বাংলাকে কলুষিত করছে বিজেপি: অভিষেক

২০২৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনের সর্বস্তরে ঝাঁকুনি দিতে বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চে উপস্থিত হয়ে তৃণমূলের মহাসমাবেশ থেকে কড়া বার্তা দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকেই বেঁধে দিলেন আগামী নির্বাচনের টার্গেট। তিনি আশাবাদী, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল কংগ্রেস। ২১৫টির বেশি আসন পাবে দল। এ দিন দফায় দফায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ও বিজেপিকে আক্রমণের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের দিলেন কর্মপরায়ণতার বার্তা। সেই সঙ্গে দিলেন দলের বেইমানদের শনাক্ত করার হুঁশিয়ারি। তাঁর কথায়, ‘দলের সঙ্গে যাঁরা বেইমানি করেছিলেন, সেই মুকুল রায় থেকে শুভেন্দু অধিকারীদের আমিই চিহ্নিত করেছিলাম। ভবিষ্যতেও বেইমানদের লেজে-গোবরে করার দায়িত্ব আমি নিলাম।’

গত বছর ২৮ আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে শেষ বার একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল মমতা–অভিষেককে। এত দিন পর ফের তাঁদের এক সঙ্গে দেখে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছিল, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে অভিষেকের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ দিন মঞ্চ থেকে এই জল্পনাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘আমি বেইমান নই, আমার গলা কেটে দিলে সেই কাটা গলা দিয়ে বেরোবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ। মানুষের কাছে মাথা নত করে কাজ করব, কিন্তু বিজেপির বশ্যতা স্বীকার করব না।’ এভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্বের জল্পনায় জল ঢেলেছেন বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিধায়ক থেকে শুরু করে ব্লক স্তরের নেতাদের নিজেদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। নির্বাচনের আগে তাঁদের কাজে যেন কোনও শিথিলতা না আসে সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। বিজেপি বাংলাকে কলুষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিষেক। তিনি আশাবাদী, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপিকে পরাজিত করবে তৃণমূল কংগ্রেস।


প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিটে ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়’ নাম থাকা প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ‘সিবিআই চার্জশিটের দু’জায়গায় আমার নাম লিখেছে। কে অভিষেক, বাড়ি কোথায়, কোনও পরিচয় লেখা নেই। সিবিআই ভাববাচ্যে কথা বলছে।’ সিবিআই ভয় পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি জানান, কেউ কোনও দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে, ফাঁসির মঞ্চে চলে যাবেন।

বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে এদিনও কেন্দ্রকে আক্রমণ শানিয়েছেন অভিষেক। এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। এ দিন ফের সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তুলে বিজেপিকে দুষেছেন অভিষেক। তাঁর অভিযোগ, বসিরহাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাকে কলুষিত করার চক্রান্ত করেছিল বিরোধীরা। কুৎসার কারণে ১৮ থেকে ১২টি আসনে নেমে এসেছে তারা। আরজি কর থেকে শুরু করে বাংলাকে সকলের কাছে ছোটো করার চেষ্টা করেছে।

গত বছর লোকসভা ভোটের পর থেকে অভিষেককে সেভাবে প্রকাশ্য মাঠে ময়দানে দেখা যায়নি। নিজেকে আটকে রেখেছিলেন নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারেই। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি লোকসভা ভোটের পর তিন মাস ঘুমোতে পারিনি। মানুষ আমাকে এত ভালবাসা দিয়েছেন, তার প্রতিদান তো দিতে হবে। তারপর আমি ডায়মন্ড হারবারে সেবাশ্রয় কর্মসূচি নিয়ে গিয়েছি।’ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে না রেখে ঘরে ঘরে জনমুখী কর্মসূচি পৌঁছে দিতে দলীয় নেতা কর্মীদের বার্তা দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।