বাংলায় কর্মসংস্থানের হার গোটা দেশের তুলনায় ভালো। প্রায়ই এই দাবি করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি জেলা সফরে গিয়েও জানিয়েছিলেন, শিক্ষক পদে ১৭ হাজার চাকরি প্রস্তুত থাকলেও আদালতের গেরোতেই সেই চাকরি দিতে পারছে না রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে, স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠানে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন ৩০ হাজার চাকরি রেডি আছে।
যে কোনওদিন নিয়োগপত্র দিয়ে দেব চাকরি দেওয়ার জন্য ‘জব ফেয়ার’ আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে বাংলার মানুষের একশ দিনের কাজের টাকা, বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার জন্য কেন্দ্রকে এদিন তোপ দাগতেও ছাড়েননি মমতা।
স্কুল শিক্ষকদের চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল সরকারকে বারবার সমালোচনা করে থাকেন বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট করে দেন, কোথায় কোথায় এই ৩০ হাজার চাকরি হবে।
উল্লেখ্য, উৎকর্ষ তৈরিতে দেশের মধ্যে এগিয়ে বাংলা। স্কিল ডেভেলপমেন্টকে রাজ্য সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
এদিনের অনুষ্ঠানেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আইটিআই, পলিটেকনিকে স্কিল ট্রেনিং দিচ্ছি।
শিল্প সংস্থা এবং চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবে পরিকল্পিত জব ফেয়ার এভাবেই ৩০ হাজার চাকরির সুযোগ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে।
জব ফেয়ার থেকেই দ্রুত নিয়োগের পর্ব শুরু হয়ে যাবে বলে আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলা দেশের মধ্যে প্রথম।
রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়েও প্রত্যয়ী মমতার কথায় বাংলার মেধা সবচেয়ে গর্বের। যা বিশ্বকে আলোকিত করবে। উচ্চশিক্ষাতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে।
মেধাবী পড়ুয়াদের উদ্দেশে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, আমার ছোট ছোট ভাই-বোনেরা বিদেশে পড়তে যাও। কিন্তু পড়া শেষ করে আবার ফিরে এসো। মাতৃভূমি, জন্মভূমিকে ভুলো না।
কারণ, এই মাটি তোমাকে যা দিতে পারে, তা আর কোনও মাটি দিতে পারবে না। মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রশ্ন রাখেন, বাংলার সন্তানরা যদি বাংলায় না থাকেন, তাহলে এই রাজ্যের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতির হাল ধরবে কারা?
২০১১ সাল থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী জানান, মাত্র দশ বছরে ৩০ টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৫১ টি নতুন কলেজ, ১৪ টি মেডিকেল কলেজ, ২৭২ টি আইটিআই, ১৭৬ টি পলিটেকনিক কলেজ, ৭ হাজার নতুন স্কুল, ২ লক্ষেরও বেশি অতিরিক্ত ক্লাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রদানের অনুষ্ঠানে এসে বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ তোলেন মমতা।
তাঁর অভিযোগ, ইউজিসি টাকা দেওয়া বন্ধ করায় পিএইচডি পড়ুয়ারা গ্রান্ট পাচ্ছে না রাজ্য থেকে কেন্দ্র কর বাবদ টাকা তুলে নিয়ে গেলেও রাজ্যের প্রাপ্য ভাগ দেয় না।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘রাজনৈতিক কারণে বাংলাকে অর্থনৈতিকভাবে ব্লক করা হচ্ছে তবে তার মধ্যেও রাজ্য সরকার নিজস্ব বুদ্ধি খরচ করে কিছু কিছু কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।
যেমন, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে একশ দিনের কাজের জব কার্ড হোল্ডারদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে আইটিআই এবং কারিগরি ক্ষেত্রে চাকরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, কেবল বড় শিল্পসংস্থাই নয়, ছোট ছোট শিল্প সংস্থাতেই অনেক কাজের সুযোগ থাকে। সেই লক্ষ্যেই স্কিল ডেভেল্পমেন্ট-এ জোর দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়া মনোরোগীদের পুনর্বাসনের জন্য নির্মিত আবাস প্রত্যয় হাফ ওয়ে হোম এবং ‘সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সিভিল সার্ভিসেস স্টাডি সেন্টার’ উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।