ডিসেম্বর মাস থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায় লাল মাটির জেলা পুরুলিয়াতে। বিশেষ করে ২৫শে ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়দিন থেকে ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা থাকে পুরুলিয়া জেলা। পুরুলিয়া জেলায় বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যেখানে শুধুমাত্র ভিন জেলা নয় ভিন রাজ্য থেকেও মানুষজন সারা বছরই এসে থাকে। বিশেষ করে শীতের মরশুমে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে পুরুলিয়া জেলায়।
পুরুলিয়া জেলায় রঘুনাথপুর মহকুমায় জয়চন্ডী পাহাড়ে পর্যটন মেলা হয়ে থাকে। সেখানে পুরুলিয়া জেলার স্থানীয়দের হাতে গড়া অনেক জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য পর্যটকরা বের হয়ে থাকে সন্ধ্যেবেলায়। মেলায় মনোরঞ্জন করতে আসে অনেক বিখ্যাত গায়ক গায়িকারা। পুরুলিয়া জেলার সব থেকে বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র অযোধ্যা পাহাড়, যেখানে একসময় মাওবাদীর কেন্দ্ররূপে পরিচিত ছিল। সেই জায়গা এখন পর্যটন কেন্দ্রের শিরোনামে পুরুলিয়া জেলা তথা রাজ্যে। পর্যটকদের মুখে শোনা যায়, দার্জিলিং-এর ফিল পাওয়া যায় এই অযোধ্য পাহাড়ে গাড়িতে করে ট্রাকিং করলে। বিশেষ করে অযোধ্যা পাহাড়ের বামনী ফলস, আপার ড্যম লোহার ড্যাম।
জঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে গাড়িতে করে পাহাড়ে ওঠা সৌখিন পর্যটকদের মনোরঞ্জন হয়ে থাকে এখানে। অযোধ্যা পাহাড় ছাড়াও বড়ন্তি লেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে ভিড় উপচে পড়ে সন্ধ্যেবেলায়। তার সঙ্গে রয়েছে গড় পঞ্চকোট কাশিপুর রাজবাড়ীর মতো ঐতিহাসিক নিদর্শন। নতুনভাবে সরকারের সাহায্যে এবং স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে কাশিপুরে সুন্দরবনের আদলে বোটিং করে ঘুরে বেড়ানো পুরুলিয়ার সুন্দরবন তথা রঞ্জনডির জলাশয়ে। রয়েছে জয়চন্ডী পাহাড়ের মতো ঐতিহাসিক এবং এক সময়ের হীরক রাজার দেশে সিনেমার শুটিং হওয়ার বিশেষ স্থান জয়চন্ডী পাহাড়। বিশেষ করে এই ডিসেম্বর মাস এবং জানুয়ারি মাসে শুধু নয়, বনভোজন করতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসে পুরুলিয়ার এই স্থানগুলিতে। এ বছরও সেরকমই চিত্র দেখা গেল প্রত্যেকটি পর্যটন কেন্দ্রে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে করা হয়েছে পুলিশি ক্যাম্প এবং প্রত্যেক জায়গায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে ইন্ডিকেট বোর্ডের। যাতে বাইরে থেকে আসা কোনও পর্যটকদের বা বনভোজন করতে আসা মানুষজনদের রাস্তায় কোনও অসুবিধা না হয় পর্যটন কেন্দ্র যাওয়ার জন্য।
পর্যটকদের এবং বনভোজন করতে আসা বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের কাছ থেকে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার মতোই এখন পুরুলিয়া একটি বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র। এই পর্যটন কেন্দ্রে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকৃতিপ্রেমীদের ডেস্টিনেশন হয়ে থাকে পাহাড় সমৃদ্ধ এই জেলা। এক সময় পুরুলিয়ার জেলার খবর তাঁরা টিভিতে, সংবাদপত্রে দেখত। কিন্তু এখন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পুরুলিয়ার ছবি। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আস্বাদন করতে এই শীতের সময় বিশেষ করে মানুষজন এসে থাকে বনভোজন করতে। তার সঙ্গে লাল মাটির জেলায় ভালো করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আস্বাদন করতে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। যার পোশাকি নাম ‘সহায় অ্যাপ’। এই এপ্লিকেশন মোবাইলে ডাউনলোড করা থাকলে সেখানে এসওএস বটনে প্রেস করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই জায়গায় পৌঁছে যায় পুরুলিয়া জেলা পুলিশের গাড়ি। পর্যটকদের যাতে কোনও অসুবিধায় না পড়তে হয়, তার জন্য এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন অনেকটাই সুবিধা দেয় পর্যটন কেন্দ্রে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের।
এছাড়াও স্থানীয় মানুষজন, যারা যানবাহন চালিয়ে তাঁদের দিন যাপন করে, তাঁরা ওই পর্যটন কেন্দ্রে আসা পর্যটকদের সারা পুরুলিয়া জেলা যানবাহনের দ্বারা ঘুরিয়ে রোজগার হয় ভালোই। স্থানীয় কিছু কিছু মানুষ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ছোট ছোট দোকান করে তাদেরও আর্থিক উপার্জন হয় এই সময়টিতে। শীতের মরশুম ছাড়াও পলাশ ফুলের মরশুমেও পুরুলিয়া চেয়ে থাকে পর্যটকদের দিকে। কেউ কেউ শুধু বনভোজন করতে এসে একদিনের মধ্যেই ফেরত চলে যায় নিজেদের বাসস্থানে। আবার অনেক পর্যটকরা বিভিন্ন পুরুলিয়ার পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশে থাকা রিসর্টে নিজের আস্তানা গেড়ে সারা পুরুলিয়া জেলা তিন-চারদিন ধরে চষে বেড়াতে থাকে। স্থানীয় মানুষজন জানিয়েছেন, এ বছর ডিসেম্বর মাসের ভিড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসে আরও বেশি ভিড় হতে চলেছে।