ফের রাজ্যে বাঘের আতঙ্ক। এবার ঘটনাস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলতলির মৈপীঠ। রবিবার সকালে নদী তীরবর্তী এলাকায় পায়ের ছাপ দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। তাঁদের দাবি, এগুলি বাঘের পায়ের ছাপ। ঠাকুরান নদী পেরিয়ে লোকালয় সংলগ্ন জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’। তাও আবার একটি নয় দু”টি। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয়েছে বন দপ্তরকে। খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছেছেন বন দপ্তরের কর্মীরা। লোকালয় সংলগ্ন অঞ্চলে বারবার বাঘ প্রবেশ করায় চিন্তায় বন দপ্তর। তাই এবার বসতি অঞ্চলকে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের পাশে মাকড়ি নদীর পারে ম্যানগ্রোভের ঝোপে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পায় গ্রামবাসীরা। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, রাতে আজমলমারির জঙ্গল থেকে নদী পেরিয়ে গ্রাম লাগোয়া বাদাবনে ঢুকে পড়েছে বাঘ। এর জেরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে শ্রীকান্ত পল্লি-কিশোরীমোহনপুর এলাকায় বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কয়েক কিলোমিটার উত্তরে বৈকুণ্ঠপুর পঞ্চায়েতেরই নগেনাবাদে গ্রামবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বাঘের আতঙ্ক। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিভাগীয় বন আধিকারিক (ডিএফও) নিশা গোস্বামী জানান, ইতিমধ্যেই প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা হয়ে গিয়েছে। আদৌ পায়ের ছাপগুলি বাঘের কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মৈপীঠে এর আগেও বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। গত ৬ জানুয়ারি বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীকান্ত পল্লি ও কিশোরীমোহনপুর এলাকায় জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছিল। সেই ছাপ দেখে গ্রামে বাঘের সন্ধান শুরু হয়। গ্রামজুড়ে তল্লাশি চালায় গ্রামবাসী ও বনকর্মীরা। শুরু হয় পায়ের ছাপ অনুসরণ করার কাজ। দেখা যায় নদীবাঁধ সংলগ্ন বনসৃজন প্রকল্পের বাদাবনের ভিতরে সেই পায়ের ছাপ এগিয়ে গিয়েছে। সেখানে ঢুকতেই শোনা যায় বাঘের গর্জন। গ্রামবাসীদের একাংশের মতে, মৃত একটি গবাদি পশুকে নদীর পারে ফেলা হয়েছিল। সম্ভবত সেই কারণেই বাঘ খাঁড়ি টপকে গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় চলে আসে। ৮ তারিখ ভোরে বাঘ ফের জঙ্গলে ফিরে যায়।
রাজ্যের একাধিক জায়গা থেকে বাঘের আতঙ্কের খবর প্রকাশ্যে আসছে। বিশেষ করে রাতের ঘুম উড়েছে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের। লোকালয়ের কাছাকাছি বার বার বাঘ চলে আসায় আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। জঙ্গলের পাশের এলাকাগুলি নিয়েই ভয়ে বন দপ্তরও। এছাড়াও যাদের রোজগারের জন্য জঙ্গলে যেতে হয় তাঁদের নিয়েও আতঙ্ক বাড়ছে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, জঙ্গল সংলগ্ন গোটা লোকালয় জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হোক। এছাড়া নদীবাঁধ সংলগ্ন রাস্তায় লাগানো হোক লাইট। এই সমস্ত ব্যবস্থা করলে বাঘের লোকালয়ে প্রবেশ কিছুটা হলেও আটকানো যাবে।