• facebook
  • twitter
Sunday, 16 March, 2025

‘ঝগড়া করে হেরেছেন’ মালদহ-মেদিনীপুর পূর্ব নিয়ে ভর্ৎসনা অভিষেকের

আপনারা মন্ত্রী হয়েছেন, পদ পেয়েছেন, কিন্তু ভোটের কাজে পিছিয়ে থেকেছেন। যুদ্ধের সময় যে মায়ের সঙ্গে বেইমানি করে, সে তৃণমূলের কর্মী নয়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

কেবল একাধিক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে ভুতুড়ে ভোটার শনাক্তকরণ-ই নয়, ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের হিসেবে-নিকেশও কষে নিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বস্তরের নেতৃত্বদের নিয়ে আয়োজিত শনিবারের মেগা ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিও। চব্বিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় শাসকদলের সামগ্রিক ফল ভালো হলেও পূর্ব মেদিনীপুর এবং মালদহে ব্যাকফুটে তৃণমূল। যার জন্য অভিষেক দায়ী করলেন নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে। তাঁর ভাষায়, ‘নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে অন্য দলকে সুযোগ করে দিয়েছেন। বিরোধীদের ভুল প্রচারকে কাউন্টার করতে ব্যর্থ হয়েছেন! মালদহে ফল খারাপ হওয়ার জন্য জেলা নেতৃত্ব, ব্লক নেতৃত্ব দায়ী।

আপনারা মন্ত্রী হয়েছেন, পদ পেয়েছেন, কিন্তু ভোটের কাজে পিছিয়ে থেকেছেন। যুদ্ধের সময় যে মায়ের সঙ্গে বেইমানি করে, সে তৃণমূলের কর্মী নয়। কাঁথিতে আরেকটু জোর দিয়ে ঝাঁপালে এই আসন জিততাম।’ জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট-সহ ৫০টির অধিক ভোট ব্যবধানে একাধিক আসনে হার প্রসঙ্গেও জেলা নেতৃত্বকে কার্যত তুলোধোনা করেছেন অভিষেক। ভুলের পুনরাবৃত্তি রুখতে পূর্ব মেদিনীপুর এবং মালদহের জেলা নেতৃত্বদের নিয়ে দুটি পৃথক বৈঠকে বসার কথাও জানিয়েছেন অভিষেক। জেলার পাশাপাশি বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে উত্তর কলকাতার কিছু বিধানসভা, বারাসত, বিধাননগর অভিষেকের রোষের মুখে পড়লেও, বাহবা পেয়েছে মধ্যমগ্রাম। ‘পারফর্মেন্স’-র ভিত্তিতে সাংগঠনিক রদবদল যে হবেই, তা জানিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। জেলা থেকে ব্লক সমস্ত স্তরেই হবে রদবদল।

সম্প্রতি অভিষেকের দপ্তর এবং আইপ্যাকের নাম করে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। একাধিক ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে শাস্তির পথ সুগম করিয়েছেন অভিষেক। এদিন ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে তিনি বলেন, ‘আমার অফিস কিংবা আইপ্যাকের নাম করে পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলা হলে ৮১৪২৬৮১৪২৬ নম্বরে ভেরিফাই করে নেবেন। আমার অফিস থেকে কেউ গেলে আগাম বার্তা যাবে জেলা সভাপতির কাছে। না হলে তাঁকে এন্টারটেন করবেন না। বরং আমার অফিসে রিপোর্ট করবেন।’ ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশনের অভাবেই কংগ্রেস, এনসিপি, শিবসেনা নিজ গড়ে হারছে, এমনই দাবি অভিষেকের।

তথ্য তুলে তাঁর বক্তব্য, ‘দিল্লিতে প্রায় ৪ লক্ষ, মহারাষ্ট্রে চার মাসে প্রায় ৪০ লক্ষ ভুয়ো ভোটার যুক্ত করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে ৭৮টা বিধানসভায় ১৮ লক্ষ নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৮টায় বিজেপি জিতেছে! ভারতে প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জালিয়াতি ধরেছেন। বাংলা কিন্তু উত্তরপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্র নয়! বাংলায় বিজেপির পরিকল্পনা ২৫ লক্ষ ভোটারকে বাদ দিয়ে নতুন ২৫ লক্ষ ভোটারকে ঢোকানো। সতর্ক থাকুন।’ এদিন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন অভিষেক। সন্দেশখালি থেকে আরজি কর প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, ‘বাংলাকে বারংবার দেশের কাছে অপমানিত করার প্রয়াস চালিয়েছে বিজেপি। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’ বিরোধীদের অভিযোগ, ভুয়ো ভোটার বাংলায় প্রবেশ করিয়েছে তৃণমূল-ই। এই ইস্যুতে অভিষেকের বক্তব্য, ‘ভুয়ো ভোটার যদি তৃণমূল প্রবেশ করিয়ে থাকে বাংলায় তাহলে এর জন্য দায়ী বিএসএফ! এই অপরাধে বিএসএফের কমান্ডারকে আগে গ্রেপ্তার করা উচিৎ।’

উল্লেখ্য, এদিন নির্ধারিত সময়ের অন্তত ৩০ মিনিট আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় অনলাইন লিঙ্ক সংক্রান্ত প্রস্তুতি। ক্যামাক স্ট্রিট থেকে দলের নেতা, কর্মীদের উদ্দেশে টাস্ক দেওয়া শুরু করেন অভিষেক, সঙ্গে ব্যাখ্যাও। আড়াই ঘন্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কার্যত ‘রাফ-টাফ’ থাকেন অভিষেক।