তৃণমুল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলকে খােলা মঞ্চ থেকে অভয় দিয়ে বলেন,তিনি যেন ধমকানাে চমকানাে চালিয়ে যান বিরােধীদের বিরুদ্ধে।
অনুব্রত যে শুধু মমতার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন তা নয়।তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে একের পর এক সভায় বিরােধীদের ধমকানাে চমকানো চালিয়ে গেছেন।এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক থাকলেও তাতে আরও একবার উষ্কানি দিয়ে গেলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনা যাই হােক না কেন,অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে ধমকানাে চমকানাের অভিযােগ যে আর কেউই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না সেটা স্পষ্ট হলাে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।
বৃহস্পতিবার জেলা সদর সিউড়িতে একটি জনসভার আয়ােজন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।সিউড়ি চাঁদমারি ময়দানে এই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিনের সভায় মমতা প্রকাশ্যেই জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলকে পাশে দাঁড় করিয়ে বলেন,কেষ্ট তুমি মাঝে মাঝেই তােমার ধমকানাে চমকানাে চালিয়ে যাও।যে ভাষায় বােঝে ওরা।মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর মাথা নেড়ে হাসিমুখে সম্মতি জানান অনুব্রত।
অন্যদিকে বুধবার ইলামবাজারের প্রধানমন্ত্রী নবেন্দ্র মােদির জনসভায় যাওয়ার অপরাধে বােলপুর লােকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি সমর্থকদের উপর তাঁদের হামলা অভিযােগ উঠল তৃণমুলের বিরুদ্ধে।ওই সব গ্রামে বুধবার রাতেই তৃণমূলের লােকেরা বিজেপি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযােগ করে বিজেপি সমর্থকরা।সেই সঙ্গে লাভপুরের গ্রামে বিজেপি সমর্থককে মারধর করে পােল্ট্রি ফার্ম পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযােগ উঠেছে তৃণমুলের বিরুদ্ধে।বিজেপির অভিযােগ বুধবার নবেন্দ্র মােদির সভায় যাচ্ছিলেন নানুরের কসবা অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামের সমর্থকেরা।বাসে করে যাওয়ার সময় তাদের পথ আটকায় তৃণমুলের কর্মী সমর্থকরা।পুলিশের সহযােগিতায় সাময়িকভাবে তাদের ছেড়ে দেওয়া হলে সভাস্থলে যেতে পারে তারা।কিন্তু পরে বাড়ি ফিরে আসার পর একে একে গ্রামের পর গ্রামে বিজেপি সমর্থকের বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযােগ ওঠে তৃণমুল আশ্রিত তাদের বিরুদ্ধে।শুধু তাই নয়, কাজে গেলে গুলি করে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।খবর পৌঁছে যায় বিজেপির সদর দফতরে।
তারপর রাতেই বিজেপি নেত্রী রূপা গাঙ্গুলি পারুইয়ের কসবা অঞ্চলের বিজেপি অধ্যুষিত গ্রামগুলােতে যান।কসবা,কেষ্টপুর,যাদবপুর,মা সহ একাধিক গ্রামে কৃপা সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযোগ শােনেন।এসব গ্রামের বাসিন্দা এক মহিলা জানান,তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী আকাশ, মকবুল জমির সহ চার পাঁচটি গাড়িতে করে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে গিয়ে তার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেয়, বিজেপির সভায় গেছো খুব ভালো করেছো।ভােটটা কিন্তু তৃণমূলকেই দেবে।তা না হলে কাজে যাওয়ার সময় গুলি খাবে।রূপা তাদের এই বক্তব্য রেকর্ড করে নেন মােবাইলে।
তারপর ঘটনাস্থলে যায় পারুই থানার পুলিশ।রাতেই পুলিশ ওই গ্রামে টহল দিতে শুরু করে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও চাপা উত্তেজনা রয়েছে।শুধু তাই নয় সন্ত্রস্ত এলাকার বিজেপির কর্মী সমর্থকরা।
এদিকে লাভপুরে কুরুন্দা গ্রামের বাসিন্দা কেষ্ট মুখােপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার অভিযােগে ব্যাপক মারধর করে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।এলাকা থেকে তাঁর নেতৃত্বেই প্রচুর বিজেপি কর্মী সমর্থক প্রধানমন্ত্রীর সভায় গিয়েছিলেন।সভা থেকে ফেরার পর তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে এবং তাঁর ভাইয়ের চাষের মাঠে থাকা একটি শ্যালাে পাম্প ভেঙে দিয়েছে তৃণমুলের লােকেরা।
নানুর থানার ভাবধারা গ্রামে বিজেপি কর্মী বাবাই গুপ্তর পােল্ট্রি ফার্মে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযােগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।প্রায় আড়াই হাজার মুরগি পুড়ে গেছে বলে তার অভিযােগ। এছাড়াও এদিন সন্ধ্যায় ইলামবাজার থেকে বােলপুর রাস্তা হয়ে সিউড়ি ফেরার পথে নলহাটি ব্লকের বেশ কিছু সমর্থক সিউড়ি হাট বাজার এলাকায় রেল গেটে দাড়িয়ে পড়েন কিছুক্ষণের জন্য। অভিযােগ হাট জন বাজারে দাড়িয়ে থাকার সময় এলাকার তৃণমূল নেতা জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা হামলা চালায়।বিজেপির দাবি প্রধানমন্ত্রীর সভা থেকে ফেরার পথে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের উপর তুণমুলের হামলার ঘটনায় প্রায় সাত থেকে আট জন আহত হয়েছে।তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে,এদিন সিউড়ি হাটজন বাজারে এই ঘটনার পর বিজেপি কর্মীরা রাতে সিউড়ি প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাস্তা অবরােধ করে।পরে অবরােধ ওঠে।