রাজ্যসভায় তৃণমূলের কারা কারা প্রার্থী হতে পারেন, এই নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছেড়ে এখন সেটাই দেখার। তৃণমূলের হয়ে লােকসভা নির্বাচনে পরাজিতদের বেশ কয়েকজনকে রাজ্যসভায় পুনর্বাসন তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেন কিনা, সেদিকেও নজর থাকবে আমজনতার।
দীনেশ ত্রিবেদীকে হারতে হয়েছে লােকসভা নির্জনে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যােগ দেওয়া অর্জুন সিংয়ের কাছে। হুগলির রত্না দে নাগকে হারতে হয়েছে বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। ঠিক একইভাবে অর্পিতা ঘােষ কংগ্রেস ছেড়ে আসা মৌসম বেনজির নুরও লােকসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূলের টিকিটে। মৌসমের ক্যারিশ্মর উপর ভর করে মালদায় তৃণমূল জিতবে, এমনটাই ভেবেছিলেন অনেকে। যদিও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ছক কষছে বিজেপি। কলকাতা ও হাওড়া পুরভােটকে সামনে রেখে বিজেপি গােপনে তৃণমূলকে আটকানাের ছক কষছে। বিজেপি ভালাে ফল করতে পারবে না, বুঝতে পেরে নিজেদের নাক কেটে তৃণমূলের যাত্রাভঙ্গ করতে চাইছে।
এক্ষেত্রে তৃণমূলকে হারাতে অন্য কৌশল নিয়েছে বিজেপি। বিজেপ্রি প্রার্থী জিততে না পারুক, তৃণমূল-বিরােধী প্রার্থী যাতে জয়ী হতে পারে, তার জন্য ছক কষা শুরু হয়েছে। তবে জেলার পুরসভাগুলিতে বিজেপি নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করতে মরিয়া।
এদিকে বিজেপিও চাইছে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভােটে ভাগ বসাতে। সে কারণে ‘মিম’ রাজ্যের পুরসভা নির্বাচনগুলিতে প্রার্থী দিয়ে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভােট ব্যাঙ্কে আঘাত হানার জন্য ঘুটি সাজাচ্ছে বলে খবর। রাজ্যের শাসক দলের প্রতি সংখ্যালঘুদের সিংহভাগ সমর্থনকে কমিয়ে আনার জন্য এই কৌশল নিতে পারে ‘মিম’। আর এর মধ্যেই নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা দেখছে বিজেপি।
এমনই এক সময়ে দাঁড়িয়ে রাজ্যসভায় বাংলার পাঁচটি আসনে ভােট হতে চলেছে শাসক দলের হয়ে কারা কারা প্রার্থী হন, তা নিয়েও জল্পনা বাড়ছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার ২ সদস্যের রাজ্যসভায় যাওয়া নিয়ে জল্পনা কোনও অংশে কম নয়। এরকম কিছু ঘটলেও বিধানসভার উপনির্বাচনের মুখােমুখি হতে হবে তৃণমূলকে। ফলে এই কৌশল আদৌ তৃণমূল নেবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। ফলে রাজ্যসভায় নতুন মুখ ঢুকতে পারে এমনটাই মনে করা হচ্ছে। তবে, কে ডি সিং, যােগেন চৌধুরির প্রত্যাবর্তন রাজ্যসভায় হচ্ছেনা বলে খবর।
‘কলম’ পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ হাসান ইমরানও অনিশ্চিত। তাকে অন্য কাজে লাগাতে পারে তৃণমূল, এমনটাই খবর। স্বাভাবিকভাবে সংবাদমাধ্যমে এই খবর সামনে আসায় তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। ঘন ঘন ফোন যাচ্ছে কলম পত্রিকার অফিসে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ফোনে রীতিমতাে নাজেহাল এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক ও অন্যান্য কর্মচারী মুষড়ে পড়ছেন এই সাংসদের অনুগামীরা।
যদিও এই বিষয়ে আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছেন ‘কলম’ পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান। শুধু তিনি বলছেন, দিদি যা ভালাে বুঝবেন সেটাই করবেন। এদিকে ঘনিষ্ঠ মহলে কান পাতলে আরও শােনা যাচ্ছে আহমেদ হাসান ইমরান বলেছেন, অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে রাজ্যসভায় যাওয়ার সুযােগ তিনি পেয়েছিলেন। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। ঠিক শুনছি তাে? কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সেই সুযােগ দিলেন, তখন চোখে জল এসে গিয়েছিল।
তবে, বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে যে, তিনি আর রাজ্যসভায় যাওয়ার সুযােগ পাচ্ছেন না। স্বাভাবিকভাবে তিনি যে ব্যথিত, তা ঘনিষ্ঠমহলে আহমেদ হাসান ইমরান জানিয়েছে। অপ্রত্যাশিতভাবে সংবাদমাধ্যমে তিনি রাজ্যসভায় অনিশ্চিত এই খবরে তিনি ভারাক্রান্ত এমনটাই জানা গিয়েছে এই সাংসদের ঘনিষ্ঠ মহলে কান পাতলে।
আসলে রাজ্যসভায় যাওয়াটাও যেমন তাঁর হাতে ছিল না, ঠিক একইভাবে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল সুপ্রিমাে এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন, তার দিকে তাকিয়ে আহমেদ হাসান ইমরানের অনুগামীরা। ওমপ্রকাশ মিশ্র, আবুল বাসারের নামও ওঠে আসছে রাজ্যসভার সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায়।
‘কলম’ পত্রিকার কার্যালয়ে আগের মতাে সেই উচ্ছ্বাস নেই। সাংবাদিকদের মধ্যে ফিসফাস চলছে। স্যারের (আহমেদ হাসান ইমরান) মুড কেমন আছে বােঝার চেষ্টা করছে সবাই। সত্যি কি স্যার এবার আর রাজ্যসভায় যাচ্ছেন না? এ নিয়েও মৃদু স্বরে চলছে আলাপ-আলােচনা। সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই দেখা করতে যাচ্ছেন পত্রিকার কার্যালয়ে। বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে আহমেদ হাসান ইমরানের হাতে। শেষ পর্যন্ত সেই কর্মসূচিগুলিতে ইমরানের উপস্থিতি নিয়েও দোটানায় রয়েছেন উদ্যোক্তারা।
যত দূর জানা গিয়েছে, রাজ্যসভায় তাঁর বকেয়া কাজ কী কী রয়েছে তা দ্রুত শেষ কতে চাইছেন। তিনি তবে, অনেকে বলছেন, ‘ইমরান ভাই ঘাবড়াবেন না। দিদি ঠিক আপনাকে সুযােগ করে দেবেন’। আপাতত রাজ্যসভায় প্রার্থী তালিকা ঘােষণা না হওয়া পর্যন্ত আহমেদ হাসান ইমরানের ‘কলম’ পত্রিকার কার্যালয়ে স্নায়ুর চাপ যে কমবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কারণ, এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক ও অন্যান্য কর্মচারীও চান ফের রাজ্যসভায় যাক তাঁদের স্যার। এর ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন উপকৃত হবে, তেমনই প্রিন্ট মিডিয়ার এই কঠিন সময়ে বেশ খানিকটা সুবিধেজনক অবস্থায় থাকবে এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীরা।
এর আগে কুণাল ঘােষ, বিবেক গুপ্তা, সাংবাদিক সম্পাদক সৃঞ্জয় বসু এঁরা তিনজনেই তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। সময়ের স্রোতে এই তিনজনই বর্তমানে প্রাক্তন হয়ে গিয়েছেন রাজ্যসভায়। সম্পাদক তথা সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান শেষ পর্যন্ত সেই তালিকায় ঢুকে যান, নাকি তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটান তৃণমূল সুপ্রিমাে, সেদিকে তাকিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি বড়সড় অংশ।
এর আগে উর্দুভাষী মুসলমানরা ইখবার-এ মাসরিকের সম্পাদক নাদিমুল হককে পুনরায় রাজ্যসভায় পাঠানােতে তৃণমূল সুপ্রিয়াের উপর যারপরনাই খুশি। বাঙালি মুসলমানরা দিদির কাছে আহমেদ হাসান ইমরানের রাজ্যসভায় প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশায় দিন গুনছেন।