মতো এবারও হারের দায় নাম না করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দিকেই ঠেললেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, তিনি বিরোধী দলনেতা, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তিনি যুক্ত থাকেন না। পাশাপাশি এও বললেন, ‘হাতে মাত্র ১ বছর। নির্বাচনমুখী সংগঠন, আন্দোলনমুখী দল দরকার।’ অন্যদিকে ভোটের ফলাফল প্রসঙ্গে পদ্মের রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই , এই হার থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে’

আর অ্যাসিড টেস্ট জিতে চওড়া হাসি নিয়ে তৃণমূলের দাবি, আর জি কর নিঃসন্দেহে নৃশংস ঘটনা। তবে তা বিচ্ছিন্ন। বিরোধীরা একে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। একে হাতিয়ার করে রাজ্যে পালাবদলের স্বপ্ন দেখছিল। ভোটের বৈতরণী পার করতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজ্যবাসী তাঁদের সেই স্বপ্নে ছাই দিয়েছে।