করােনার ভয়কে জয় করে এগিয়ে গেল তৃতীয়ার ভিড়। গত ক’য়েকদিন ধরে শহর কলকাতায় একের পর পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে পুজোর কেনাকাটার চিরাচরিত অভ্যেসেও রাশ টানা যাচ্ছে না। পুজো শপিং আর প্যান্ডেল হপিং-এর ঠেলায় সােমবার রাস্তায় রাস্তায় জমাট বাঁধা ভিড়। সেই ভিড়ে অনড় হয়ে উঠল যানবাহন। বাইক ছােট গাড়ির ফাঁসে রুদ্ধ হয়ে পড়ল বাস-মিনিবাস। ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাস অবস্থা যাত্রী। তৃতীয়ার ভিড়ের এই অবস্থায় অশনিসংকেত দেখল তিলােত্তমা।
সােমবার রাস্তায় উপচে পড়া ভিড় দেখে প্রশাসন কর্তাদের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চিন্তার ভাঁজ চিকিৎসকদের কপালে। সােমবারই হাইকোর্ট রায় দিয়েছে পুজোতে সব মণ্ডপ থাকবে দর্শকশূন্য। তবে এত তাড়াতাড়ি কীভাবে মণ্ডপে নাে- এন্ট্রি জোন বজায় রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হবে তা নিয়ে আথান্তরে পড়েছেন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা।
ইতিমধ্যেই বহু পুজোর প্যান্ডেলে উপচে পড়া ভিড়। লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পাের্টিং ক্লাব, আহিরিটোলা ক্লাব, নাকতলা উদয়ন সংধে তৃতীয়াতেই অষ্টমীর মতাে ভিড়। দুরত্ববিধির দফারফা। নিয়মরক্ষার মাস্ক সঙ্গে থাকলেও তা স্থানচ্যুতি ঘটেছে। স্যানিটাইজার থাকলেও তা হাতেনাতে ধরা দিচ্ছে না। তৃতীয়ার ভিড়ই বলে জানান দিচ্ছে পুজোতে করােনা বিধির বাঁধন কাটবে আমজনতা।
ব্যাপারটা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন চিকিৎসকমহল। তাদের আশঙ্কা ছিল পুজোয় ভিড় শুরু হতেই বাড়তে পারে করােনা সংক্রমণ। গত চব্বিশ ঘন্টায় রাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় চার হাজার জনের মতাে। করােনায় মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। যদিও সুস্থতার হার ৯৭.৫৫ শতাংশ, কিন্তু চিন্তা বাড়াচ্ছে দৈনিক সংক্রমণের হার।
ফলে এবার পুজোতে একদিকে ভিড় নিয়ন্ত্রণ অন্যদিকে করােনাবিধি মানানাে- দু’য়ের দায় মাথায় নিয়ে পুলিশের জেরবার অবস্থা। পুজো মণ্ডপ গুলিকে নাে- এন্ট্রি জোন ঘােষণার রায় করে পুলিশের কাঁধে আরও বােঝা চাপিয়েছে।
এদিকে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সােমবার নবান্নে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সারলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টেলিফোনেই বৈঠকে যােগ দিয়ে একাধিক গুরুত্বপুর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্যসচিব। রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর দেওয়ার পাশাপাশি পুজোর সময়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়েও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাজ্যের সব এসপি, জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার, সিএমওএইচদের নানা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা ও হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রমুখ। সার্বিকভাবে পুজোর সময়ে নাগরিকরা যাতে যথেষ্ট সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালে বেড সহ সমস্ত সহযােগিতা পান তা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তবে পুজো মণ্ডপ দর্শকশূন্য করা নিয়ে। সোমবার হাইকোর্টের রায় ঘােষণার রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।