৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে এগারােয় রাজ্যের পরিবর্তনের হটস্পট ছিল সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম। একুশের ভােটযুদ্ধে সেই নন্দীগ্রাম থেকে লড়ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বিধানসভা কেন্দ্রে ভােটের আগের দিনই তাৎপর্যপূর্ণভাবে তৃণমূল নেত্রী সভা করলেন জমি আন্দোলনের আরেক ভরকেন্দ্র সিঙ্গুরে।
সভা থেকে ছুঁয়ে গেলেন জমি আন্দোলনের সেই আবেগকে। বললেন, এটা আমার আবেগের জায়গা। পাশাপাশি মঞ্চে ডেকে নেন তৎকালীন সঙ্গীদের রীতিমতাে নাম ধরে ধরে খোঁজ নেন অনেকের। বলেন, এখানকার সকলকেই তাে চিনি আমি। নাম ধরে ধরে প্রত্যেককে জানি।
প্রসঙ্গত, আজ বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামে ভােটগ্রহণ। তার আগে বুধবার দুপুরে হুগলিতে জোড়া সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চৈত্রের রােদ মাথায় করে ভরদুপুরে এলেন সিঙ্গুরে। সভা থেকে এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে বেনজির সৌজন্য দেখালেন দলনেত্রী।
সদ্য দলবদল করা মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কড়া ভাষা প্রয়ােগ করতেও দেখা গেল না তাঁকে। বরং মাস্টারমশাইয়ের দলবদল নিয়ে তৃণমূল নেত্রী যে অবাকই হয়েছেন, তা স্পষ্ট তাঁর বক্তব্যেই। বললেন, মাস্টারমশাই কীভাবে দাঁড়ান বিজেপির হয়ে? আমি অনুরােধ করেছিলাম, আপনাকে কোনও উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান করে দেব। সম্মানের সঙ্গে কাজ করবেন।
মমতার ভাষণের পরতে পরতে ঝরে পড়ল মাস্টারমশাইয়ের উদ্দেশে শ্রদ্ধা। বললেন, আমি আজও রবীন্দ্রনাথবাবুকে সম্মান করি। একইসঙ্গে বিজেপিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেত্রী বললেন, ৯২ বছর বয়সের মাস্টারমশাইকে সেবা না করে ভােটে দাঁড় করিয়ে দিল বিজেপি।
এদিনের সভা থেকে সিঙ্গুরের আবেগ ছুঁয়ে যান মমতা। বলেন, সিঙ্গুর আন্দোলনের জন্য সন্তোষী মায়ের ব্ৰত শুরু করেছিলাম, বলেছিলাম জিতলে সন্তোষী মাতার মন্দির করব। ক্ষমতায় আসার পর সেটা করে দিয়েছি।
তিনি আরও জানান, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিঙ্গুর থেকে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। বেচারামকে বলেছিলাম, অন্য কোনও জায়গা থেকে মাস্টারমশাইকে দাঁড়ানাের জন্য বােঝাতে। কিন্তু উনি বুঝতে চাননি। সিঙ্গুর আমার আন্দোলনের জায়গা। সিঙ্গুর নিয়েও আমার আবেগ আছে।
যদিও তৃণমূল নেত্রীর দাবি মানতে নারাজ সিঙ্গুরের বিজেপি প্রার্থী ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বলেন, উনি দাঁড়াতে চাইলে নিশ্চয়ই দাঁড়াতে পারতেন। বেচারামকে দিয়ে কেন আলােচনা করানাে হল। উনি নিজে কথা বলতে পারতেন আমার সঙ্গে।
তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী আমাকে জিতিয়েছেন কিনা জানি না, সিঙ্গুরের মানুষ আমাকে ভােট দিয়েছেন। তবে এই রাজনৈতিক কচকচানির মধ্যে রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, নন্দীগ্রামের নির্বাচনের আগের দিন ফের একবার জমি আন্দোলনের আবেগ ছুঁয়ে গেলেন মমতা।