ভাটপাড়া পুরসভার দখল নিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পুজোর আগে থেকেই ভাটপাড়া পুরসভা পুনর্দখল নেওয়ার হুঙ্কার দিচ্ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু বুধবারই যে তারা পুরসভার দখল নিতে চলেছে, সে বিষয়ে কোনও আভাস দেননি নেতৃত্ব। বুধবার সকালে হঠাই তপসিয়ায় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তখনই পরিষ্কার হতে শুরু করে ভাটপাড়া পুনর্দখলের পথে এগােচ্ছে ঘাসফুল শিবির। বেলা দু’টোর কিছু পরে ভাটপাড়া পুরসভার ১২ জন কাউন্সিলরকে দলীয় দফতরে হাজির করেন ফিরহাদ।
এরপরেই পরিষ্কার হয়ে যায় হালিশহর, কাঁচরাপাড়া, বনগাঁ, গারুলিয়া ও নৈহাটির পর ভাটপাড়াতেও ফের ঘাসফুল ফুটছে। তবে, এদিন যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে তার আভাস মঙ্গলবারই মিলেছিল, যখন পুরপরিষদ পদ থেকে ইস্তফা দেন মনােজ গুহ ও মদনমােহন ঘােষ। যদিও বিজেপির দাবি, পুর পারিষদকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মনােজ গুহর পরিবর্তে দূর্বা ভট্টাচার্য ও মনমােহনের জায়গায় মােহন দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অপসারিত দুই পুর পারিষদ অবশ্য দাবি করেন, তাঁরা নিজেরাই পদত্যাগ করেছে।
এরপর ভাটপাড়া পুরসভার ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক জল্পনা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যবনিকা পড়ে গােটা ঘটনার। প্রসঙ্গত, লােকসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব জয়ের পর বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের সংগঠনে ভাঙন ধরিয়েছিল বিজেপি। একের পর এক পুরসভা দখল করে নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। নেপথ্যে ছিলেন অর্জুন সিং ও মুকুল রায়। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই দেখা যায় উলটপুরাণ। ধীরে ধীরে গেরুয়া দখলমুক্ত হতে শুরু করে শিল্পাঞ্চলের পুরসভাগুলি। এবার সাংসদ অর্জুন সিংয়ের গড়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়ে পদ্ম শিবিরের ১২ জন কাউন্সিলরকে নিজেদের শিবিরে টেনে আনলেন ঘাসফুলের নেতৃত্ব।
এদিন দলীয় ভবনে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাপস রায়, জেলার পর্যবেক্ষক বিধায়ক নির্মল ঘােষ, পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে আসেন ১২ জন কাউন্সিলর। ফলে ৩৫ আসনবিশিষ্ট ভাটপাড়া পুরসভায় তৃণমুলের শক্তি বেড়ে হল ১৭। আর এই সংখ্যাই এখন পুরসভার দখল নেওয়ার ম্যাজিক ফিগার। ৩৫ ওয়ার্ডে সাংসদ হওয়ার পর পদত্যাগ করেন অর্জুন সিং। এক কাউন্সিলর এই মুহুর্তে জেলে। আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ বাের্ডে এই মুহূর্তে ৩২ জন কাউন্সিলর। এর মধ্যে তৃণমূলের ছিলেন ২৩ জন, আর বিজেপি’র ৮ জন। কিন্তু লােকসভা ভােটের ফল বেরুনাের পর গেরুয়া ঝড়ে এই ২৩ জনের মধ্যে ৫ জন ছাড়া বাকি সবাই পদ্ম শিবিরে নাম লেখান। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় তৃণমূল। অর্জুন সিংয়ের হাত ধরে ভাটপাড়া পুরসভা বিজেপির দখলে যায়।
তবে পুরসভার আসনে বসার জন্য তৃণমূলকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কেননা লােকসভা ভােটের আগে অর্জুন সিং বিজেপিতে যােগ দিতেই ভাটপাড়ায় পুরপ্রধানের পদ থেকে তাঁকে সরাতে নেমে পড়ে তৃণমূল। ৮ এপ্রিল তাঁকে পদ থেকে সরানাে হয়। কিন্তু এরপর ৪ জুন আস্থা ভােটে ২৬ জন কাউন্সিলর ভোট দেন বিজেপি’র পক্ষে। অর্জুনের ভাইপাে সৌরভ সিং আস্থা ভােটে জয়ী হয়ে পুরপ্রধান নির্বাচিত হন। আর এখানেই রয়ে গিয়েছে গেরাে। নিয়ম অনুযায়ী একটি অনাস্থা ডাকার পর ছ’মাস পর্যন্ত আর কোনও অনাস্থা আনা যায় না। আর এখনও সেই ছ’মাস না হওয়া পর্যন্ত পুরসভার দখল নিতে পারবে না তৃণমূল।
এদিকে এদিন কাউন্সিলরদের যােগদান করিয়ে পুরমন্ত্রী কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন অৰ্জুর্ণ সিংকে লক্ষ্য করে। পাল্টা দেন অর্জুনও। পুরমন্ত্রী বলেন, কাউন্সিলরদের ভয় দেখিয়ে বিজেপিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অত্যাচার করেছে সাংসদ। গুন্ডামি করে, ভয় দেখিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ওঁদের মনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখা রয়েছে। বিজেপি সেটা মুছবে কীভাবে?
তিনি আরও বলেন, ভাটপাড়ায় আমেদাবাদের মতাে সন্ত্রাস চলছে। এমপি বলেছিলেন, ভাটপাড়া মুক্তাঞ্চল হয়ে যাবে। সন্ত্রাস চলছিল। ধর্মীয় স্থান থেকে সব জায়গায়। মনে হচ্ছিল আলাদা হয়ে যাবে এই জায়গা। গুন্ডামি চলছিল। সেই ভাটপাড়া শান্ত হয়েছে। তিনি জানান, এমপি’র অত্যাচারে কাউগাছি পঞ্চায়েত থেকে ৭ জন বিজেপিতে গিয়েছিলেন। সেই পঞ্চায়েতও আবার তৃণমূল দখল করেছে।
পাশাপাশি, পানপুর পঞ্চায়েতও তৃণমূলের দখলে এসেছে। গুড়া দিয়ে পুরসভা চালানাে যায় না। ভাটপাড়া পুরসভা ধরে রাখার হুঙ্কার দেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। তিনি বলেন, বিজেপি এখন বাংলা নিয়ে ভাবছে। আর ওরা ভাটপাড়া। ভাটপাড়া বিজেপির ছিল, আছে ও থাকবে। আগে অনাস্থায় বিজেপির বাের্ড হয়েছিল। এবারও তাই হবে। তিনি বলেন, পুলিশের ভয় দেখিয়ে, টাকা খরচ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব নাটক। আবার ফিরে আসবে। যারা গেছে তাদের সঙ্গে যােগাযােগ রয়েছে।